১৮ জুলাই ২০২০, ২০:৫৭

করোনা-কালে বাসা ছেড়ে স্কুলে শিক্ষক, বিক্রি করছেন ফল

  © সংগৃহীত

করোনা সংকটে সবচেয়ে বিপদে রয়েছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা। এই মহামারীতে অনেকেই আবার পেশা বদলও করছেন। তেমনি একজন রাজধানীর আদাবরের পপুলার ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রধান শিক্ষক আমিনা বেগম।

ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুজন কর্মচারীকে সঙ্গে নিয়ে আমিনা এখন রাস্তার ধারে শামিয়ানা খাটিয়ে টেবিল পেতে ফল বিক্রি করছেন। অন্যদিকে, বাসাভাড়া পরিশোধ করতে না পেরে নিজের কর্মস্থলেই সংসার শুরু করেছেন আমিনা। তিনি জানান, প্রায় চার মাস হলো স্কুল বন্ধ, শিক্ষার্থীদের বেতন আদায়ও বন্ধ। দোতলায় থাকতেন, খরচ কমানোর জন্য বাসা ছেড়ে দিয়ে স্বামী আর দুই মেয়েসহ স্কুলে উঠেছেন।

এদিকে, স্থানীয় মার্কেটের কাছে অস্থায়ী এই দোকানে আম ও লিচু বিক্রি করছেন তিনি। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, আম তো কিছুদিন পর শেষ হয়ে যাবে। তখন কী করব? কারও কাছে হাতও পাততে পারব না।

আমিনা থাকতেন স্কুলের দোতলায়। বাসা ও স্কুল মিলিয়ে মাসে ভাড়া দিতেন ৪৫ হাজার টাকা। স্কুলঘরে ঠাঁই নেওয়াতে ভাড়ায় ১২ হাজার টাকা বেঁচেছে। কিন্তু মার্চের পর স্কুলের ভাড়া দিতে পারেননি। গত জুন থেকে দুজন কর্মচারীসহ কয়েকজন মিলে রাজশাহী থেকে আম আনাচ্ছেন। ১৪-১৫ হাজার টাকা লাভ হয়েছে।

স্কুলে শিক্ষক আছেন ১২ জন। তাঁরা বেতনের সঙ্গে টিউশনির আয় জোড়াতালি দিয়ে চলতেন। এখন সবই বন্ধ। অনেকে ঢাকা ছেড়েছেন। আব্দুল্লাহ আল মামুন গেছেন কুষ্টিয়ায় গ্রামের বাড়িতে। মুঠোফোনে বললেন, সুদিনের আশা মিলিয়ে যাচ্ছে।

দেশে করোনা প্রকোপ শুরু হলে গত ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্ধ রয়েছে। সেই ইস্তক শিক্ষার্থীদের বেতনপত্র আদায় বন্ধ। উদ্যোক্তারা বলছেন, স্কুল খুললে অনেক ছেলেমেয়ে হয়তো ফিরবে না। বাড়িওয়ালারা ভাড়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। শিক্ষকদের মতো অনেক উদ্যোক্তাও গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন বা যাচ্ছেন। শিক্ষকেরাও চলে যাচ্ছেন, পেশা বদলাচ্ছেন।

আমিনার স্কুলটি নিম্নবিত্ত এলাকায়। শিক্ষার্থীদের বেতন কম। কিন্তু এখন সেটুকুও অভিভাবকেরা দিতে পারছেন না। উজান আহমেদ এই স্কুলের ২৩৫ জন শিক্ষার্থীর একজন। তাঁর গাড়িচালক বাবার বেতন করোনাকালে অর্ধেক হয়ে গেছে।

বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান এম ইকবাল বাহার চৌধুরী বলছেন, হবিগঞ্জের একজন শিক্ষক চা-কফি বিক্রি করছেন। দিনাজপুরের একজন শিক্ষক রাজমিস্ত্রির জোগালির কাজ করছেন। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের একজন শিক্ষক নৌকা চালাচ্ছেন।

তিনি বলেন, করোনার-কাল আরও বাড়লে অর্ধেকের বেশি কিন্ডারগার্টেন স্কুল বন্ধ হয়ে যাবে। তাঁরা তাই টিকে থাকার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে যেকোনো ধরনের আর্থিক সহায়তা চান।