পোশাক কারখানা খোলা নাকি বন্ধ— কী বলছে বিজিএমইএ
পোশাক কারখানা খোলা নাকি বন্ধ- সে বিষয়ে ধন্ধে পড়েছেন শ্রমিকরা। সবচেয়ে বেশি ধোঁয়াশা বকেয়া বেতন প্রাপ্তি নিয়ে। এরই মধ্যে বেতনের জন্য ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন অনেক শ্রমিক। যারা বাড়িতে রয়ে গেছেন, চিন্তায় পড়েছেন তারাও। এদিকে আবার আজ কারখানা খোলার ঘোষণা দিয়ে বেতন চাওয়ার দাবির মুখে বন্ধের নোটিস দিয়েছে কয়েকটি কারখানাে। ওই দাবি নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন কিছু শ্রমিক। হয়েছে সংঘর্ষও।
একটি সূত্র জানিয়েছে, যেসব গার্মেন্টেস শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছেন, তাদের অনেকের প্রতিষ্ঠান খোলার কথা থাকলেও আজ নতুন করে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আবার বেশ কিছু কারখানায় কাজও শুরু হয়েছে। ফলে খোলা-বন্ধের বেড়াজালে বিপাকে পড়েছেন শ্রমিকরা। যদিও শ্রমিকদের প্রতি কারখানা সংশ্লিষ্ট অনেকের পরামর্শ, কারখানা খোলা নিয়ে ধোঁয়াশা শুধু বিজিএমইএ’র নয়, এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা নেই। তাই শ্রমিকরা যদি স্ব স্ব কারখানা কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, তবেই সেটা তাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে। যদিও বকেয়া বেতন নিয়ে কথা বলছে না কেউ-ই। স্পষ্ট মন্তব্য পাওয়া যায়নি মালিক পক্ষ কিংবা বিজিএমইএ’র।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার জানান, মালিক ও বিজিএমইএর পক্ষ থেকে পোশাক কারখানা বন্ধ ও খোলার বিষয়ে একেক সময় একেক ঘোষণা ও সিদ্ধান্তে শ্রমিকেরা বিভ্রান্তিতে পড়ছেন। এসব কারণে শ্রমিকেরা কর্মস্থলে উপস্থিত হলেও অনেক কারখানার শ্রমিকেরা নিজেদের স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা ভেবে কাজ করতে চাচ্ছেন না।
তবে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত বিজিএমইএ স্পষ্ট করে কিছু বলছে না। সব কারখানা খোলা থাকবে নাকি বন্ধ, খোলা থাকলে কোন কারখান; সেসব বিষয়েও নেই আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা। তবে গতকাল (২৬ এপ্রিল) বিজিএমইএ’র অফিসিয়াল ফেসবুক পেজের এক স্ট্যাটাসে বলা হয়, ‘শ্রমিকদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিজিএমইএ কর্তৃক প্রদত্ত স্বাস্থ্য প্রটোকল, যেমন: সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, গেটে তাপমাত্রা পরিমাপ করা, প্রবেশের সময় হাত ধোয়া, কর্মীদের মাস্ক সরবরাহ করা ইত্যাদি মেনে, সীমিত জনবল নিয়ে আমাদের সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত কিছু কারখানা আজ থেকে কার্যক্রম শুরু করছে। শ্রমিক-মালিক একসাথে জীবন বাঁচাতে, জীবিকা রক্ষাতে থাকতে হবে একে অপরের পরিপূরক হয়ে, একসাথে আগামীর পথে।’ সে হিসেবে আলাদা কোনো নোটিস না দিলেও বোঝা যায়, কারখানা খোলার ব্যপারে বিজিএমইএ’র সম্মতি ও নির্দেশনা রয়েছে।
যদিও এর তিন আগে এক বার্তায় তৈরি পোশাক কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি বলে জানিয়েছিল বিজিএমইএ। ওই বার্তায় করোনার এই প্রাদুর্ভাবে গ্রাম থেকে শ্রমিকদের ফিরিয়ে না আনার অনুরোধও করেছিল পোশাক মালিকদের সংগঠনটি।
শুক্রবার (২৪ এপ্রিল) রাতে বিজিএমইএর ওয়েবসাইটে সদস্যদের উদ্দেশে দেয়া ওই বার্তায় বিজিএমইএ জানায়, অর্থনীতিকে চলমান রাখতে সার্বিক পরিস্থিত বিবেচনায় পোশাক কারখানা খোলা রাখার নির্দেশনা দেবে বিজিএমইএ। সেই নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত যেসব শ্রমিক গ্রামে আছে, তাদের ঢাকায় আসতে না বলার জন্য অনুরোধ করা হলো। সে হিসেবে এখনও পর্যন্ত বন্ধ থাকবে পোশাক কারখানা।
