এখনো পরিবহন শ্রমিক নেতাদের প্রাণনাশের হুমকি পান দিয়ার বাবা

  © ফাইল ফটো

বাস চাপায় নিহত শহীদ রমিজউদ্দীন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী দিয়া খানম ওরফে মীমের মৃত্যুর ঘটনায় বিচার চেয়ে বিপাকে আছেন বাসচালক বাবা জাহাঙ্গীর আলম। তিনি অভিযোগ করেছেন, মেয়ের বিচার চাওয়ায় তিনি এখনো পরিবহন শ্রমিক নেতাদের থেকে প্রাণনাশের হুমকি শিকার হচ্ছেন।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এখনো ঢাকা জেলা বাস মিনিবাস সড়ক পরিবহন ইউনিয়নের কিছু শ্রমিক তাঁকে রাস্তায় দেখা হলেই প্রাণনাশের হুমকি দেন। শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্যপদ থেকেও তাঁকে বাদ দেওয়ার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। শ্রমিকদের অনেকেই তাঁকে হুমকি দেন আমি নাকি খুব বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছি। এজন্য তারা আমাকে ছাড়বে না।

২০১৮ সালের ২৯ জুলাই দুপুরে জাবালে নূর পরিবহনের তিনটি বাসের চালক রেষারেষি করে গাড়ি চালাতে গিয়ে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের ওপর বাস তুলে দেন। এতে শহীদ রমিজউদ্দীন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আবদুল করিম ওরফে রাজীব (১৭) এবং বাসচালক জাহাঙ্গীরের মেয়ে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী দিয়া খানম ওরফে মীম (১৬) নিহত হন।

এ ঘটনার পর সারা দেশের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে দেশব্যাপী তুমুল আন্দোলন গড়ে তোলেন। ওই শিক্ষার্থীদের মেরে-ধরে, মামলা দিয়ে আন্দোলন দমানো হয়। দেশ কাঁপানো সেই আন্দোলনের মুখে সরকার ওই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ সংসদে পাস করে।

দিয়ার বাবা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অদক্ষ গাড়িচালকের খামখেয়ালিপনার কারণে আমার মেয়েটাসহ দুজন মারা গেল। তাদের বিচার চেয়েছিলাম। আমি ড্রাইভার হইয়া কেন তাদের বিচার চাইলাম। আমার জন্য দেশে নতুন আইন তৈরি হইছে। গাড়ির মালিক ও শ্রমিকদের সমস্যা হইছে। এখন ভুয়া ড্রাইভার ও জাল লাইসেন্স দিয়ে তারা গাড়ি চালাইতে পারে না। এসব কারণে পরিবহন শ্রমিকনেতারা আমার ওপর ক্ষুব্ধ।

এদিকে এ ঘটনায় করা মামলায় ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর জাবালে নূর পরিবহনের দুই বাসের চালক মাসুম বিল্লাহ, জুবায়ের সুমন এবং চালকের সহকারী কাজী আসাদকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। দুই চালক এখন কারাগারে। ঘটনার পর থেকে পলাতক হেলপার কাজী আসাদ।

বাসচাপায় নিহত অন্য শিক্ষার্থী আবদুল করিম রাজীবের মামা মফিজুর রহমান বলেন, ছোট থেকে মেধাবী ছিল রাজীব। ছোটবেলায় বাবার মৃত্যুর পর আত্মীয়-স্বজনের সহযোগিতায় লেখাপড়া করত। থাকত উত্তরার আশকোনায় আমার বাসায়। মায়ের স্বপ্ন ছিল, লেখাপড়া করে ছেলে অনেক বড় হবে। এখন তার মা ছেলের জন্য দিন-রাত চোখের পানি ফেলে আর দোয়া করে।

নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) চেয়ারম্যান অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন গণমাধ্যমকে বলেন, আমাকে পর্যন্ত নানাভাবে হুমকিধমকি ও মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছেন পরিবহন শ্রমিকনেতারা। আর জাহাঙ্গীর তো একজন সাধারণ শ্রমিক। যতক্ষণ পর্যন্ত আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন না হবে, ততক্ষণ এগুলো চলতেই থাকবে। এদের দমানো যাবে না। এরা পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি করছে। পদ ধরে রেখে সরকারের কাছ থেকে সুবিধা লুটছে।


সর্বশেষ সংবাদ