পুকুর খনন দেখতে বিদেশ যাবেন ১০০ কর্মকর্তা
এবার পুকুর ও খাল উন্নয়ন শিখতে বিদেশ সফরে যাবেন ১০০ কর্মকর্তা। প্রশিক্ষণের নামে এ সফর বাবদ সরকারের ব্যয় হবে ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। তবে অনুমোদিত মূল প্রকল্পে বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য ২৪ জনের কথা বলা ছিল। সেখানে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এখন নতুন করে ৭৬ জন কর্মকর্তা যোগ করার প্রস্তাব দেয়ায় বাড়তি ৬ কোটি ৬ লাখ টাকা ব্যয় হবে। এছাড়া বাড়ছে পরামর্শকের সংখ্যা ও এ খাতের ব্যয়ও। সেইসঙ্গে নানা কারণে বাড়ছে প্রকল্পের মোট ব্যয়।
‘সারাদেশে পুকুর, খাল উন্নয়ন’ প্রকল্পের প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবে উঠে এসেছে এসব তথ্য। আগামী ৮ মার্চ এই প্রস্তাবের ওপর অনুষ্ঠিত হবে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা।
এতে সভাপতিত্ব করবেন কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) মো. জাকির হোসেন আকন্দ। এর আগে ‘পুকুর পুনঃখনন ও ভূ-উপরিস্থ পানি উন্নয়নের মাধ্যমে ক্ষুদ্র সেচে ব্যবহার’ নামের একটি প্রকল্পে ১৬ কর্মকর্তার বিদেশ সফরের ঘটনায় ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছিল।
জানতে চাইলে জাকির হোসেন আকন্দ মঙ্গলবার বলেন, পিইসি সভায় এ বিষয়টি যুক্তিযুক্তভাবেই বিবেচনা করব। ‘নিড বেইজ’ চিন্তা করা হবে। যদি প্রয়োজন হয় তাহলেই সেই সংশ্লিষ্টদের বিদেশ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হবে। প্রয়োজন ছাড়া দেয়া হবে না।
স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিকল্পনা উইংয়ের প্রধান জয়েন্ট চিফ মহিউদ্দিন কাদরী জানান, বিষয়টি সেরকম নয়। শুধু যে পুকুর খনন বা খাল উন্নয়ন শিখতে বিদেশে প্রশিক্ষণে কর্মকর্তারা যাবেন তা নয়।
এ খাতে বরাদ্দ ধরা থাকলে দেশের জাতীয় স্বার্থে যেকোনো বিষয়ে ইঞ্জিনিয়াররা প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশে যাওয়ার দরকার হলে এখান থেকে টাকা খরচ করা যায়। সেই চিন্তা করেই বরাদ্দ ধরা হয়েছে।
পিইসি সভার জন্য তৈরি করা কার্যপত্রে বলা হয়েছে, মূল প্রকল্পে ৫ জন পরামর্শকের জন্য ব্যয় ধরা ছিল ৩ কোটি ৪২ লাখ টাকা। কিন্তু প্রস্তাবিত সংশোধনীতে পরামর্শক সংখ্যা বাড়িয়ে ২৯ জন করা হয়েছে। এ খাতে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৩৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। যেটি মূল প্রকল্পের তুলনায় ৩৬ কোটি ২২ লাখ টাকা বেশি।
কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়, সারাদেশে পুকুর, খাল উন্নয়ন প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ১ হাজার ৩৩৪ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। সেখান থেকে ৯১৯ কোটি টাকা বাড়ানো হচ্ছে। ফলে মোট ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ২ হাজার ২৫৪ কোটি ৬৯১ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে ব্যয় বাড়ছে ৬৮ দশমিক ৯১ শতাংশ। সেই সঙ্গে মেয়াদও বাড়ছে এক বছর।
২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা থাকলেও এখন প্রথম সংশোধনীতে প্রস্তাব করা হয়েছে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। এটি ২০১৭ সালের ২৯ মার্চ অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার বিভাগের আয় দিয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)।
