নতুন বইয়ের ঘ্রাণে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা
- শিহাব উদ্দিন
- প্রকাশ: ০১ জানুয়ারি ২০২০, ১২:৫৯ PM , আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২০, ১২:৫৯ PM
নববর্ষের প্রথম দিনে নতুন বই হাতে পেয়ে উল্লাসে মেতেছে কোটি কোটি শিক্ষার্থী। আজ বুধবার সারা দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠ্যপুস্তক উৎসব উদ্যাপিত হচ্ছে। খালি হাতে বিদ্যালয়ে গিয়ে হাসিমুখে বাড়ি ফিরছে শিক্ষার্থীরা।
নতুন বই বুকে জড়িয়ে এর গন্ধ শুঁকে নির্মল হাসিমুখে তারা ছুটে গেছে বাড়িতে। তাদের এ অনাবিল আনন্দের সঙ্গে ভাগ বসিয়েছেন শিক্ষক-অভিভাবকরাও। ফলে দেশজুড়ে উৎসবে মেতে উঠেছে শিক্ষার্থী-অভিভাবকসহ সকলে। এ বছর প্রাক-প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে ৩৫ কোটিরও বেশি বই বিতরণ করা হবে। গত বছরের তুলনায় এবার ২০ লাখেরও বেশি বই দেয়া হচ্ছে।
এদিকে বই উৎসব উদযাপনের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় পৃথকভাবে রাজধানীতে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বুধবার সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় উৎসব হয়েছে রাজধানীর সাভারের অধরচন্দ্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেন। আর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিয়েছে। এসময় নতুন বই পেয়ে উল্লাসে মেতে ওঠেন শিক্ষার্থীরা।
এবারের বই উৎসবে ৪ কোটিরও বেশি শিশুর পাশাপাশি অভিভাবক, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও অংশ নিচ্ছে। এ বছর ৭৫০ শিক্ষার্থীকে ১১০টি বিষয়ে ৯ হাজার ৫০৪টি ব্রেইল বই বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়াও প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের নিজস্ব ভাষায় ৯৭ হাজার ৫৭২ শিক্ষার্থীর মধ্যে দুই লাখ ৩০ হাজার ১০৩টি বই দেয়া হচ্ছে।
এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, নতুন বছরে দেশের ৪ কোটি ২৭ লাখ ৫২ হাজার ১৯৮ শিক্ষার্থীর মধ্যে বিতরণ করা হবে ৩৫ কোটি ৩৯ লাখ ১৪ হাজার ১৯৭টি বই। এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিকের প্রায় ৩৩ লাখ শিক্ষার্থীকে দেয়া হবে ৬৬ লাখ ৭৫ হাজার ২৭৬টি বই। প্রাথমিকের ২ কোটি ৪ লাখ ৪১ হাজার ৫৯৫ শিক্ষার্থীকে দেয়া হবে ৯ কোটি ৮৫ লাখ ৫ হাজার ৪৮০টি বই। এছাড়া ২ কোটি ৩২ লাখ ৪৩ হাজার ৩৫টি নতুন বই মাদ্রাসার ইবতেদায়ীর প্রায় ৩৩ লাখ শিক্ষার্থীর মাঝে বিতরণ করা হবে।
সাভারে বই উৎসব উদ্বোধন করে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু বলেন, শুধুমাত্র জিপিএ-৫ এর পেছনে যাব না। আমি পড়বো আমি শিখবো আমি চেষ্টা করব। জিপিএ-৫ ছাড়া আর কোন কাজ করবো না, কোনো কর্মকাণ্ডে অংশ নেব না এরকম করা যাবে না। পরিপূর্ণ মানুষ হওয়ার ক্ষেত্রে কাজ করতে হবে। মানসম্মত শিক্ষার জন্য বহুমুখী কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। আমরা আমাদের মূল্যায়ন পদ্ধতি পরিবর্তন করছি যাতে শিক্ষার্থীর পরীক্ষার চাপ কমানো যায় এবং শিক্ষাকে আনন্দময় করে তোলা যায়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, জীবনে মানুষ হতে হবে অঙ্গীকার থাকতে হবে। জিপিএ-৫ এর চিন্তা মাথা থেকে ফেলে দিতে হবে। বইয়ের কনসেপ্ট বুঝে পড়তে হবে। জীবনে কোন পেশায় ছোট নয়। সব পেশাকে সম্মান করতে হবে। জীবনে অনেক কিছু করতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন। এসময় মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আয়োজিত হয় পাঠ্যপুস্তক উৎসব। এ উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তা আজ তোমাদের হাসিতে প্রস্ফুটিত। ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানিরা কখনো আমাদের শিক্ষার দিকে তাকায়নি। কিন্তু শেখ হাসিনা আমাদেরকে শিক্ষার জন্য যা যা করা দরকার তাই করছেন। কারণ আজকের তোমরাই হবে আগামীর দেশ গড়ার কারিগর।
তিনি শিক্ষার্থীদের দিকনির্দেশনা দিয়ে বলেন, ‘তোমরা মা বাবাদের সাহায্য করবে, বড়দের সম্মান করবে, ছোটদের স্নেহ করবে। শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ছেলে-মেয়েদের নিজের সন্তান মনে করবেন। আপনাদের মায়ের মত পরিশ্রম করতে হবে। তাহলেই স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন। বিশেষ অতিথি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন শিরিন আক্তার, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু, ফেরদৌস ইসলাম ও ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান।