লকডাউন হবে রাজধানীর যে ৪৯ এলাকা
দেশে মহামারি করোনা সংক্রমণ থেকে রুখতে গত ১৪ দিনের মধ্যে ঢাকা শহরের কোনো এলাকায় যদি ৬০ জনের করোনা শনাক্ত হয় তবে তা রেড জোন হিসেবে লকডাউন করা হবে। এদিকে রাজধানীর বাইরে কোনো জেলায় ১০ জন নিশ্চিত রোগী থাকলে রেড জোনে পরিণত হবে এলাকাটি। এসব বিষয় বিবেচনায় এরই মধ্যে পুরো দেশকে তিনটি জোনের (লাল, হলুদ, সবুজ) আওতায় নিয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চূড়ান্ত করেছে সরকার।
এর আগে ৯ জুন ‘বাংলাদেশ রিস্ক জোন বেজড কোভিড-১৯ কন্টিমিনেট ইমপ্লেমেন্টশন স্ট্রাটেজি/গাইড’ শীর্ষক এ নির্দেশনা চূড়ান্ত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দেশ এরই মধ্যে মহামারির চতুর্থ পর্যায়ে রয়েছে। এ গাইড বা নির্দেশনা অনুসারে অবিলম্বে সারা দেশে কার্যকর হবে বলে নিশ্চিত করেছেন অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ।
রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইডিসিআর) তথ্যমতে, রাজধানীর ৪৯টি এলাকায় ৬০ জনের বেশি নিশ্চিত করোনা রোগী রয়েছেন। সেই হিসাবে এসব এলাকা শিগগির লকডাউন হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এসব এলাকা হচ্ছে- আদাবর, আগারগাঁও, আজিমপুর, বাবুবাজার, বাড্ডা, বনশ্রী, বনানী, বংশাল, বাসাবো, বসুন্ধরা, চকবাজার, ডেমরা, ধানমণ্ডি, ইস্কাটন, ফার্মগেট, গেণ্ডারিয়া, গ্রিনরোড, গুলশান, হাজারীবাগ, যাত্রাবাড়ী, জুরাইন, কল্যাণপুর, কলাবাগান, কাকরাইল, কামরাঙ্গীরচর, খিলগাঁও, লালবাগ, লালমাটিয়া, মালিবাগ, মিরপুর, মিরপুর-১, মিরপুর-১২, মগবাজার, মহাখালী, মোহাম্মদপুর, মতিঝিল, মুগদা, পল্টন, রাজারবাগ, রামপুরা, রমনা, শাজাহানপুর, শাহবাগ, শ্যামলী, শান্তিনগর, শেরেবাংলা নগর, তেজগাঁও, উত্তরা, ওয়ারী।
গাইডলাইনে বলা হয়েছে, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে গত ১৪ দিনের মধ্যে প্রতি লাখে ৬০ জন বা তার বেশি লোক সংক্রমণের শিকার হন তবে ওই এলাকা রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত হবে। তবে অন্য জেলার ক্ষেত্রে প্রতি লাখে ১০ জন নিশ্চিত ভাবে শনাক্ত হলেই সেটি রেড জোন বলে বিবেচিত হবে।
এদিকে রাজধানীতে বিগত ১৪ দিনে কোনো এলাকায় ৩ থেকে ৫৯ জন নিশ্চিত করোনা রোগী থাকলে সেটি হবে ইয়েলো জোন। তবে ঢাকার বাইরের জন্য প্রতি লাখে ৩ থেকে ৯ জন রোগী থাকলেই সেটি ইয়েলো জোন বলে বিবেচিত হবে। একইভাবে কোনো এলাকায় ১৪ দিনের মধ্যে নিশ্চিত রোগী যদি ৩ জনের কম অথবা কোনো রোগী না থাকলে সেটি হবে গ্রিন জোন।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, শহরের কোনো এলাকায় রেড জোন ঘোষণা হলে সেখান থেকে কেউ বাইরে যেতে পারবেন না। সব কাজ (ফ্যাক্টরি, অফিস) ঘরে বসেই করতে হবে। তবে গ্রাম এলাকায় কৃষি কাজ করতে বাধা নেই। অসুস্থ হলেই শুধু হাসপাতালে যাওয়ার অনুমতি রয়েছে।
জরুরি প্রয়োজনীয় দ্রব্য কেনার ব্যবস্থা থাকবে তবে সাইকেলসহ কোনো ধরনের যানবাহন ব্যবহার করা সম্পূর্ণ নিষেধ। এমনকি নৌ, রেল বা সড়ক যোগাযোগও বন্ধ থাকবে। শহরাঞ্চলে মুদি ও ওষুধের হোম ডেলিভারি দেয়ার ব্যবস্থা থাকবে। গ্রামে নির্দিষ্ট সময় ধরে দোকান খোলা থাকবে। গ্রামে কাঁচাবাজার খোলা থাকলেও শহরে সেটি থাকবে না।
বাংলাদেশের প্রায় সব জেলাতেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লেও ঢাকা শহরে এ হার সবচেয়ে বেশি। উচ্চ সংক্রমণ রয়েছে এমন জেলাগুলোর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ ও নরসিংদী অন্যতম।
এ পরিস্থিতিতে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ (লাল), অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হলুদ এবং ঝুঁকিপূর্ণ নয় এমন এলাকাগুলোকে সবুজ হিসেবে চিহ্নিত করে এলাকাভিত্তিক লকডাউনের দিকে যেতে হচ্ছে।
এর প্রেক্ষিতে ১০ জুন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক এক আদেশ জারি করেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদফতর সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন-২০১৮ (২০১৮ সালের ৬১নং আইন)-এর সংশ্লিষ্ট ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতা বলে সরকারের অনুমোদ ক্রমে দেশের বিভিন্ন এলাকায় কোভিড-১৯ রোগের সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে নিযুক্ত নির্দেশাবলী জারি করা হল-
১. কোভিড-১৯ রোগের ঝুঁকি বিবেচনায় দেশের যে কোনো ছোট বা বড় এলাকাকে লাল, হলুদ বা সবুজ জোন হিসেবে চিহ্নিত করা যাবে। জোন ব্যবস্থাপনা ‘বাংলাদেশ রিস্ক জোন বেজড কোভিড-১৯ কন্টিমিনেট ইমপ্লেমেন্টশন স্ট্রাটেজি/গাইড’ অনুসরণ করে বাস্তবায়ন করতে হবে।
২. প্রাথমিক ভাবে অবিলম্বে তিনটি জেলায় (গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী) এবং ঢাকা উত্তর সিটির রাজাবাজার এবং দক্ষিণ সিটির ওয়ারীতে পরীক্ষামূলকভাবে জোনিং সিস্টেম বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু হবে। জোন সুনির্দিষ্টভাবে সংশ্লিষ্ট এলাকার কোন অংশে কার্যকর হবে এবং এর পরিধি কি হবে তা প্রয়োজন অনুসারে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করবে।
৩. উপরোক্ত গাইড বা নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্য অধিদফতর একটি কেন্দ্রীয় কারিগরি গ্রুপ গঠন করবে। পরে গাইড সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিহিত করা হবে। সব সময় হালনাগাদ গাইড অনুসরণ করে জোনিং সিস্টেম বাস্তবায়ন করতে হবে।
৪. আইনের ৩০ ধারা অনুসারে সংশ্লিষ্ট জেলার সিভিল সার্জনের কাছে জোনিং ঘোষণার ক্ষমতা অর্পণ করা হল। তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সিভিল প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা ও সশস্ত্র বাহিনী এবং স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় জোনিং কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবেন।
৫. বিদ্যমান বা নতুন এলাকায় জোনিং সিসটেম প্রস্তাব বা পরিবর্তনের জন্য প্রতিটি সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভায় জেলা ও উপজেলায় স্থানীয় কমিটি থাকবে। বিদ্যমান কোভিড-১৯ প্রতিরোধ সংক্রান্ত কমিটিগুলো এ দায়িত্ব পালন করবে। কমিটি জোনিং সিস্টেমের হালনাগাদ সংজ্ঞা ও বাস্তবায়ন কৌশল অনুসারে অব্যাহত ভাবে স্থানীয় পরিস্থিতি পর্যালোচনা করবে এবং জোনিং সিস্টেম চালু করতে হলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মতামত চাইবে। স্বাস্থ্য অধিদফতর কেন্দ্রীয় কারিগরি গ্রুপের মতামত সাপেক্ষে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে।
৬. বাস্তবায়নাধীন জোন এলাকায় কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চলাচল/ ছুটি/ দায়িত্ব পালন বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/ অধিদফতর/পরিদফতর/ প্রতিষ্ঠান নির্দেশনা জারি করবে।