২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৯:২১

দেশের বাইরেও ভাষার জন্য বাঙালিরাই প্রাণ দিয়েছেন

আসামের শিলচর স্টেশনটির নাম হলো ভাষা শহীদ স্টেশন, আন্দোলনকারীদের একজন সেখানে দাড়িয়ে কথা বলছেন  © বিবিসি

মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার আদায়ে ১৯৫২ সালে বাঙালিরা প্রথম প্রাণ দিয়েছিল। সেই মাতৃভাষার ওপর ভিত্তি করেই ১৯৭১ সালে ভাষা ভিত্তিক জাতি রাষ্ট্র বাংলাদেশ গড়ে উঠে। আমেরিকার কবি রাফ এমারসন বলেছিলেন, ‘Language is a city to the building of which every human being brought a stone’। খুবই খাঁটি কথা।

বাংলাদেশের বাইরেও বাংলা ভাষার জন্য বাঙালিরাই প্রাণ দিয়েছেন। ১৯৬১ সালে আসামের সরকার বাংলাভাষী এলাকা বরাক উপত্যকায় অসমীয়া ভাষাকে আনুষ্ঠানিক ভাষা বলে ঘোষণা করলে দলমত নির্বিশেষে বরাক উপত্যকার জনগণ আন্দোলনে নেমেছিলেন। প্রতিবাদে ১৯৬১ সালের ১৯ মে বরাকে হরতালের ডাক দেওয়া হয়েছিল। সেদিন হরতাল চলাকালে আসামের পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালিয়ে মোট ১১ জনকে হত্যা করেছিল।

এরপর আন্দোলনকারীরা দমে না গিয়ে শেষমেশ সেই সরকারি ঘোষণা প্রত্যাহার করতে বাধ্য করেছিলেন। এরকম ঘটনা পাকিস্তান আমলে এদেশেও ঘটেছিল। গণআন্দোলনের মুখে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার শেষ পর্যন্ত নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয় এবং ১৯৫৪ সালের ৭ মে পাকিস্তান গণপরিষদে বাংলা অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গৃহীত হয়।

১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান প্রণীত হলে ২১৪ নং অনুচ্ছেদে বাংলা ও উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বর্তমানে বাঙালিরা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। তাই বাংলা ভাষার পরিধিও প্রতিনিয়ত প্রসারিত হয়েছে। বাংলা ভাষায় এখন বিশ্বের প্রায় ৩০ কোটি মানুষ কথা বলে। পরিসংখ্যানবিদদের অনুমান ২০৫০ সাল নাগাদ সারা বিশ্বে বাংলা ভাষীর সংখ্যা দাঁড়াবে ৩১ কোটি ৬০ লাখ।

ইউনেস্কোর মতে পৃথিবীর প্রায় ২৫০০ ভাষা বিলুপ্ত হওয়ার পথে। যার মধ্যে এমন কিছু ভাষা আছে যে ভাষায় কথা বলে হয়তো জনা তিরিশেক মানুষ। বর্তমান পৃথিবীতে মানুষ যত ভাষায় কথা বলে, তার ৫০ শতাংশই নাকি বিলুপ্ত হয়ে যাবে এই শতাব্দীর শেষে। প্রতিনিয়ত ভাষা ও ভাষায় শব্দের ব্যবহার পাল্টে যাচ্ছে। অনেক ভাষা অস্তিত্ব রক্ষায় অন্যের সঙ্গে নিজেকে মিশিয়ে নিচ্ছে। যার ফলে অনেক ভাষার নিজস্বতা বিলীন হচ্ছে।

সমীক্ষায় জানা যায়, প্রতি ১৫ দিনের একটি করে ভাষা মুছে যাচ্ছে পৃথিবীর বুক থেকে। কয়েকটি ভাষা অবশ্য সরকারি বদান্যতায় স্বমহিমায় ফিরেও এসেছে। যেমন ওয়েলস, মাওরির মত ভাষা সরকারী আনুকূল্য পেয়ে অস্তিত্ব টিকে রেখেছে। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে। এরপর ২০০০ সাল থেকে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রসমূহ বিশেষ মর্যাদায় দিনটি উদযাপন করে আসছে।

এখন জাতিসংঘ ভুক্ত বিশ্বের প্রায় ১৯৩টি দেশে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের উদ্দেশ্য হলো বিশ্বের বিপন্ন ভাষাগুলো রক্ষা ও সংরক্ষণ করা। সেক্ষেত্রে দিবসটি কতটুকু সফল তা গবেষণার দাবি রাখে।

বিশ্বে এথনোলগের ২০তম সংস্করণের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৬ হাজার থেকে ৮ হাজার ভাষার মধ্যে বাংলা ভাষা সমমর্যাদায় ৫ম স্থান অধিকার করে আছে। শুধু তাই নয়, ইউনেস্কোর কাছে ২০১০ সালে বাংলা পৃথিবীর সবচেয়ে মিষ্টি ভাষার স্বীকৃতি অর্জন করেছে। বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা তথা সরকারি ভাষা বাংলা।বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। বাংলাদেশের সংবিধানের তৃতীয় অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার কথা বলা হয়েছে।

এছাড়া ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসামের বরাক উপত্যকার সরকারি ভাষা বাংলা। বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের প্রধান কথ্য ভাষা বাংলা। ভারতের ঝাড়খণ্ড, বিহার, মেঘালয়, মিজোরাম, উড়িষ্যা রাজ্যগুলোতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাংলাভাষী জনগণ রয়েছে। ভারতে হিন্দির পরেই সর্বাধিক প্রচলিত ভাষা বাংলা।

২০১১ সালে বেড়েছে হিন্দিভাষী লোকের সংখ্যা। বেড়েছে বাংলাভাষীর সংখ্যাও। হিন্দিভাষী মানুষের সংখ্যা ৪১.০৩ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৩.৬৩ শতাংশ। আর বাংলাভাষীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৮.১১ শতাংশ থেকে ৮.৩ শতাংশ। ১৯৫০ সালে গৃহীত ভারতীয় সংবিধানে বাংলা ভাষা অন্যতম সরকারি ভাষার মর্যাদা লাভ করেছে। ভারতীয় সংবিধানের অষ্টম তফসিলে তালিকাবদ্ধ ২২টি ভাষার মধ্যে বাংলা অন্যতম।

এছাড়াও মধ্য প্রাচ্য, আমেরিকা ও ইউরোপে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাংলাভাষী অভিবাসী রয়েছে। বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত এবং ভারতের জাতীয় সঙ্গীতও বাংলায় রচিত। একই ভাষা ভৌগোলিক সীমা রেখার মধ্যে শুধু দূরত্বের কারণে আলাদা বৈশিষ্ট্য অর্জন করে। এসব উপভাষা বা আঞ্চলিক ভাষার প্রাণ ও সৌন্দর্য। বলা হয়ে থাকে প্রতি ৪৮ মাইল পরপর ভাষার পরিবর্তন ও পরিবর্ধন সাধিত হয়ে থাকে। এক ৫৬ হাজার বর্গ মাইলের বাংলাদেশে বিভিন্ন অঞ্চলে বাংলা ভাষার বিচিত্রতা তার অনুপম দৃষ্টান্ত।

এখন যদি বলি বাংলাদেশের কোন অঞ্চলের ভাষা সবচেয়ে কঠিন? সোজা সাপটা উত্তর চট্টগ্রাম। প্রকৃত অর্থে বাংলাদেশের সবগুলো এলাকার মধ্যে সিলেট ও চট্টগ্রামের ভাষাই সবচেয়ে কঠিন। তবে সবচেয়ে কঠিন চট্টগ্রামের ভাষা। চট্টগ্রামের ভাষার সঙ্গে প্রায় ৭০% এর উপর বাংলা ভাষার সাদৃশ্যতা নেই।

