মনে হচ্ছিল— ছেলেমেয়ের সঙ্গে এটাই শেষ দেখা! ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠে
টানা ২৪ দিন করোনায় আক্রান্ত ছিলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। আক্রান্ত হয়েছিলেন স্ত্রীও। সবশেষ ১৭ জুলাই সুখবর জানান নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক একাউন্টে। লিখেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, করোনা নেগেটিভ। আমার জন্য এটি বড় এক মুক্তি। অশেষ শুকরিয়া।
আক্রান্ত হওয়ার পরপরই দুই সন্তানকে নড়াইলে পাঠিয়ে দেন ম্যাশ। তার ভাষ্য, এ সময় শারীরিক যন্ত্রণার চেয়ে মানসিক কষ্টটাই ছিল বেশি। সাবেক অধিনায়কের ভাষ্য, মানসিকভাবে খুব এলোমেলো লেগেছে। আমার চেয়ে অবশ্য আমার স্ত্রীরই বেশি কষ্ট হয়েছে।
বাস্তবিক অর্থেই কেমন কেটেছে করোনা-কাল? গণমাধ্যমকে মাশরাফি জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের কারণে জীবনকে নতুন করে চিনেছি। মেয়েদের দূরে সরিয়ে রাখার অনুভূতিতে ম্যাশ বলেছেন, “এমনই এক রোগ যে, ওদেরকে একটু জড়িয়ে ধরা তো বহুদূর, কাছাকাছিও যেতে পারছি না। হুমায়রা দূর থেকে আমাকে বিদায় জানানোর সময় কেঁদেই ফেলল। আমি কীভাবে নিজেকে সামলালাম, জানি না। ওদের মা নিচ পর্যন্ত গেল গাড়ীতে তুলে দিতে। বিদায় দিয়ে এসে বলল, সাহেল প্রচুর কান্নাকাটি করেছে যাওয়ার সময়। ছোট্ট ছেলে, বাবা-মা দুজনকেই ছাড়া থাকেনি আগে।” হুট করেই আমার মনে হলো, এমনও তো হতে পারে যে ছেলেমেয়েদের সঙ্গে এটি আমার শেষ দেখা! ভেতরটায় কেমন মোচড় দিয়ে উঠল।
আমার বাসায় সারা বছর ১৮-২০ জন লোক থাকে। আরও অনেকে আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকেন। হই-হল্লায় থাকি আমরা। হুট করে সব বদলে গেল। বাসা অনেকটা ফাঁকা, কোনো হইচই নেই। প্রাণের ছোঁয়া নেই যেন। এই নিস্তব্ধতা অসহ্য লাগল। সবসময়ই লোকজন নিয়ে থাকতে পছন্দ করি আমি। এখন বাস্তবতার কাছে কতটা অসহায় আমরা!
মাশরাফি বলেন, রাতে ভালো ঘুম হয়নি। শারীরিক অস্বস্তি তো আছেই, সঙ্গে নানা দুর্ভাবনা। ভালো থাকার চেষ্টা করছি। বাসায় যারা আছে, তারাও আমাকে ভালো রাখার চেষ্টায় কমতি রাখছে না। তারপরও রাতের নির্জনতায় অনেক ভাবনা পেয়ে বসে। ঘুম এলো ফজরের নামাজ পড়ার পর। বলছি ২২ জুনের কথা।
রাতের ঘুম সব পেয়ে বসেছিল দিনে। ঘুমাচ্ছিলাম টানা। একটু উঠে খেয়ে টেয়ে আবার ঘুম। দুপুরে একটু ঘুম ভেঙে দেখি ফোনে অনেক মিসড কল, অসংখ্য ম্যাসেজ। জানতে পারলাম, সব জায়গায় নাকি খবর ছড়িয়ে পড়েছে, আমার অবস্থা খারাপ, হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে নাকি সিট পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ এসব তোলপাড় যখন চলছে, আমি তখন আরাম করে ঘুমাচ্ছি!
বাধ্য হয়ে ফেইসবুকে সবাইকে জানাতে হলো যে এসব খবর ভিত্তিহীন, আমি ভালো আছি। ওইদিন সন্ধ্যায় হাসপাতালে গেলাম বটে, তবে স্রেফ এক্স-রে করাতে। যেহেতু আমার অ্যাজমার সমস্যা পুরনো, ডাক্তারের পরামর্শে একটু চেক-আপ করালাম। সেই রিপোর্টও ভালোই এলো।
দুঃখজনকভাবে, অসুস্থতার মধ্যেও এই যন্ত্রণা পরে পোহাতে হলো কয়েক দফায়। কয়েকটি মিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হওয়ার পর সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে আমি নেগেটিভ হয়ে গেছি। অথচ পরীক্ষাই করাইনি। আবার ফেইসবুকে সত্যিটা জানাতে হলো। কিছুদিন পর একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। যথারীতি ফেইসবুকে জানাতে বাধ্য হলাম। লোকের হয়তো আগ্রহ ছিল আমার অবস্থা জানার। কিন্তু দুই দিন পরপর নিশ্চিত না হয়ে মিডিয়া এ ধরনের খবর প্রকাশ করায় মানুষ যেমন বিভ্রান্ত হয়েছে, আমার পরিবারকেও ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।
প্রসঙ্গত, করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই দুস্থ-অসহায়দের বিভিন্নভাবে সাহায্য করে আসছেন মাশরাফি। শুরুর দিকে নড়াইলে মাঠে থেকে কাজ করেছেন নড়াইল-২ আসনের এই সংসদ সদস্য। সরকারি অনুদানের পাশাপাশি ব্যক্তিগত অর্থায়নে করোনা মোকাবিলায় কাজ করে আসছেন অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার।