ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’, এগোচ্ছে হাতিয়া দ্বীপ অভিমুখে
দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে চলেছে। থাইল্যান্ড এর নাম দিয়েছে আম্ফান। আগামী সোমবার অতি ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিতে পারে আম্ফান। সেই সঙ্গে বাঁক নিয়ে আছড়ে পড়তে পারে পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ এবং বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলার হাতিয়া দ্বীপে।
আম্ফানের গতিবিধি নিয়ে ভারতীয় আলিপুর আবহাওয়া কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকা এমনটাই জানিয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, গত বছরের নভেম্বরে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের গতিপথ অনুসরণ করে বাংলাদেশের ওপরও আছড়ে পড়তে পারে নতুন এই ঘূর্ণিঝড়।
ভারতীয় আবহাওয়াবিদরা জানান, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের উপর থাকা ঘূর্ণিঝড় আম্ফান এখন ভয়ঙ্কর চেহারা নিয়েছে। তার জেরে ইতিমধ্যে উড়িষ্যা এবং পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। তাঁদের আশঙ্কা, সোমবারের মধ্যেই আমপান আরও শক্তি সঞ্চয় করে অতি ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ের চেহারা নেবে।
এই মুহূর্তে উড়িষ্যা পারাদ্বীপ থেকে ৯৯০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে ঘূর্ণিঝড়টি। দিঘা থেকে তার দূরত্ব এক হাজার ১৪০ কিলোমিটার। অন্যদিকে, বাংলাদেশের খেপুপাড়া থেকে এক হাজার ২৬০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে আম্ফান।
আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের মতে, সোমবার আম্ফান উত্তর-পূর্ব দিকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসতে শুরু করবে। বুধবার দুপুরে ঘূর্ণিঝড়টি সাগরদ্বীপ এবং বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলার হাতিয়া দ্বীপের কাছে আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে আম্ফান ঠিক কোথায় আছড়ে পড়বে তা আগামী ২৪ ঘণ্টাতেই স্পষ্ট হয়ে যাবে। কারণ ওই সময়ের মধ্যেই মধ্যে ঝড়টি নিজের গতিপথ বদলাতে পারে। তাঁদের মতে, আম্ফানের লক্ষ্য বাংলাদেশের হাতিয়াদ্বীপ হলেও সুন্দরবন অঞ্চলে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
ইতিমধ্যেই হাতিয়া দ্বীপ এবং সুন্দরবন এলাকায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে পুলিশ প্রশাসন। একইসঙ্গে দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সমুদ্রের বুক থেকে এখন জলীয় বাস্প সঞ্চয় করছে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। তা ঘুরতে ঘুরতে এগিয়ে আসছে স্থলভাগের দিকে।
আবহাওয়াবিদরা মনে করছেন, আজ রবিবার ওই ঝড়ের ঘূর্ণনের গতিবেগ ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে। কিন্তু সোমবার থেকে তা বাড়তে শুরু করবে। ওইদিন তার গতিবেগ ১৩৫ থেকে ১৪৫ কিলোমিটার হতে পারে।
মঙ্গলবার সেই গতিবেগ হতে পারে ১৭০ থেকে ১৮০ কিলোমিটার। আগামী বুধবার আম্ফান স্থলভাগে প্রবেশ করলে তার গতিবেগ হতে পারে ১৬০ থেকে ১৭০ কিলোমিটার।
উল্লেখ্য, ২০০০ সালে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার সভায় আরব সাগর এবং বঙ্গোপসাগরের সাইক্লোনের নামকরণ নিয়ে একটি ঐকমত্য হয়। সদস্য দেশগুলোর দাবির মুখে ২০০৪ সাল থেকে এ অঞ্চলের ঝড়ের নাম দেওয়া শুরু হয়।
এক্ষেত্রে পূর্ব নির্ধারিত একটি নামের তালিকা থেকে একেকটি ঝড়ের নাম দেওয়া হয়। কোনও ঝড়ের গতিবেগ যদি ঘণ্টায় ৩৯ মাইল হয়, তাহলে তাকে একটি নাম দেওয়া হয়। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের আবহাওয়া অফিসগুলো এই নামকরণের দায়িত্ব পালন করে থাকে।
ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয়ার কারণও বেশ সহজ। এগুলোর এমন নাম দেওয়া হয় যেন বিজ্ঞানী থেকে সাধারণ মানুষ সহজে মনে রাখতে পারে। এবারের ঝড়টির নাম থাইল্যান্ডের দেওয়া।