২৮ এপ্রিল ২০২০, ০০:০২

ভালো আছে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা

ক’দিন আগেও গবেষণা ছিল- করোনাভাইরাসে যুবকদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম। সে হিসেবে ঝুঁকিহীন শিক্ষার্থীরা। যদিও বিজ্ঞানীদের সেই গবেষণায় সায় দেয়নি বাংলাদেশ, দেশের শিক্ষার্থীরা। ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পরপরই স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের দাবি তোলেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শত শত শিক্ষার্থী। ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেন অনেকে। অনশন শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চার ছাত্রের। এরপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের দায়ভার ও বন্ধের সুপারিশ ইস্যুতে শিক্ষা ও  স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পরস্পর-পরস্পরকে চাপালেও সময় খুব একটা গড়ায়নি। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেয় সরকার।

সংশ্লিষ্টদের ধারণা, তাৎক্ষণিক পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ না করলে হয়তো আজ বেশি আক্রান্তের তালিকায় যুবকদের বদলে শিক্ষার্থীদের নাম লিখতে হত। এই বিবেচনায় বলাই যায়, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা ভালো আছেন।

তথ্যমতে, গোটা বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশেও প্রতিদিন বেড়ে চলেছে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। যদিও এই তালিকায় শিক্ষার্থীদের সংখ্যা এখনো পর্যন্ত খুবই কম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেহেতু সব বয়সী মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন, তাই তালিকা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় তো বটেই; প্রাথমিক-মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরাও বাদ যেত না। 

ছাত্ররা বলছেন, দেশের প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতেই গণরুম রয়েছে। যা করোনা ভাইরাস সংক্রমণের জন্য ব্যাপক ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। সেই সঙ্গে আবাসিক হলের ডাইনিং-ক্যান্টিন, হলের গেস্টরুম ও ক্লাসরুমের সমাগম তো রয়েছেই। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা বাসায় অবস্থান করায় এখনও পর্যন্ত তারা সুস্থ। অন্তত কমিউনিটি সংক্রমণের বিষয়টি ছড়ায়নি।

ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক-প্রশাসন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুর রশীদ রাজু বলছিলেন, মহামারী করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সারি যেভাবে বেড়ে চলেছে, তাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ না থাকলে এ সারি আরও দীর্ঘ হত। সেই সঙ্গে বাড়ত লাশের সংখ্যা; যা ভবিষ্যতে গোটা জাতির জন্যই বিরাট হিসেবে কাজ করত।

তথ্যমতে, গত ১৮ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সকল কার্যক্রম প্রথম দফায় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নোটিস দেয়া হয়। পরে সরকারি সিদ্ধান্তের সঙ্গে মিল রেখে দফায় দফায় বেড়েছে এই ছুটি। সর্বশেষ সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। তার ভাষ্য, যখন করোনার প্রকোপ থাকবে না, তখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, দেশের ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে মাত্র তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন জন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ও ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন শিক্ষার্থীর আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অনেকেই আবার পুরোপুরি সুস্থও হয়ে উঠেছেন।

আক্রান্ত হয়েছেন সরকারি কলেজ, মাধ্যমিক এমনকি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। এর মধ্যে রাজধানীর সরকারি কবি নজরুল কলেজ ও নারায়ণগঞ্জ ও আরেকটি জেলার কলেজ ছাত্রের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সিলেটে আক্রান্ত হয়েছেন প্রাথমিকে পড়ুয়া শিক্ষার্থী। এর বাইরে ওই অর্থে ছাত্র-ছাত্রীর করোনাভাইরাস আক্রান্তের তথ্য পাওয়া যায়নি 

শঙ্কা জাগাচ্ছে সেশনজট: এদিকে আপাতদৃষ্টিতে করোনা থেকে রেহাই পেলেও শিক্ষাজীবনে দীর্ঘ সেশনজটের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের টিভি ক্লাসের মাধ্যমে পাঠদানের ব্যবস্থা করা হলেও ভার্চুয়াল ক্লাস থেকে বাদ থাকছেন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়ারা। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন’র (ইউজিসি) আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের ৬৫ বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন ক্লাসে সাড়া দিলেও বাইরে রয়েছে বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

এ ক্ষেত্রে অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এ আহবানে কান দেয়নি। কমিশনের সর্বশেষ তথ্য মতে, সারাদেশে ৯৫টি বেসরকারি ও ৪৬টি সরকারি— মোট ১৪১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা-কার্যক্রম চলমান থাকলেও ৬৫টিতে অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর মধ্যে ১৩টি সরকারি ও ৫২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। বাকি ৭৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইনে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করেনি।

অনলাইন পাঠদান কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কেমন, কবে থেকে শুরু করা হয়েছে, কতজন শিক্ষক ক্লাস নিচ্ছেন— এসব তথ্য সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে চাওয়া হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে। এ সংক্রান্ত তথ্য পাঠাতে ইউজিসি থেকে দু’দফায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চিঠি দেয়া হয়।

গত মাসের শেষের দিকে দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দেওয়া কমিশনের এক চিঠিতে অনলাইনে একাডেমিক কার্যক্রম চালানোর আহবান জানানো হয়। পরে কমিশন থেকে বলা হয়, বাংলাদেশ গবেষণা ও শিক্ষা নেটওয়ার্ক (বিডিরেন)-এর ডেটা সেন্টারের জুম অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে বিনা খরচে অনলাইন কার্যক্রম চালানো সম্ভব।

এ ব্যাপারে ইউজিসির সচিব (ভারপ্রাপ্ত) ড. ফেরদৌস জামান বলেন, অনেকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে বাসায় বসে আছেন। তারা শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন পাঠদান কার্যক্রম গ্রহণ করেননি। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তথ্য পাঠানো হয়েছে তা সমন্বয় করে আগামী রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। তবে এর মধ্যে যদি কেউ নতুন করে এ সংক্রান্ত তথ্য পাঠান তাও যুক্ত করা হবে। কারণ, সব বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনের আওতায় না আসলে সেশনজট বাড়বে।

শিক্ষা সংশ্লিষ্টরাও বলছেন, করোনা পরিস্থিতিতে তুলনামুলকভাবে ভালো আছেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন ক্লাস না করায় শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে যে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন, তা পুষিয়ে নেওয়া কঠিন হবে। অনলাইন ক্লাস খোলা থাকলে এর অনেকটাই পূরণ হত বলে মত শিক্ষাবিদদের। 

এর আগে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। তা মোকাবিলার লক্ষ্যে শিক্ষকদের অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা উৎসাহিত করতে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।