চট্টগ্রামে বাংলা ভাষার এই আঞ্চলিক রূপ ও সহজে বোধগম্য না হওয়ায় হয়তো প্রমথ চৌধুরী বলেছিলেন, ‘বাংলা ভাষা আহত হয়েছে সিলেটে, নিহত হয়েছে চট্টগ্রামে।’

প্রাচীন কালের হরিকেল জনপদ খ্যাত সিলেট ও চট্টগ্রামে বাংলা ভাষা অচেনা রূপ ধারণ করারও যৌক্তিক কারণ আছে। সেই প্রসঙ্গ আমি আলোচনা করছি না। বলা হয় বাংলা ভাষার সাথে আসামের অসমীয়া ভাষার যে পার্থক্য, ঠিক সেই একই মাত্রার পার্থক্য সিলেটের ভাষার সাথে। আর চট্টগ্রামের ভাষার সাথে এই পার্থক্য আরো বেশি। চট্টগ্রামের ভাষা একটি স্বতন্ত্র ভাষা। এর নিজস্ব বিশাল সমৃদ্ধ শব্দভাণ্ডার রয়েছে।

লন্ডনের সিলেটি রিসার্চ এন্ড ট্রেন্সলেশন সেন্টারের উদ্যোগে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, সিলেট অঞ্চলসহ সমগ্র বিশ্বে বর্তমানে এক কোটি ষাট লক্ষ মানুষের মুখের ভাষা হচ্ছে সিলেটি।

আগেই বলেছি বাংলা ভাষার সঙ্গে চট্টগ্রামের ভাষার ৭০ ভাগই ন্যূনতম মিল নেই। যেমন শালিক পাখিকে চট্টগ্রামের ভাষায় বলে দেচ্ছো। তেলাপোকাকে বলে তেইল্লেচুরা। মুরগীকে বলে কুরো। মোরগকে বলে লাতা কুরো। টয়লেটকে টাট্টি। খারাপ মানুষকে জারগো। মাওলানাকে মুলিছাফ। পেয়ারাকে গুয়াছি। কাককে হাউওও। শিমের বিচিকে হাইস্যে। সমুদ্রকে দইজ্জে ইত্যাদি।

চট্টগ্রামের ভাষায় এমন কিছু বিদঘুটে শব্দ আছে, যা শুধু বাংলা কেন! পৃথিবীর কোনো ভাষায় অনুবাদ করা যাবে কি না সন্দেহ আছে। যেমন- মাইল্লেফিরে, অবাজিরে, অবাইজ্জেকুদা, আত্তামারেবাপ, উম্মারেম্মা। এছাড়া চট্টগ্রামের প্রবাদগুলোও পুরোপুরিই আলাদা। যেমন-হাত পাঁচ চইদ্দ, দুই টিয়া নইদ্দো (সাত পাঁচ চৌদ্দ, দুই টাকা দিয়ো না)।

ঘরের গরু ঘাড়ার খেড় ন হায় (ঘরের গরু সামনের মাঠের ঘাস খায় না)। পুন্দত নাই তেনা, মিডে দি ভাত হানা (পাছায় কাপড় নেই, তা-ও মিঠা দিয়ে ভাত খেতে চায়)। ফুয়াদেল্লাই ছাড়িত ন পারির, কেড়ারলাই গিলিত ন পারির (স্বাদের জন্য ছাড়তে পারছি না, কাঁটার জন্য গিলতে পারছি না)।

