১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৭:৪৯

গাজীপুর-যশোরের ১৩৬৩ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার

শহীদ মিনার  © ফাইল ফটো

২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আর মাত্র ৫ দিন বাকি। দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শহীদ মিনারগুলোতে ভাষার জন্য ১৯৫২ সালে যাঁরা জীবন দিয়েছিলেন তাঁদের এদিন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। কিন্তু যশোর এবং গাজীপুরের বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নেই শহীদ মিনার। দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালনের নির্দেশনা থাকলেও হাতেগোনা কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কলাগাছ, কাপড় ও বাঁশ দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করে পালন করে আসছে। তবে দায়িত্বশীলরা বলছেন, শিগগিরই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোফাজ্জল হোসেন জানান, গাজীপুর জেলা ও সিটি করপোরেশন এলাকার ৭৭৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৪১৭টিতেই শহীদ মিনার নেই। এ ছাড়া মাদ্রাসা ও কিন্ডারগার্টেনগুলোর সিংহভাগেই নেই কোনো শহীদ মিনার।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রেবেকা সুলতানা জানান, জেলার ৪৭টি কলেজের ১৫টিতে, ৩৫২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১১৩টিতে এবং ১৭৮টি মাদ্রাসার মধ্যে ১৬৮টিতেই কোনো শহীদ মিনার নেই। ফলে শিক্ষা অফিসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জেলার ১ হাজার ৩৫২টি প্রাথমিক-মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও দাখিল মাদ্রাসার মধ্যে ৭১৩টিতেই কোনো শহীদ মিনার নেই।

তবে এই হিসাবের বাইরে এনজিও পরিচালিত প্রাথমিক শিক্ষালয়, ইবতেদায়ি মাদ্রাসা ও কিন্ডারগার্টেনগুলো না থাকায় বাস্তবে শহীদ মিনার না থাকা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কয়েক হাজার ছাড়াতে পারে। জেলা প্রাথমিক ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়ের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গাজীপুরে ইবতেদায়ি মাদ্রাসা রয়েছে ১৬৭টি, এনজিও পরিচালিত প্রাথমিক শিক্ষালয় ৩৪৪টি ও কিন্ডারগার্টেন রয়েছে ২ হাজার ৪০৬টি।

গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোফাজ্জল হোসেন বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণে কোনো সরকারি বরাদ্দ নেই। তবে স্থানীয়ভাবে প্রতিষ্ঠানগুলোর কমিটি কিংবা জেলা পরিষদের উদ্যোগে কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রেবেকা সুলতানা বলেন, যেসব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই, সেগুলোতে শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে যশোর জেলা শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে- জেলার আট উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক, মাধ্যমিক, মাদরাসা ও কলেজ রয়েছে এক হাজার ৯০০। এরমধ্যে সাড়ে ৬০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনো শহিদ মিনার নেই। সদর উপজেলায় ৪০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭৭টিতে, বাঘারপাড়া উপজেলায় ১৯৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৫টিতে, অভয়নগর উপজেলায় ২১৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮৬টিতে, ঝিকরগাছা উপজেলাতে ২২৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮৪টিতে, চৌগাছার ১৯৯টির মধ্যে ৫০টিতে, মণিরামপুর উপজেলার ৪৭১টির মধ্যে ১৩৮টিতে, শার্শা উপজেলার ২০৩টির মধ্যে ৬১টিতে এবং কেশবপুর উপজেলায় ২৯৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮০টিতে কোনো শহিদ মিনার নেই।

ফলে, একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ভাষা শহীদদের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা জানাতে পারছে না। সারাদেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দিনটি পালনের নির্দেশনা থাকলেও হাতেগোনা কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কলাগাছ, কাপড় ও বাঁশের কঞ্চি দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করে পালন করে দিবসটি।

যশোর সদর উপজেলার দত্তপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার বলে, আমাদের স্কুলে শহিদ মিনার না থাকায় একুশে ফেব্রুয়ারির দিনে ভাষা শহীদদের আমরা শ্রদ্ধা জানাতে পারি না।

যশোর জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) শাম্মী ইসলাম জানান, অনেক বিদ্যালয়ে জায়গার সংকটে শহিদ মিনার নির্মাণ করা যায় না। যেসব বিদ্যালয়ে শহিদ মিনার নেই; তাদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা পাশের কোনো বিদ্যালয়ের শহিদ মিনারে গিয়ে শ্রদ্ধা জানান। তবে জেলার সব বিদ্যালয়ে শহিদ মিনার নির্মাণ করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে।