আম্ফানের তাণ্ডবে পশ্চিমবঙ্গে ১২, বাংলাদেশে ৫ জনের মৃত্যু
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নারকীয় তাণ্ডব চালিয়েছে সাইক্লোন আম্ফান। এ পর্যন্ত ১২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। কলকাতা একেবারে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেছেন, গোটা ধ্বংসের চিত্র বুঝতে ১০ থেকে ১২ দিন লেগে যাবে। এক দিনে এই ক্ষয়ক্ষতি পরিমাপ করা সম্ভব নয়।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তাণ্ডবে দেশে ৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এরমধ্যে দু’জন করে পটুয়াখালীর ও ভোলার এবং একজন সন্দীপের। আম্ফানের প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হচ্ছে।
আনন্দবাজার পত্রিকা বলছে, আম্ফানের তাণ্ডবে রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে অন্তত ১০ থেকে ১২ জনের প্রাণহানি ঘটেছে বলে জানিয়েছেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। আজ বুধবার সন্ধ্যার দিকে আম্ফানের তাণ্ডবের মাঝেই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মমতা। এ সময় তিনি বলেন, আমরা ধ্বংসস্তুপের ওপর দাঁড়িয়ে আছি। তিনি বলেন, একটা ডিজাস্টার হয়েছে, আমরা শকড। আমরা খুবই স্তম্ভিত, খুব খারাপ লাগছে।
তিনি বলেন, আমরা এই দুর্যোগ থেকে অবশ্যই ঘুরে দাঁড়াবো। আপনাদের সহায়তায় আমরা এই সঙ্কট কাটিয়ে উঠবো। দক্ষিণ ও উত্তর ২৪ পরগনা ৯৯ শতাংশ ধ্বংস হয়েছে। আমাদের অফিসের অর্ধেক ভেঙে গেছে। কয়েক হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে গেল, লাখও ছাড়াতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ১০ থেকে ১২ জনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। ধ্বংসের পুরো চিত্র বুঝতে ১০-১২ দিন লেগে যাবে।
মমতা বলেন, ‘এলাকার পর এলাকা ধ্বংস হয়েছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের সাহায্যে ৫ লাখ মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিতে সক্ষম হয়েছিলাম। একটা যুদ্ধকালীন কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করলাম। মাঝরাত অবধি হয়ত ঝঞ্ঝা চলবে।
এদিকে, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে তীব্র ঝড়ের কারণে বিদ্যুৎ-টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সাতক্ষীরা, খুলনা, পটুয়াখালি, পিরোজপুর, বরিশালসহ পুরো অঞ্চলে তীব্র ঝড় হয়েছে। পুরো অঞ্চলে লাকো বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে টেলিফোন এবং ইন্টারনেট সংযোগও।
জানা গেছে, সাতক্ষীরা, মোংলা, হাতিয়ার চরাঞ্চলে আট থেকে ১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে। বাগেরহাটের শরণখোলায় বাঁধ ভেঙে গেছে। সাতক্ষীরার শ্যামনগরের উপকূলীয় এলাকায় বালুর বস্তা ফেলে বেড়িবাঁধ রক্ষার চেষ্টা করা হয়েছে।
পটুয়াখালীর নিম্নাঞ্চলের অনেক গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। সেখানকার কলাপাড়া উপজেলার ধানখালিতে সাইক্লোন শেল্টারে মানুষেখ আনার সময় নৌকা ডুবে মারা গেছেন সিপিপির টিম লিডার শাহ আলম। সেখানকার আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার সময় গাছ পড়ে এক শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
ভোলায় ট্রলারডুবে একজন এবং গাছ পড়ে অপর একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে জেলায় দমকা হাওয়া বইছে। জোয়ারের পানিতে অন্ত ২০টি চর প্লাবিত হওয়ায় ২৫ হাজার মানুষ ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মহসিন জানিয়েছেন, সাতক্ষীরার শ্যামনগরে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সেখানে বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। সাগরেরর পানি ঢুকেছে অনেক এলাকায়।
আর পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক আবু আলী মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন জানিয়েছেন, মঠবাড়িয়ায় দেয়াল চাপা পড়ে একজন মারা গেছে।