করোনা আতঙ্কে ভর্তি নেয়নি হাসপাতাল, প্রাণ গেল নোশিনের বাবার
আমার অত্যন্ত কাছের বান্ধবী নুরুন নাহার নোশিনের বাবা আজ সকালে ইন্তেকাল করেছেন। আঙ্কেল নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। হাসপাতালে ভর্তি করাতে গেলে সব বেসরকারি হাসপাতাল তাকে ফিরিয়ে দেয়। কারণ তারা ধারণা করছিল আঙ্কেল করোনায় আক্রান্ত এবং তা পরীক্ষা করার মত কোন টেস্ট কিট হাসপাতালে নেই।
এছাড়া এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর কাছে যাওয়ার মত যথেষ্ট নিরাপত্তা সরঞ্জামও সরকারের কাছ থেকে তারা পায়নি। এবং সরকার অনুমোদিত করোনা রোগীদের জন্য হাসপাতালগুলো আইইডিসিআর এর টেস্ট রিপোর্ট ছাড়া ভর্তি করবে না বলে জানায়। অসহায়ের মত এম্বুলেন্সে করে রাস্তায় বসে থেকে বাসায় নিয়ে গেলে এর মধ্যে আঙ্কেলের শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়।
আঙ্কেলের তখন আইসিইউ সাপোর্টের ইমিডিয়েট দরকার ছিল। নোশিনের বড় বোন ও দুলাভাই নিজেরা ডাক্তার হওয়া সত্ত্বেও কোন প্রকার সাহায্য পাননি। এর মাঝে আইইডিসিআর এর সাথে অসংখ্যবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও কোন রেসপন্স পাওয়া যাচ্ছিল না কারণ প্রবাসী বাংলাদেশীদের সংস্পর্শে আসেনি এমন করো স্যাম্পল তারা টেস্ট করছিলো না। দেশের বাইরে থেকে যারা এসেছে তাদের টেস্ট করতেই তারা হিমশিম খাচ্ছে।
আমার হাজবেন্ডের দুলাভাই (শিমুল ভাইয়া) অনেক চেষ্টার পর আইইডিসিআর এর সাথে যোগাযোগ করে স্যাম্পল নেওয়ার ব্যবস্থা করেন গতকাল দুপুরে। এরই মধ্যে আঙ্কেলের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। আজ ভোর সাড়ে পাঁচটায় নোশিনের কল পাই, পাগলের মত কাঁদছিল আর বলছিল আজ একটা টেস্ট রিপোর্টর জন্য আমার বাবা মারা যাচ্ছে। অসহায়ের মত শোনা ছাড়া আর কিছুই আমার করার ছিল না। শিমুল ভাইয়া আপ্রাণ চেষ্টা করে আজ দুপুরের মধ্যে রিপোর্ট পাওয়ার জন্য অনুরোধ করে কিন্তু তার আগেই সব শেষ।
এখন আমরা সেই রিপোর্টের আশায় বসে আছি যেন বিনা চিকিৎসায় মারা গেলেও মৃত্যু পরবর্তী পথটা যেন আর কঠিন না হয়। করোনা নাকি তার আতঙ্ক আঙ্কেলের মৃত্যুর জন্য দায়ী এখন সেটারই জানার অপেক্ষা।
লেখা: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত