আবারও বুক চিতিয়ে লড়বে সুন্দরবন

সুন্দরবন কতবার যে ঘূর্ণিঝড়, ঝড়, প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করেছে, তার কোনো হিসাব নেই। গত বছর দুটি বড় ঘূর্ণিঝড় ‘ফনী’ ও ‘বুলবুল’ আছড়ে পড়েছিল বাংলাদেশের উপকূলে। দুবারই ঘূর্ণাবর্তের দাপট রুখে দিয়েছিল বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময় সুন্দরবন। অত্যন্ত শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ থেকে বাংলা ভূখণ্ডকে (বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ) রক্ষায় এবারও বুক পেতে দিচ্ছে সুন্দরবন।

সুপার সাইকোন ‘আম্ফান’র বিরুদ্ধে এবারও একাই লড়বে সুন্দরবন। সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে সুন্দরবনকে বিবেচনা করা হয়। দশ হাজার বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার রয়েছে বাংলাদেশে। ভারতের মধ্যে রয়েছে বাকি অংশ। বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে আসা যেকোনো মাত্রার প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় এই বনভূমি বুক পেতে দিয়ে দেশকে রক্ষার চেষ্টা করেছে।

আম্ফান’র গতিপথ বলছে, এবারও সুন্দরবনই পদাতিক সৈন্যের মতো প্রাথমিক ধাক্কা সামলে দিয়ে ঝড়টিকে দুর্বল করে দিতে পারে। সেক্ষেত্রে স্থলভাগে ঝড়টি দাপট কমাতে বাধ্য হবে।

আম্ফানের বিষয়ে গত সোমবার (১৮ মে) আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেছেন, ‘আম্ফানের কেন্দ্র যদি সুন্দরবন হয়, তাহলে তো ওই স্পিডে (১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার) কম ক্ষতি হবে। কেন্দ্র যদি পটুয়াখালী (বা অন্য স্থলভাগ) হয়, তাহলে অনেক ক্ষতি হবে।’

এদিকে আজ বুধবার (২০ মে) ভোর ৬টা পর্যন্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর বলেছে, আম্ফান উত্তর উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আজ বিকেল/সন্ধ্যার মধ্যে সুন্দরবনের নিকট দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৮৫ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।

উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এবং পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ উত্তর উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আজ সকাল ৬টায় (২০ মে) চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।

মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

The Daily Campus এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন