৩১ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৯:৪৪

উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি নোয়াখালীর হাতিয়া দ্বীপে

নোয়াখালীর দক্ষিণে মেঘনার মোহনায় বঙ্গোপসাগরে কয়েকটি দ্বীপ নিয়ে গঠিত হাতিয়া উপজেলা। প্রাকৃতিকভাবে নয়নাভিরাম হলেও নানা সমস্যায় জর্জরিত দুই হাজার ১০০ বর্গ কিলোমিটারের উপজেলাটি। এখানকার বাসিন্দাদের বড় আক্ষেপ ভাঙ্গন, বিদ্যুৎ এবং যোগাযোগ সমস্যা নিয়ে।

তাদের মতে, সারাদেশের উন্নয়ন-অর্জন থেকে পিছিয়ে দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া। শিক্ষা, যোগাযোগ, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও কর্মসংস্থানেও পিছিয়ে এখানকার বাসিন্দারা। বঙ্গোপসাগরের দ্বীপটিকে পর্যটন এলাকা বলা হলেও কোনো উদ্যোগ নেই পর্যটন কর্পোরেশনের। বিশেষ করে বিদ্যুৎ এবং যোগাযোগ সমস্যার কারণে সর্বক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকতে হচ্ছে প্রায় সাত লাখ হাতিয়াবাসীকে।

এদিকে নদী ভাঙ্গনে ভিটেমাটি ও সহায়সম্বল হারিয়ে হাতিয়ার দু’লাখেরও বেশি মানুষ উদ্বাস্তুর মত মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, হাতিয়ায় গড়ে প্রতি বছর এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৫০০ পরিবার সর্বস্ব হারাচ্ছে। ভূমিহীন এ মানুষগুলো বেড়ির পার্শ্বে খালের পাড়, খাস জমি, নিঝুমদ্বীপ, ঢালচর, মৌলভীরচর, বয়ারচর, নঙ্গলিয়া, নলেরচর, কেরিংচর ইত্যাদি এলাকায় মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন।

হাতিয়ার আর্থিকভাবে স্বচ্ছল পরিবারগুলো এক সময়ের ‘স্বপ্নের দ্বীপ’ ছেড়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাড়ি জমাচ্ছে। অধিবাসীদের অভিযোগ, ভাঙ্গন এবং যোগাযোগ কাঠামো দূর্বলই হচ্ছে তার একমাত্র কারণ, অন্য কিছু নয়। এই দ্বীপের সাথে মূল ভূখণ্ডের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হচ্ছে নৌ-পথ।

হাতিয়া হতে নোয়াখালী জেলা সদরে যাতায়াতের জন্য বিআইডব্লিউটিসির দু‘টি সি-ট্রাক রয়েছে। এর মধ্যে যে কোন একটি প্রায়ই অচল থাকে। অন্যটিতে তখন যাত্রীদের বসা দূরের কথা দাঁড়ানোরও জায়গা থাকে না অভিযোগ রয়েছে। এ সময় বাধ্য হয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া এবং যাত্রী হয়ে ট্রলারে নদী পারাপার হতে হয়।

হাতিয়া নোয়াখালী রুটে রয়েছে যাত্রীবাহী অবৈধ ট্রলারের দৌরাত্ম্য। ফিটনেসবিহীন ট্রলারে যাতায়াত করতে যাত্রী সাধারণকে বিভিন্ন কৌশলে বাধ্য করা হয়। এ যাবত অনেকগুলো ট্রলার দুর্ঘটনায় ব্যাপক যানমালের ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার পরও উন্নত জলযানের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই এ পথে। জোয়ারভাটার উপর নির্ভরশীলতা হাতিয়ায় যাত্রীদের দুঃখ।

জানা গেছে, বর্ষাকালে হাতিয়ার নদী থাকে অশান্ত আর উত্তাল ঢেউ। একটু বাতাস হলে পাহাড়সম ঢেউ আছড়ে পড়ে। তখন যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সঙ্গত কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় অভাব প্রকট হয়ে ওঠে। কালোবাজারি ও একশ্রেণীর সুবিধাবাদী ব্যবসায়ী তখন দ্রব্যসামগ্রীর দাম দ্বিগুণ-তিনগুণ করে ফেলেন।

যাতায়াত সমস্যায় বিনা চিকিৎসায় জটিল রোগী এবং প্রসূতি মায়েরা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন বলেও জানিয়েছেন স্থানীয়রা। হাতিয়া নৌ-ঘাটগুলোতে পল্টুন নেই। অথচ পল্টুনের নামে চাঁদা আদায় হচ্ছে। হাতিয়ার অভ্যন্তরীণ রাস্তাঘাটের কিছুটা উন্নতি হলেও নৌ-পথে নিঝুমদ্বীপ, ঢালচর, মৌলভীর চর, রামগতি, নলেরচর ইত্যাদিতে ফিটনেসবিহীন নৌকা এবং ট্রলারই একমাত্র মাধ্যম।

নিঝুম দ্বীপের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থাও নাঁজুক। হাতিয়ার সাথে দেশের সরকারি ডাক যোগাযোগ, টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত। আলাপ হচ্ছিলো হাতিয়ার ওছখালী এলাকার বাসিন্দা ফরহাদ হোসেনের সঙ্গে। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, ‘আমাদের প্রধান সমস্যা ভাঙ্গন। বিদ্যুৎ থাকে না। বিদ্যুৎ সকালে দেয়, ১২টায় চলে যায়। এরপর গ্যাপ নেয়। আবার রাতে তিন ঘণ্টা থাকে। আবার চলে যায়।’

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস প্রতিনিধি সরজমিনে গিয়ে দেখেন, ওছখালী থেকে নিঝুম দ্বীপ যাওয়ার আভ্যন্তরীণ সড়কটির অবস্থা একেবারে নাজেহাল। নিঝুম দ্বীপ পর্যটন এলাকা, অথচ আভ্যন্তরীণ সড়কগুলো দিয়ে গাড়ী চলার মত উপযোগী নয়। রাস্তায় বিশাল বড় বড় গর্ত। খুব ঝুঁকিপূর্ণভাবে এই সড়কে গাড়ী চলাচল করে।

এ বিষয়ে হাতিয়া ৬ আসনের এমপি আয়েশা ফেরদাউস দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, ‘আমরা পর্যটন এলাকা নিঝুম দ্বীপের রাস্তাটি সম্পর্কে অবগত আছি। ইতিমধ্যে রাস্তাটি নির্মাণের জন্য এলজিডি বিভাগ থেকে সড়ক ও জনপদ বিভাগে স্থানান্তর করার জন্য একটি আবেদন করেছি। প্রক্রিয়াটি শেষে আগামী অর্থবছরে কাজ শুরু করতে পারবেন বলে তিনি আশা করছেন। এছাড়াও হাতিয়ার ভাঙ্গন এবং বিদ্যুৎ সমস্যা দ্রুত সমাধান করবে বলে ও জানান তিনি।