হেফাজতের শাপলা চত্বরের ভিডিও টুইট করে বিপাকে ইমরান খান
মূল ভিডিওটি ছিল ২০১৩ সালের মে মাসে ঢাকার শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামীর নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযানের। কিন্তু পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সেটিই নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেছিলেন ‘ভারতীয় পুলিশের মুসলিম জাতি হত্যা’ হিসেবে।
ভিডিওটি যে ঢাকার, তার প্রমাণ হিসেবে দেখা যাচ্ছিল নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ঢালে পরিষ্কার লেখা 'র্যাব'। র্যাব বা র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন বাংলাদেশের একটি সুপরিচিত এলিট ফোর্স, আর এই নামে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য কোনও দেশে কোনও বাহিনীও নেই। এমন কী, ২ মিনিট ২০ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে কোনও কোনও জায়গায় র্যাবের সদস্যদের বাংলাতেও কথা বলতে শোনা যাচ্ছিল।
শুক্রবার রাতে ইমরান খান এই ভিডিও পোস্ট করার সঙ্গে সঙ্গে ভারত তাকে অভিযুক্ত করে 'ফেক নিউজ প্রচারকারী' হিসেবে। কিছুক্ষণ পরেই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ওই ভিডিও ডিলিট করে দেন, কিন্তু ততক্ষণে অনেকেই তার স্ক্রিনশট বা স্ক্রিনগ্র্যাব নিয়ে রেখেছেন।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমার ততক্ষণে ওই স্ক্রিনশট-সমেত পাল্টা টুইট করে ফেলেছেন : ‘‘ভুয়া খবর টুইট করুন। ধরা পড়ুন। টুইট ডিলিট করুন। আবার একই জিনিস করুন!’’
বছর দুয়েক আগে জাতিসংঘে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত মালিহা লোধিও কাশ্মীরে ছররা বন্দুকের গুলিতে ঘায়েল এক কিশোরীর ছবি বলে যা তুলে ধরেছিলেন, পরে দেখা গিয়েছিল তা আসলে গাজায় ২০১৪ সালে তোলা এক ফিলিস্তিনি কিশোরীর ছবি। ওই বিখ্যাত ছবিটি তুলেছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী ও বহু পুরস্কার বিজয়ী হেইদি লেভিন।
সেই বিড়ম্বনার কথা মনে করিয়ে দিয়ে জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি সৈয়দ আকবরউদ্দিন এদিন (ইমরান খানের পোস্ট করা ভিডিও প্রসঙ্গে) টুইট করেছেন 'রিপিট অফেন্ডার্স' (যারা বারবার একই অপরাধ করে)। তার পোস্ট করা হ্যাশট্যাগ 'ওল্ডহ্যাবিটসডাইহার্ড' (পুরনো অভ্যাস সহজে যায় না) ভারতে রীতিমতো ভাইরালও হয়ে উঠেছে। এই তথাকথিত ফেক ভিডিও নিয়ে পাকিস্তান সরকার বা সে দেশের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আর কোনও ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। তবে এটাও সত্যি, ভারতের বিভিন্ন জায়গায় - বিশেষ করে বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশে - নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদরত মুসলিমদের বিরুদ্ধে পুলিশ ও প্রশাসন ব্যাপক নির্যাতন চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
শুধুমাত্র উত্তরপ্রদেশেই অন্তত ১৮জন নিহত হয়েছেন, যাদের বেশির ভাগই মুসলিম। মীরাটে একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা মুসলিম বিক্ষোভকারীদের 'পাকিস্তানে চলে যান' বলে প্রকাশ্যে হুমকিও দিয়েছেন - সেই ভিডিও যথারীতি এ দশে তোলপাড় ফেলেছে।
কিন্তু ইমরান খান সে সব কিছু পোস্ট না-করে প্রায় ছবছরের পুরনো বাংলাদেশের একটি ভিডিও পোস্ট করেই বিপত্তি বাঁধিয়েছেন। আর এই ভিডিও তিনি পোস্ট করেছিলেন গতকাল ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং তাকে পাকিস্তানের ভেতরে অবস্থিত শিখদের পবিত্র তীর্থস্থান নানকানা সাহিবের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য অনুরোধ জানানোর পর।
গতকাল (শুক্রবার) খবর পাওয়া গিয়েছিল, একদল মুসলিম জনতা নানকানা সাহিব গুরদোয়ারা ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে এবং ওই তীর্থস্থান লক্ষ্য করে পাথর বা ইট-পাটকেলও ছোঁড়া হচ্ছে। এই বিক্ষোভের খবর পাকিস্তান সরকারও অস্বীকার করেনি, তবে বেশি রাতে তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে দাবি করে, ‘‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল গুরদোয়ারাতে কেউ হাত দিতে পারেনি, বা সেটির কোনও ক্ষতিও হয়নি।’’-বিবিসি বাংলা