আমাগো মা পুতের বাঁচার আর কুনু রাস্তা নাই স্যার
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৭ মে ২০২০, ০১:৪৮ PM , আপডেট: ০৭ মে ২০২০, ০১:৪৮ PM
'আমার সোয়ামিরে মাইরা লাওয়নের পর আমরা অহন হুব (খুব) কষ্টে আছি। এক ব্যাডা গতকাইল বাড়িতে আইসা আমাগোরে কিছু চাইল ডাইল সেমাই দিয়া গেছে। অহন আমাগো মা-পুতের বাঁচার আর কুনু রাস্তা নাই। আমরা কি কুনু ত্রাণ পাইতাম না স্যার?'- ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার থানাকান্দির হাজির হাটিতে সম্প্রতি বর্বর হামলায় (পা কেটে) নিহত রিকশাচালক মোবারকের অসহায় স্ত্রী সাফিয়া খাতুন (২৪) আজ সকালে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন।
কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সহসম্পাদক, নবীনগরের সন্তান আলামীনুল হক বুধবার প্রত্যন্ত ওই গ্রামে গিয়ে নিহত মোবারকের অসহায় পরিবারটির খোঁজখবর নেন ও মোবারকের স্ত্রী-পুত্রের হাতে বেশ কিছু খাদ্যসামগ্রী তুলে দেন।
নিহত মোবারকের স্ত্রী জানান, তার স্বামী রিকশাচালক মোবারক মিয়া গত প্রায় এক মাস আগে গ্রামে দুই পক্ষের মারামারি চলাকালে এক পক্ষের সশস্ত্র লোকজনের হামলায় নিহত হন। হামলাকারীরা মোবারকের দেহ থেকে পা বিচ্ছিন্ন করে গ্রামে আনন্দ মিছিল করে। ঘটনার চারদিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোবারক মারা যায়। এরপর চরম অভাব অনটনের মধ্যে দরিদ্র মোবারকের স্ত্রী তার দশ বছর বয়সী একমাত্র ছেলেকে নিয়ে দিনাতিপাত করলেও, সরকারি কিংবা বেসরকারি পর্যায়ে এখন পর্যন্ত কোনো ত্রাণ সহায়তা পাননি।
অসহায় সাফিয়া খাতুন বলেন, আমার সোয়ামির বড় ভাই চান মিয়া ভাইজানের ঘরে আমরা অহন থাহি (থাকি) ও খাই। কিন্তু এইভাবে আর কতদিন চলুম? হুনি, সরকার নাকি অহন বহুত ত্রাণ দিতাছে। কই, আমরাতো অহন পর্যন্ত কিছুই পাইলাম না।
নবীনগরের ইউএনও মোহাম্মদ মাসুম বলেন, ঘটনার পরপরই আমি নিজে গিয়ে নিহতের স্ত্রীর হাতে নগদ ১০ হাজার টাকা দিয়ে এসেছিলাম। হয়তো সাফিয়া সেটি ভুলে গেছেন। তবে এই দুঃসময়ে ত্রাণ না পেয়ে থাকলে, কালকেই আমি ওই অসহায় মা-ছেলের জন্য ১ বস্তা চাল (৩০ কেজি) ও ইফতারি কেনার জন্য নগদ ১ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেব।
প্রসঙ্গত, এলাকায় গ্রাম্য আধিপত্য বিস্তার নিয়ে উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান ও এলাকার সর্দার আবু কাউছার মোল্লার সশস্ত্র লোকজনের মধ্যে পূর্ব বিরোধের জের ধরে গত ১২ এপ্রিল দফায় দফায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে প্রায় অর্ধশত লোক আহত হন। সংঘর্ষ চলাকালে কাউছার মোল্লার পক্ষের লোকজন পৈশাচিকভাবে প্রতিপক্ষের রিকশাচালক মোবারক মিয়ার (৪৫) একটি পা কেটে কুপিয়ে বিচ্ছিন্ন করে। পরে ওই পা হাতে নিয়ে গ্রামে ‘আনন্দ মিছিল’ করে দাঙ্গাবাজরা। এর পর গুরুতর আহত মোবারক চার দিন পর গত ১৫ এপ্রিল মারা যায়। এর পর নিহতের স্ত্রী-পুত্র গত প্রায় একমাস ধরে বড় কষ্টে জীবন কাটাচ্ছে।