১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৯:৫৫

শিশুদের মানহীন বই

  © সংগৃহীত

শিশুদের বই পাঠে আগ্রহী করে তুলতে বইমেলায় শিশুচত্বর করা হয়। শিশুদের বই কেনা নির্বিঘ্ন করতে তাদের বইমেলায় গতিবিধি স্বাচ্ছন্দ্য এনে দিতে শিশুপ্রহর ঘোষণা করা হয়। ঢাকঢোল পিটিয়ে এত আয়োজন করা হলেও মূল জিনিস যে বই সেদিকে নজর নেই কারো। অজস্র ভুলে ভরা বইয়ে ছেয়ে আছে বইমেলা। সেসব দেখার কেউ নেই। বিশেষ করে শিশুচত্বরে যেসব স্টল স্থান পায় সেখানকার বেশিরভাগ স্টলের বইয়েই ভুল বেশি। অযত্ন আর ভুলে ভরা সেসব বই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন শিশুরা। মা-বাবারাও না দেখে, বুঝে সেসব বই তুলে দিচ্ছেন শিশুদের হাতে। তবে বাংলা একাডেমি আর বইমেলা কমিটি কোনো বাছবিচার করেই এদের প্রতিবছর নিয়মিতভাবে স্টল বরাদ্দ দিয়ে যাচ্ছে। কোনো রকম জবাবদিহিতা নেই তাদের। প্রকাশনা মানসম্পন্ন না হলেও তারা অলৌকিক কারণে বারবার স্টল বরাদ্দ পাচ্ছেন।

শিশু চত্বর ঘুরে দেখা যায় এখানকার স্টলগুলোতে অজস্র ভুলে ভরা বই। শিশুর মনস্তত্ব বুঝে যত্ন নিয়ে লেখাও খুব কম। উত্কট রং ব্যবহার, চড়া দাগের ইলাস্ট্রেশনে সেসব বই। বানান ভুল, ছড়ায় ছন্দ ভুল তো রয়েছেই। কিন্তু প্রায় অশিক্ষিত লেখকরা যেসব কথা ছড়ায় তুলে ধরেন সেসব ভয়াবহ বিষয়।

এই চত্বরের কিশোর ভুবন, শিশু সাহিত্য বইঘর, ছোটোদের বই—এসব প্রতিষ্ঠানের প্রকাশনার মান খুব নিম্নমানের। এর তুলনায় শব্দশিল্প, শৈশব প্রকাশ, পাতাবাহার, পিপিএমসি এদের বই তুলনামূলক ভালো।

এ বিষয়ে কথাসাহিত্যিক ও মনোবিদ মোহিত কামাল বলেন, শিশুরা কোনটা ভুল বা ঠিক সেটা জানে না। তাই ভুল শিক্ষা হলে সেটা সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হবে।

মানসম্পন্ন বই নেই, প্রকাশক না তারপরেও কেন প্রতিবছর এসব প্রতিষ্ঠান স্টল বরাদ্দ পাচ্ছে—এমন প্রশ্নের জবাবে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ বলেন, এ ধরনের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করতে টাস্কফোর্স মেলা পরিদর্শন করবে। আগামীতে তাদের স্টল বরাদ্দ দেওয়া হবে না।

মেলায় প্রকাশিত হওয়া জনপ্রিয় লেখকদের বইগুলোর মধ্যে রয়েছে মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘ছোট একটা নেংটি ইঁদুর’ (অনুপম প্রকাশনী), ‘মিতু তিতুর সাবমেরিন’ (বিদ্যাপ্রকাশ) ও ‘যে রকম টুনাটুনি সে রকম ছোটাচ্চু’ (পার্ল পাবলিকেশন্স)। আনিসুল হকের কমিকস ‘গুড্ডুবুড়া’ প্রকাশ করেছে কথা প্রকাশ। তার গল্প ‘ডাকাতের কবলে গুড্ডুবুড়া’ এসেছে প্রথমায়। প্রথমা থেকে আরো আসার কথা রয়েছে ‘গুড্ডুবুড়া যেভাবে ঢাকাকে বাঁচিয়েছিল’।

এর পাশাপাশি হায়াত্ মামুদের ‘যাদুকরের ভেঁপু’ (অবসর), আনোয়ারা সৈয়দ হক ‘ছানার নানাবাড়ি’ (ঐতিহ্য), ধ্রুব এষের ‘অং বং চং’ (ইকরি মিকরি) ও ‘তনু ও ছয় দফার খাতা’ (সময় প্রকাশন), আলম তালুকদারের ‘রূপকথার আজবকথা’ (পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স), জাহীদ রেজা নূর অনূদিত রূপকথা ‘ফিনল্যারে রূপকথা’ (শিশু গ্রন্থ কুটির), মাজেদুল নয়নের কিশোর উপন্যাস ‘হাউজ টিউটর’ (পুঁথিনিলয়)।

মেলায় বই ২ হাজার ১৯৪টি

মেলায় ১৪ দিনে বই এসেছে প্রায় ২ হাজার ২০০। মোট বইয়ের প্রায় এক তৃতীয়াংশ প্রকাশিত হয়েছে কবিতার বই। এরপরেই উপন্যাসের স্থান এর সংখ্যা ৩৬৭টি। গল্পের বই রয়েছে ২৯৫টি। প্রবন্ধ ১২৩, গবেষণা ৪৩, শিশুতোষ ৯১, ছড়া ৪৬, বঙ্গবন্ধু ৭১, অনুবাদ ২৩, সায়েন্স ফিকশন ৪১ প্রভৃতি। গতকাল মেলায় নতুন বই এসেছে ২০৩টি। এরমধ্যে সাহিত্যদেশ এনেছে এ কে এম আজাদের ফটোগ্রাফি সংকলন ‘ইলিউশন অফ ডেসটিনি’, ঐতিহ্য এনেছে চৌধুরী রওশন ইসলামের ‘দৈনন্দিন গল্প’, অন্যধারা এনেছে আরিফুর রহমানের উপন্যাস দহন দিনের গান, বিদ্যা প্রকাশ এনেছে ফখরে আলমের ‘যশোরের মুক্তিযুদ্ধ’, ধ্রুব এষের সরোজিনীর ড্রয়িং, মফিদুল হকের ‘ব্যক্তিত্ব ও বাঙালি সমাজ’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

সুত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, প্রতিবেদক আসিফুর রহমান সাগর