এসব ভাষার অধিকাংশ আমি নেট থেকে সংগ্রহ করেছি। এ রকম চাটগাঁওয়ের ভাষায় শতশত প্রবাদ আছে যা বাংলা ভাষায় বুঝে নেওয়া খুবই দুরূহ। আমরা এই ভাষাকে যতইই কঠিন, বাজে বলি না কেন। এটিও আমাদের ভাষা। এ ভাষা শেখা যায় না। যুগের পর যুগ মানুষ চট্টগ্রাম থেকেও এ ভাষা আয়ত্ত করতে পারে না। এ ভাষা জন্ম থেকে আয়ত্ত করতে হয়।

আমাদের বাংলা ভাষা ও পশ্চিমবঙ্গে প্রচলিত বাংলা ভাষার মধ্যে শব্দগত ও উচ্চারণগত সামান্য পার্থক্য বিদ্যমান। বাংলা ভাষা বিকাশের ইতিহাস ১৩০০ বছর পুরনো। চর্যাপদ এ ভাষার আদি নিদর্শন। অষ্টম শতক থেকে বাংলায় রচিত সাহিত্যের বিশাল ভাণ্ডারের মধ্য দিয়ে অষ্টাদশ শতকের শেষে এসে বাংলা ভাষা তার বর্তমান রূপ পরিগ্রহণ করেছে।

ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে নদিয়া অঞ্চলে প্রচলিত পশ্চিম-মধ্য বাংলা কথ্য ভাষার ওপর ভিত্তি করে আধুনিক বাংলা সাহিত্য গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন আঞ্চলিক কথ্য বাংলা ভাষা ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যে ব্যবহৃত ভাষার মধ্যে অনেকখানি পার্থক্য রয়েছে।

মানুষের মুখে মুখে বলা বা কথা বলার নতুন উপায় আবিষ্কারের ফলে সকল ভাষাতেই পরিবর্তন দেখা দেয়। এই পরিবর্তন এক প্রজন্ম থেকে অপর প্রজন্মে এমনকি অন্য সম্প্রদায়ের লোকদের মধ্যেও স্থানান্তরিত হয়। ধ্বনিগত দিক থেকে শুরু করে শব্দভাণ্ডার, পদবিন্যাস, বক্তৃতা, নাটক, সিনেমা, উপন্যাসের ভাষার পরিবর্তন হয়ে থাকে।

যদিও ভাষার এই পরিবর্তনকে শুরুর দিকে নেতিবাচক হিসেবে মূল্যায়ন করা হতো এবং ভাষা বিষয়ক বক্তারা মনে করতেন এই পরিবর্তনের ফলে ভাষা ব্যবহারের বিনাশ হচ্ছে বা মূল বিষয় থেকে বিচ্যুত হয়ে যাচ্ছে, তবু এই পরিবর্তন প্রাকৃতিক উপায়ে সংঘটিত হয় এবং তা এড়ানো দুষ্কর।

পরিবর্তনের ফলে নির্দিষ্ট শব্দ বা সম্পূর্ণ ধ্বনিগত পদ্ধতিতে প্রভাব দেখা যায়। শব্দগত পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে অন্য কোন শব্দ বা ধ্বনিগত বৈশিষ্ট্য দিয়ে একটি শব্দকে পুনঃস্থাপন, প্রভাবিত হওয়ার শব্দ সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, কিংবা যেখানে কোন শব্দ ছিল না সে স্থানে নতুন কোন শব্দ যুক্ত করা। যেমন- নিজেই নিজের ছবি তোলাকে ‘সেলফি’ বলা হয়ে থাকে, যা পূর্বে ছিল না। কিন্তু ভাষার পরিবর্তনের নামে সেই ভাষার বিকৃতি সাধিত হয় কথনেও লিখনে। তাহলে সেই ভাষার ভবিষ্যৎ কতটুকু নিরাপদ।

