করোনা সারাতে রাতভর থানকুনিপাতা খেল বরিশালের বাসিন্দারা
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস আতঙ্কে এখন বাংলাদেশ। এদিকে তিনটি থানকুনিপাতা খেলে করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ে বরিশালের গৌরনদী, আগৈলঝাড়া ও উজিরপুর উপজেলায়। গতকাল মঙ্গলবার গভীর রাতে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়।
তবে ফজরের নামাজের আগেই এ পাতা খেতে হবে হবে। এ গুজব খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাতা খাওয়ার হিড়িক চলে এলাকায়। কোথাও কোথাও থানকুনিপাতা খেতে মাইকযোগে আহ্বান জানানো হয়।
থানকুনিপাতা খেয়েছেন এমন কয়েকজন বলেন, তাঁদের স্বজনেরা রাত তিনটায় হঠাৎ ফোন দিয়ে জানান, থানকুনিপাতা খেলে করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি মিলবে। এ খবর পাওয়ার সঙ্গেই রাতেই পাতার সন্ধানে নামেন এবং বাড়ির আঙিনা ও আশপাশের জঙ্গল থেকে পাতা তুলে খেয়ে নেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আগৈলঝাড়া উপজেলার ছয়গ্রাম গ্রামের এক হাজি দম্পতি জানান, ফোন পেয়ে রাত তিনটায় পাতা তুলে খেয়েছেন। কে এই আদেশ দিয়েছে, জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, এক পীর স্বপ্নে করোনাভাইরাস থেকে মুক্তির এই তরিকা পেয়েছেন বলে শুনেছেন। ওই পীর সবাইকে পাতা খাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। পীরের নাম জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, তা তো জিজ্ঞাসা করেননি।
গৌরনদী পৌরসভার এক নারী জানান, খবর পেয়েও তিনি পাতা খাননি। তাহাজ্জত নামাজ আদায় করেছেন। তবে তাঁর বাড়ির পাশে রাত তিনটা থেকে ফজরের নামাজের আজান পর্যন্ত পাতা খাওয়ার ধুম পড়ে।
বুধবার (১৮ মার্চ) সকালে এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পক্ষে-বিপক্ষে নানা মন্তব্য আসতে দেখা যায়। খালেদ মহসীন নামে একজন লিখেছেন, তাঁর এলাকায় একটি মসজিদ থেকে মাইকে পাতা খাওয়ার বিষয়ে প্রচার চালানো হয়। অনেকেই ফোন দিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চান। তাঁরা অনেকেই জানান, গভীর রাতে থেকে সারা রাত পর্যন্ত পাতা খাওয়ার গুজব ছড়িয়ে পড়লে প্রতিটি এলাকায় অজস্র মানুষ রাত জেগে পাতার সন্ধান করেন এবং তা সংগ্রহ করে খান।
এ গুজবের ব্যাপারে জানতে চাইলে উজিরপুর উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. শওকত আলী বলেন, স্বাস্থ্য বিজ্ঞানে থানকুনি পাতার অনেক গুনাগুণ আছে। কিন্তু তিনটি পাতা খেলে করোনভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে, এর কোনো সত্যতা নেই। গুজবে কান দিয়ে অনেকে পাতা খেয়েছেন।
গৌরনদী উপজেলা ওলামা পরিষদের সভাপতি মাওলানা আবদুল বাতেন বলেন, থানকুনি পাতা খেতে কোন আলেম বা পীর আদেশ দিয়েছেন বলে কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। এ পাতা খেলে রোগমুক্তি হবে, ইসলামেও এমন তথ্যেরও কোনো ভিত্তি নেই।