প্রতি মাসে টাকা পাবে ২ কোটি গরিব মানুষ, কর্তৃত্ব থাকবে না মেম্বার-চেয়ারম্যানের
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৩ মে ২০২০, ০৯:০৬ AM , আপডেট: ০৩ মে ২০২০, ০৯:৫৩ AM
করোনাভাইরাসের কারণে ত্রাণের পরিধি বাড়াচ্ছে সরকার। দেশের কোন মানুষের যাতে অভুক্ত থাকতে না হয়, সে জন্য সরকার দুই কোটি মানুষকে অর্থাৎ ৫০ লাখ পরিবারের প্রতি চারজনকে সরাসরি নগদ টাকা দেবে। এরই অংশ হিসেবে প্রতি পরিবার নগদ পাবে দুই হাজার ৪০০ টাকা। প্রতিজনে গড়ে ৬০০ টাকা।
প্রণোদনার অর্থ সরাসরি চলে যাবে তাদের মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে অথবা নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। এসব ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের কোন ধরণের কর্তৃত্ব বা মধ্যস্থতা থাকবে না। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে- বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর স্থানীয় পর্যায়ে সরকারের ত্রাণ বিতরণের সময় তাদের বিরুদ্ধে অনিয়মের নানা অভিযোগ উঠছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় এ প্রণোদনার জন্য দু-এক দিনের মধ্যে এক হাজার ২০০ কোটি টাকা ছাড় করবে। পুরো বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় তদারক করছে। নগদ সহায়তার অর্থ ছাড় হলে সব মিলিয়ে সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষ প্রণোদনার আওতায় আসবে। অর্থ মন্ত্রণালয়, ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. হাবিবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী খুব শিগগিরই এক হাজার ২০০ কোটি টাকা ছাড় করা হবে। বিষয়টি সরাসরি তদারক করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। অর্থ মন্ত্রণালয় অর্থ ছাড়সহ অন্যান্য কাজ করবে। তিনি জানান, শহর-গ্রাম দুই জায়গায়ই এ প্রণোদনা দেওয়া হবে। তাই আশা করা যায়, প্রান্তিক মানুষরা না খেয়ে থাকবে না। আরো অর্থ ছাড়ের প্রয়োজন হলে অর্থ বিভাগ তা করবে।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রান্তিক মানুষদের সহায়তা করার ঘোষণা দেন। ওই ঘোষণা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে অর্থ মন্ত্রণালয় এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করে। এ ক্ষেত্রে দেশের গরিব, দুস্থদের চিহ্নিত করতে জেলা, উপজেলা পর্যায়ের চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ প্রশাসনের সহায়তা নেওয়া হয়েছে। আর শহর এলাকার জন্য প্রশাসন ও মন্ত্রণালয়গুলো একসঙ্গে কাজ করছে। সব মিলিয়ে ৫০ লাখ পরিবারের একটি তালিকা করা হয়েছে। তালিকায় প্রতি পরিবারের সদস্য সংখ্যা ধরা হয়েছে চারজন। সেই হিসাবে নগদ প্রণোদনার আওতায় আসছে দুই কোটি প্রান্তিক মানুষ।
প্রতি পরিবার মাসে পাবে দুই হাজার ৪০০ টাকার নগদ সহায়তা। প্রথম কিস্তির টাকা আগামী দু-এক দিনের মধ্যে দেওয়া হতে পারে বলে জানা যায়। পরবর্তীতে অবস্থা বিবেচনায় আরেক দফা নগদ প্রণোদনা দেওয়া হতে পারে। এ জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় এক হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। উচ্চপর্যায় থেকে সবুজ সংকেত পেলে যেকোনো সময় এ অর্থ ছাড় করতে প্রস্তুত রয়েছে মন্ত্রণালয়। প্রথম কিস্তির জন্য ১২০ কোটি টাকা খরচ হবে সরকারের।
এর আগে ওএমএসের মাধ্যমে খোলাবাজারে চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি, কোনো ক্ষেত্রে বিনা মূল্যে ত্রাণ সরবরাহ করেছে সরকার। এসব ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ ও গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে। নগদ অর্থের ক্ষেত্রে যেন এ অবস্থা সৃষ্টি না হয় সে জন্য এবার কোনো মধ্যস্থতাকারী রাখছে না সরকার। নগদ সহায়তার অর্থ প্রান্তিক মানুষের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সরাসরি দিয়ে দেওয়া হবে।
এছাড়া চলতি মে মাসে ৫০ লাখ পরিবারকে মাসে ২০ কেজি করে খাদ্য (চাল) সহায়তা দেওয়া হবে। এত দিন সাধারণত ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছিল। এ জন্য কোন জেলায় কত পরিবার এই সহায়তা পাবে তা ঠিক করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। এর ভিত্তিতে উপকারভোগীর নাম অন্তর্ভুক্ত করে কালকের মধ্যে সফটওয়্যারের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।