২০১৯ সালের জুন মাস পর্যন্ত দুই বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও বাস্তব অগ্রগতি প্রায় ২ শতাংশ। আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে আরও কম ১ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এ অবস্থায় প্রকল্পটির সশোধনীর ক্ষেত্রে বেশ কিছু কারণ তুলে ধরা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে-খাল বা পুকুর ডিজিটাল জরিপ ও ডাটা প্রসেসিংসহ আনুষঙ্গিক কার্যাবলি সমাপ্ত করতে মূল প্রকল্পে প্রয়োজনীয় লজিস্টিক ও উপজেলা পর্যায়ে জনবলের অপ্রতুলতা।
এছাড়া খালগুলোর মূল এ্যালাইনমেন্ট পরিবর্তন, পুকুরের মালিকানা সংক্রান্ত সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে বাস্তবায়নযোগ্যতা যাচাই, হাইড্রোলিক ডিজাইন ও হাইড্রোলজিক্যাল বিষয়াদি, খনন করা মাটির পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল বা পরামর্শকের অভাব রয়েছে। আর স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সুপারিশ অনুযায়ী প্রকল্পে স্কিম ও নতুন অঙ্গ অন্তর্ভুক্তিসহ মূলধন ও রাজস্ব খাতে কিছু অঙ্গে পরিমাণ ও ব্যয় হ্রাস/বৃদ্ধির করা হচ্ছে। এসব কারণেই প্রকল্প ব্যয় ৬৮ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি করে প্রকল্পটি সংশোধন করা হচ্ছে।
পিইসি সভার কার্যপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, পরিকল্পনা কমিশন বলছে, প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় এর আওতায় পুকুর পুনঃখননের জন্য প্রস্তাবিত পুকুর/দিঘি/খালসমূহ নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোনো জটিলতা হবে না বলে জানানো হয়। এক্ষেত্রে মামলাবিহীন, ইজারাবিহীন বা বেদখল হয়ে যাওয়া ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় কোনো ধরনের জটিলতা হবে না বলে প্রত্যয়নপত্র দেয়া হয়েছিল।
কিন্তু এ পর্যায়ে এসে আবারও সেসব বিষয় প্রকল্প সংশোধনের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় প্রাতিষ্ঠানিক পুকুর দিঘিতে ৯৩৮টি ঘাটলা নির্মাণ বা মেরামতের লক্ষ্য নেয়া হয়েছিল। কিন্তু গত বছরের জুন পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়েছে মাত্র ১৬টি ঘাটলা।
এ অবস্থায় প্রথম সংশোধনীতে ৯৩৮টি ঘাটলার অতিরিক্ত ১ হাজার ৫৬২টি ঘাটলা নির্মাণের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। ফলে মোট ঘাটলার সংখ্যা হবে ২ হাজার ৫শটি। এছাড়া পথচারী বা যানবাহন পারাপারে ২ হাজার ৪শ’ মিটার ক্ষুদ্রাকার সেতু বা ওভারপাস নির্মাণ কার্যক্রম নতুনভাবে যোগ করে এ খাতে ১২০ কোটি টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। এসব আইটেমের পরিমাণ ও ব্যয় যৌক্তিকভাবে পুনঃনির্ধারণ করতে হবে।
পরিকল্পনা কমিশন আরও বলেছে, এর আগে জেলা পরিষদের আওতায় ১ হাজার ৭০০টি পুকুর শনাক্ত করা হয়েছে। সেগুলোর ব্যবহার উপযোগিতা বৃদ্ধির জন্য নিম, সুপারি,তাল ও নারিকেলসহ বিভিন্ন বৃক্ষ রোপণের জন্য একনেকের নির্দেশনা ছিল।
কিন্তু সংশোধনের জন্য প্রস্তাবিত এ প্রকল্পের আওতায় পৌর এলাকার খাল, পুকুর, দিঘির পাড়ে ওয়ার্কওয়ে, সিটিং, পার্কিং ব্যবস্থাসহ অন্যান্য সুবিধাদি প্রদান অর্থাৎ সৌন্দর্য বর্ধন কার্যক্রম নতুনভাবে যোগ করা হয়েছে। এ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪৫ কোটি টাকা।
বাদ দেয়া হয়েছে বৃক্ষ রোপণের প্রস্তাব, যা গ্রহণযোগ্য নয়। আরও বিভিন্ন ব্যয়ের ক্ষেত্রে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। পিইসি সভায় প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের কাছে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে বলে জানান কমিশনের কর্মকর্তারা। সূত্র: যুগান্তর