ইদানীং বেসরকারি টেলিভিশন ও এফএম রেডিও, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জগাখিচুড়ি ইংরেজির একটা মহামারি লেগেছে। বিশেষ করে ফেসবুকে। বাংলা বাক্যে ইংরেজি শব্দের ব্যবহার পুরো বাংলা ভাষার সৌন্দর্য হানি ঘটেছে। আরবি পড়তে গিয়ে পরের শব্দ উচ্চারণ করতে গিয়ে যেমন অযথা তিন চার আলিফ টান দেয় নিয়ম ছাড়া। তেমনি এক শ্রেণীর বাংরেজ এমন কাজ করে থাকে। তাদের না আছে বাংলা শব্দের ভান্ডার আবার নেই ইংরেজি শব্দের সম্ভারও।

জনৈক ব্যক্তির সঙ্গে আলাপচারিতায় স্বনামধন্য সাহিত্যিক হুমায়ূন আজাদ বলেছিলেন, যাদের সংগ্রহে ভাষার শব্দ সম্ভার কম, তারা কথা বলার সময় যথাশব্দটি খুঁজে পায় না। তাই ভিন্ন ভাষা থেকে দু একটি শব্দ এনে বাক্যের মধ্যে শব্দের ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করে। তবে আসল সত্য হল, যাদের ভাণ্ডারে বাংলার দৈন্য আছে, তাদের ভাণ্ডারে ইংরেজির প্রাচুর্য থাকাটাও অস্বাভাবিক। তাই এ জগাখিচুড়ির আবির্ভাব। কথা অসত্য বলেননি।

আজ কলিকাতায় বাঙালি ছেলে মেয়েরা ইংরেজি ও হিন্দি ভাষার মিশ্রণে বাংলা ভাষার বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে। অনেক ঠিকমতো বাংলা বলতে না পারলেও ঠুসঠাস দুটো ইংরেজি বলতে পারলে খুব গর্ববোধ করে।

একবার এক বাঙালি ছেলে রবীন্দ্রনাথের সাথে দেখা করার সময় ইংরেজি বলা শুরু করলে কবি বললেন, ‘বাঙালি ছেলে বাংলা রেখে ইংরেজি বলছ কেন?’ ঐ বালক গর্ব ভরে গদগদ হয়ে উত্তর দিল, ‘ইংরেজি শিখতে গিয়ে বাংলাটা ভুলে গেছি।’ রসিক কবি নববাবু অজ্ঞ বাঙালি বালকের প্রতি বিজ্ঞ মন্তব্য করলেন, ‘বাংলাটা ভুলে গেছ তাতে কোন দুঃখ নেই। কিন্তু দুঃখ হল, তুমি বৎস, ইংরেজিটাও ভাল করে শিখতে পারোনি।’ ইংরেজি বা ভিনদেশি ভাষা শিখতে মানা করছি না তবে নিজের ভাষাটি আগে ভালো ভাবে শিখ।

এদের অবস্থা হয়েছে ভবানীপ্রসাদ মজুমদার ‘বাংলাটা ঠিক আসে না!’ কবিতার মতো।

‘‘ছেলে আমার খুব ‘সিরিয়াস’ কথায়-কথায় হাসে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসেনা।
ইংলিশে ও ‘রাইমস’ বলে
‘ডিবেট’ করে, পড়াও চলে
আমার ছেলে খুব ‘পজিটিভ’ অলীক স্বপ্নে ভাসে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসে না।’’

তবে বাংলা ভাষা চর্চা ও সংরক্ষণে ১৯৮৭ সালের বাংলা ভাষা প্রচলন আইন গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। যে আইন বাংলাদেশের সকল রাষ্ট্রীয় কাজে বাংলার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে। জনসচেতনতা, আইনের বাস্তবায়ন ও মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসায় পারে বাংলা ভাষার দীর্ঘায়ু করতে। দূর করতে পারে জগাখিচুড়ি বাংরেজির ব্যবহার। শেষ করি প্রিয় কবিতা দিয়ে,

‘মোদের গরব, মোদের আশা, আ মরি বাংলা ভাষা!
তোমার কোলে, তোমার বোলে, কতই শান্তি ভালবাসা!’