কান্নার বদলে এখন খুশিতে হাসছে অর্থি

  © সংগৃহীত

এক বছর আগে বগুড়া সদরের ঘোড়াধাপ হাট থেকে ৮৬ হাজার টাকায় শাহিওয়াল জাতের একটি বাছুর কিনে আনেন অর্থির বাবা আকরাম হোসেন। ধীরে ধীরে অর্থি হয়ে উঠল বাছুরটির খুব কাছের বন্ধু। অর্থি নিজেই খড়-পানি, ভাত-কুঁড়া খাওয়াতে শুরু করল। পড়াশোনার ফাঁকে বাছুরটির সব দেখা শোনা করতো সে। অর্থি বাছুরটির নাম দেয় নবাব।

এর অনেকদিন পর গত ২৪ জুলাই তার সেই নবাবকে ঈদের আগে বিক্রির জন্য তোলা হয় আবারও ঘোড়াধাপ কোরবানির হাটেই। বন্ধু নবাবকে বিক্রি করে দেওয়ার কথা শুনেই কান্নায় ভেঙে পড়ে অর্থি। বন্ধুকে হারানোর শোকে খাওয়া দাওয়া একবারে ছেড়েই দেয় অর্থি। নবাবকে হাটে তোলার সময় দাদা খবির উদ্দিন আকন্দের সঙ্গে অর্থিও পিছু নেয়।

হাটে নেওয়ার পর নবাবের দাম ওঠে এক লাখ ৪৭ হাজার টাকা। ক্রেতার হাতে গরুটিকে তুলে দেওয়ার সময় নবাবকে বিদায় জানাতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে অর্থি। দেশজুড়ে সাড়া পড়ে এমন ঘটনাটি। এর আগে ১ আগস্ট ঈদের দিন সারাক্ষণ নবাবের জন্য কান্নাকাটি করে সে।

এবারের কুরবানির ঈদে অর্থির পোষা গরু নিজের খেলার সঙ্গী নবাবকে হারিয়ে কেঁদেছেন জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে। নিজের খেলার সাথীকে হারিয়ে অশ্রুমাখা চোখে খুঁজেছেন তার প্রিয় সেই নবাবকে। নবারের সাথে কাটানো স্মৃতি মনে করেই মাঝে মাঝে অশ্রুসিক্ত হয়ে যায় তার সেই অর্থি। কিন্তু এবার সেই কান্নার বদলে খুশিতে হাসছে সে।

গত সোমবার (৩ আগস্ট) দুপুরে দাদা ও বাবার সঙ্গে নিজে হাটে গিয়ে বাছাই করেছিল আগের গরু নবাবের মতো দেখতে একটা ছোট্ট গরুকে। সেদিন সে বাসায় চলে আসলে বিকেলে সেই গরু তার বাড়িতে চলে এলো। অর্থির হাতে তুলে দেয়া হল গরুটি। খুশিতে আত্মহারায় অর্থি নতুন গরুটার নাম রেখেছে ‘ছোট নবাব’।

মা আইরিন সুলতানা বলেন, ‘অর্থি আমাদের একমাত্র সন্তান। নবাব ছিল ওর খেলার সঙ্গী, ভালো বন্ধু। সাংসারিক প্রয়োজনে গরুটি বিক্রি করে দিতে হয়েছিল। কিন্তু গরুটা বিক্রির পর বন্ধুকে হারানোর শোকে অর্থি এতটা ভেঙে পড়বে, তা কখনো ভাবিনি। ছোট নবাবকে পেয়ে মেয়েটা নিমেষেই বদলে গেছে। নতুন গরু পেয়ে খুব খুশি সে।’

এ ঘটনায় অর্থির চাচা নজরুল ইসলাম বলেন, ঘটনা সবার মধ্যে জানাজানি হলে, ঈদের দিনেও টেলিভিশনের সাংবাদিকেরা এসে অর্থির পরিবারের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। নানাজনে ফোন করে অর্থিকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন, গরু কিনে দিতে চেয়েছেন।

ঈদের দুই দিনের মাথায় গত সোমবার অর্থিকে পাঁচ মাস বয়সী লাল রঙের শাহিওয়াল জাতের একটি এঁড়ে বাছুর উপহার দেওয়া হয়েছে। মাহবুবুর রহমানের অনুদানে অর্থিকে নতুন এই গরু উপহার দেওয়া হয়। সোমবার দুপুরে বাবা আকরাম হোসেন ও দাদা খবির উদ্দিনের সঙ্গে হাটে গিয়ে অর্থি নিজেই গরুটি পছন্দ করে। গরু পছন্দ করলেও সে জানত না, সেই গরুই তাকে উপহার দেওয়া হবে।

অর্থিদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, নবাবের শোকে গালে হাত দিয়ে বিষণ্ন মনে পড়ার ঘরে বসে আছে অর্থি। ছলছল চোখ তার নবাবের ঘরের দিকে। যখন নতুন গরুটি অর্থির হাতে তুলে দেওয়া হয়, তখন চোখেমুখে তার খুশির উচ্ছ্বাস। গরু পেয়েই আদরযত্ন করতে লেগে গেল সে।

খুব কম সময়ের মধ্যেই হাট থেকে আনা গরুটির সঙ্গে ভাব জমে গেল মেয়েটির। দেখতে হুবহু নবাবের মতো চেহারা হওয়ায় সে গরুটির নাম দিয়েছে ছোট নবাব। দেখা যায় পুরনো নবারকে হারানোর পর এবার নতুন ‘ছোট নবাবকে’ পেয়ে গলায় জড়িয়ে ধরে রেখেছে অর্থি।


সর্বশেষ সংবাদ