ওই নোটিসে আরও বলা হয়, পর্যায়ক্রমে এলাকাভিত্তিক পোশাক কারখানা খোলার নির্দেশনা দেওয়া হবে। ফলে প্রথম ধাপে কারখানার আশপাশে যেসব শ্রমিক থাকে, তাদেরই কাজে যোগদান করতে বলা যাবে। মানবিক দৃষ্টিকোণ বিবেচনায় কোনো শ্রমিক ছাঁটাই না করার অনুরোধ করেছে পোশাক মালিকদের সংগঠনটি। এছাড়া বিরূপ পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের ঢাকায় নিয়ে আসা হলে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে কোনো সহায়তা করা হবে না বলে জানানো হয়েছে।
যদিও এর আগে সরকারি এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, দুই শর্তে পোশাক কারখান খোলা যাবে, তবে সেটা কবে থেকে- সে বিষয়ে প্রজ্ঞাপনে সুস্পষ্ট কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি।
এদিকে আজ শিল্প পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সব কারখানা একসঙ্গে না খোলার কারণে চালু হওয়া কারখানার শ্রমিকেরা অনেকটা বিভ্রান্তির মধ্যে পড়েছেন। তাঁরা (চালু হওয়া কারখানার শ্রমিক) মনে করেন, শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনা করে অধিকাংশ কারখানা বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বন্ধ থাকা কারখানার শ্রমিকেরা ঘরে বসেই বেতন পাবেন বলে ধারণা তাদের। আর তাদের কাজে এনে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলা হচ্ছে। এ কারণে চালু হওয়া অনেক কারখানার শ্রমিকেরা কাজ করতে চাচ্ছেন না।
পুলিশ ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ সকালে কারখানা চালু হওয়ার পরপরই কাজ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন আশুলিয়ার নরসিংহপুরের শারমীন গ্রুপের শ্রমিকেরা। একপর্যায়ে শ্রমিকেরা কাজ না করে কারখানা থেকে বের হয়ে যান। এই কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, বর্তমান অবস্থায় শ্রমিকদের নিরাপত্তার কথা ভেবে গত শনিবার কারখানা খোলার দিন দুই শিফট চালু করা হয়েছিল। অর্ধেক শ্রমিক সকাল ছয়টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত আর বাকি অর্ধেক শ্রমিক বেলা আড়াইটা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কাজ করছিলেন। এতে শ্রমিকেরা ছয় ফুট দূরত্বে বসে কাজ করতে পারতেন। কিন্তু শ্রমিকেরা নানা অজুহাতে এক শিফট চালু করার দাবি জানান। তাঁদের দাবি অনুযায়ী আজ থেকে এক শিফট চালু করা হয়েছিল। এরপরও আজ সকালে শ্রমিকেরা কর্মস্থলে উপস্থিত হয়ে কারখানা থেকে বের হয়ে যান। পরে অবশ্য আলোচনার ভিত্তিতে তাঁরা কাজে ফিরতে সম্মত হয়েছেন।
একই এলাকার হা-মীম গ্রুপের শ্রমিকেরা আজ কর্মস্থলে উপস্থিত হয়ে বর্তমান অবস্থায় কাজ করতে অপরগতা প্রকাশ করেন। পরে কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কারখানার মূল ফটকে দেওয়া নোটিশে বলা হয়, আন্তর্জাতিক ক্রয় আদেশ বাতিল, শ্রমিকদের নিরাপত্তা আর স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনা করে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হলো।
অন্যদিকে জামগড়ার নেক্সট কালেকশন নামের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরাও আজ সকালে কর্মস্থলে উপস্থিত হয়ে কাজ না করে কারখানা থেকে বের হয়ে গেছেন বলে জানা গেছে। আশুলিয়ার সিগমা ফ্যাশনসের ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকেরা আজ বেলা ১১টার দিকে কারখানার সামনে উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এ সময় তাঁরা ছাঁটাইয়ের আদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানান।