সন্ধ্যা নামতেই অন্ধকারে নিমজ্জিত বৃহত্তর মাঝিরকাটা
মুজিব জন্মশতবর্ষেই দেশের প্রত্যেকটি ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গিকার করেছে বাংলাদেশ সরকার। ইতোমধ্যে অনেক গ্রামে বিদ্যুতের আলো পৌঁছালেও আলোর মুখ দেখেনি বৃহত্তর মাঝিরকাটা। সন্ধ্যা নামতেই যেনো এক আঁধারে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে পুরো গ্রাম।
‘প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ স্লোগানটির এখনো বাস্তবায়ন হলোনা কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের মাঝিরকাটা গ্রামে।
বৃহত্তর মাঝিরকাটায় প্রায় ৫০০ ঘরবাড়ি রয়েছে। এছাড়াও শতাধিক দোকানপাট, ১০টির বেশি মসজিদ, কয়েকটি স্কুল এবং হাফেজখানা রয়েছে।
আলী মদন জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি ফারুক আহমেদ বলেন, আমরা বিদ্যুতের অভাবে খুব কষ্টে আছি। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে পাঁঁচবার জেনারেটর চালাতেও তেল খরচ হয় মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার। বিদ্যুত হলে এই ব্যয় অনেকাংশে কমে আসবেন বলে মনে করেন তিনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, একাধিক দোকানদার বিদ্যুতের অভাবে তাদের খাবার এবং খাবার তৈরির বিভিন্ন উপকরণ নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়াও ফার্মেসীতে ফ্রিজের অভাবে অনেক জরুরী ঔষধ পাওয়া যায়না। যার ধরুন জরুরী প্রয়োজনে দূরবর্তী বাজারে যেতে হয় এলাকাবাসীদের।
তবে বিদ্যুতের আলো না পেলেও শত বছরের মাটির রাস্তা পিচ হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা মোটামুটি ভালো হয়েছে বলে উচ্ছাস প্রকাশ করেছেন গ্রামবাসী। তারা জানান, কয়েক বছর ধরে পাকা রাস্তা হওয়ার পর থেকে বদলে গেছে এখানকার মানুষের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য। তারপরেও বিদ্যুৎয়ের অভাবে আধুনিকায়ন থেকে পিছিয়ে পড়েছে এলাকাবাসী।
অন্যদিকে, শিক্ষার আলো জ্বললেও বিদ্যুতের আলোর মুখ না দেখায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন বৃহত্তর মাঝিরকাটার শিক্ষিত যুবসমাজ। এই গ্রাম থেকে সরকারি চাকরিজীবি থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন স্তরে চাকরি করছে অসংখ্য শিক্ষিত মানুষ। গর্জনিয়া ইউনিয়নের মধ্যে প্রথম অধ্যাপক, প্রথম ব্যাংক ম্যানেজার, প্রথম কামিল পাস, প্রথম স্নাতক পাস, প্রথম মাদরাসা বোর্ডে মেধা তালিকায় যারা কৃতিত্ব রেখেছেন তারা সবাই বৃহত্তর মাঝিরকাটার সন্তান।
এছাড়াও এই এলাকা থেকে দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন কলেজে পড়াশোনা করছে অসংখ্য শিক্ষার্থী। শুভাকাঙ্খী এবং মাতাপিতার তাদের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার আগ্রহও বেড়েছে অনেকগুনে। কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবে পিছিয়ে পড়ছে আর্থসামাজিক উন্নয়ন।
স্থানীয়রা বাসিন্দারা জানিয়েছেন, আশেপাশের সব গ্রামে বিদ্যুৎ এসেছে। এমনকি পিছিয়ে পড়া গ্রামেও বিদ্যুৎ এসেছে। পাড়াগুলোর আশেপাশে থাকা বিস্তীর্ণ সমতল ও দ্বিতীয় শ্রেণির জমি পর্যাপ্ত সেচ সুবিধা না পাওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে চাষাবাদের কাজে মারাত্মক বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। বেশিরভাগ জমিই অনাবাদী থাকে শুষ্ক মৌসুমে। এসব পরিবার কৃষিপণ্য উৎপাদনের ওপরই পুরোপুরি নির্ভরশীল।
তারা জানান, যেকোন ধরনের ট্যাকনিক্যাল কাজের প্রয়োজন পড়লে দূরবর্তী বাজারে ছুটে যেতে হয়। বর্ষায় সৌরবিদ্যুৎ কাজ করেনা বলে সন্ধ্যা নামতেই অন্ধকারে চেরাগ জ্বালাতে হয় ঘরে ঘরে। শিশুদের মানসিক বিকাশে টিভিতে বিভিন্ন সামাজিক প্রোগ্রামের আয়োজন দেখা থেকেও বঞ্চিত এখানকার শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তরের খবরাখবর সহজে পাচ্ছেননা গ্রামবাসী।
পাড়ার বাসিন্দারা বলছেন, তারা আর পিছিয়ে থাকতে চায় না। বিদ্যুতের সুবিধা পেলে আর্থিকভাবে আরও স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে বলে তারা মনে করেন।