১৯ জুন ২০২০, ১৭:৩৭

স্বপ্ন ভাঙ্গার কষ্ট নিয়ে রাতের আঁধারে ঢাকা ছাড়ছে ওরা

  © সংগৃহীত

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সীমিত পরিসরে অফিস-আদালত খোলায় দিনের রাজধানী ঢাকায় মোটামুটি ব্যস্ততা দেখা গেলেও রাতের রাজধানীর চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। স্বপ্ন ভাঙ্গার কষ্ট বুকে চেপে রাতের আঁধারেই রাজধানী ছাড়ছেন অনেকে। করোনার কারণে নিম্নআয়ের মানুষগুলোর কোন কাজ না থাকায় এখন শহর ছেড়ে ফেলে আসা গ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছেন তারা।

আজ শুক্রবার দেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকার পাগলা মাঝার গলিতে দীর্ঘ ৫০ বছর কাটানো মোহাম্মদ আলাল শরীফ তার পরিবার নিয়ে গ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্র করেছেন।

জীবনের এতোগুলো বছর এ জায়গায় কাটানোর পর আজ ছেড়ে যাওয়া মুহূর্তটা তাই বিষণ্ণতায় ভরা। আলাল শরীফ বলেন, খারাপ লাগছে, কিছুই করার নাই। পেটে ভাত না থাকলে কিভাবে বাঁচবো? এ জায়গার বাড়িওয়ালা আমার কাছে দুই মাসের ভাড়া পাওনা ছিল। মাপ চেয়ে কিছু কমিয়ে নিয়ে ভাড়া পরিশোধ করে গ্রামের বাড়ি চলে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, ‘এখানে ৫০ বছর থেকেও শহরটা আমার নিজের হলো না। তাই আজ ছেড়ে যাওয়া মুহূর্তটা খুব কষ্ট দিচ্ছে’।

মহামারি করোনাভাইরাসের প্রভাব মানুষের স্বাভাবিক জীবন-জীবিকা থেকে শুরু করে সবকিছুকে প্রভাবিত করেছে। বিশেষ করে করোনার ভয়াল থাভায় পড়েছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের সাধারণ মানুষগুলো। কেউ চাকরি হারিয়েছেন, কেউ বেতন পাচ্ছেন অর্ধেকেরও কম। তাই বাধ্য হয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ জেনেও গ্রামে ছুটে যাচ্ছেন তারা।

ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়ি চলে যাচ্ছেন এমন আরেকজন জানান, এভাবে চলে যাওয়ায় বাড়িতে সবাই কান্নাকাটি করতেছে। আমার মেয়ে এবারের এসএসসি পরিক্ষার্থী ছিল, সে ভালো রেজাল্ট করেছে। তার জন্ম ঢাকাতেই, তাই তার ইচ্ছে ছিল এখানেই বড় হয়ে প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু আমি বাবা হয়ে এখানে আর থাকতে পারছি না।

আরেকজন জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের কারণে কোন কাজকর্ম নেই। খাই না খাই সেটা পরে, এখানে থাকলে মাস শেষ হলেই ঘর বাড়া পরিশোধ করতে হয়। দেখা যায় যে, গ্রামে চলে গেলে এ ঘর বাড়ার টাকা দিয়ে মোটামুটিভাবে সেখানে চলতে পারবো।

এদিকে ঠিকমতো বাসা ভাড়ার টাকা পরিশোধ করতে না পারায় বাসা ছেড়ে দেওয়ায় প্রভাব পড়েছে ভাড়ার টাকায় চলা বাড়িওয়ালাদের উপরেও। বাসা খালি পড়ে থাকায় পথে পথে বাসা ভাড়ার বিজ্ঞাপন থাকলেও বাসা ভাড়া নেওয়া মতো লোক পাচ্ছেন না বাড়ির মালিকরা।

কলাবাগান এলাকার আবদুল কাদের নামে এক বাড়িওয়ালা জানান, বাড়াটিয়ারা এখন আসে না। তাদের অনেকে ঠিকমতো ভাড়া পরিশোধ করতে না পারায় গ্রামে চলে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় আমরাও সংকটে পড়েছি।