৩০ অক্টোবর ২০১৯, ১৭:৪৫

ছেলেটা তবুও কাঁদল না, কেন?

সাকিব আল হাসান

খেলার মাঠে খেলোয়াড়দের অঝোর ধারায় কান্নায় ভেঙ্গে পড়ার দৃশ্য অগণিত। হোক সেটা ক্রিকেট, কিংবা ফুটবলে। ১১ বিশ্বকাপের আগে মাশরাফির বুক ফাটা কান্না, কিংবা ১৯ বিশ্বকাপের আগে তাসকিনের কান্না, অথবা স্মিথের বাচ্চাদের মত কান্নার দৃশ্য! এসব কিছু নতুন নয়। কিন্তু এই ছেলেটিকে আমি কখনও কাঁদতে দেখিনি! ছেলেটার মন পাথরের মত শক্ত। শত বিপদেও হেসে যায় অবলীলায়! ছেলেটা ১২ এশিয়া কাপের বিষাদের রাতেও কাঁদেনি।

অথচ সেই রাতে কেঁদে কেঁদে তাঁরই জামা ভিজিয়ে দিয়েছিল মুশফিক। কিন্তু ছেলেটা তাঁর সমস্ত কান্না নখ চেপে ধরেছিল! মাঝখানে কেটে গেল কয়েক বসন্ত। ভেবেছিলাম ছেলেটা এবার অন্তত কাঁদবে। ভেবেছিলাম এবার সব বাধ ভেঙ্গে কান্নার ঢেউ আছড়ে পড়বে চোখের কোণে। নাহ ছেলেটা এবারও আমাকে হতাশ করলো। প্রেসের সামনে দাঁড়িয়ে কি নিখুঁত ভাবে কান্নাটা চেপে গেল! অথচ ছেলেটার মুখ দেখে যে কেউ বলে দিবে চোখের কোণে অশ্রু বিন্দু আসি আসি বলে স্লোগান দিচ্ছে। ছেলেটার মুখ দেখে আমার মত অনেকেই হয়তো কেঁদে দিয়েছে। কিন্তু ছেলেটা এবারও কাঁদলো না। অথচ তাঁর চেহারা দেখে বুঝা যাচ্ছিল বুকের ভেতর কি পরিমান ঝড় বয়ে যাচ্ছে। কথা বলার সময় গলা ধরে আসছিল। তবুও কাঁদলো না। উল্টো যাবার আগে শুনিয়ে গেল দৃঢ় ভাবে ফিরে আশার বাণী।

আমি ছেলেটাকে যতবার দেখি ততবার আশ্চর্য হই।

আমি যতবার তাঁর হাসি দেখি ততবার মুগ্ধ হই। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রই তখন, যখন দেখি প্রতিপক্ষের একটি উইকেটের জন্য আম্পায়ারের সামনে হাটু গেড়ে শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে আপিল করে। আমি মুগ্ধ হই তখন, যখন দেখি প্রতিপক্ষের উইকেট পতনের পর দুহাতের তর্জনী আঙুল নাড়িয়ে বুনো উল্লাসে মেতে উঠে। অথচ ছেলেটি ব্যাটিংয়ে ফিফটি কিংবা সেঞ্চুরির পর অন্য সব প্লেয়ারদের মত তেমন কোন উদযাপন করেনা। আমি অপলকে তাকিয়ে রই যখন দেখি, প্রতিপক্ষের সাথে চোখে চোখে রেখে ছেলেটা কথা বলে।

অথচ এগুলো এখন থেকে অতীত। দীর্ঘ সময়ের জন্য মাঠের সেই হাসিমুখটা দেখা যাবে না! অথচ আসছে বছরটাই আমাদের ক্রিকেটের ইতিহাসের ব্যস্ততম বছর। আসছে বছরটাতেই আমরা খেলব রেকর্ড সংখ্যক টেস্ট ম্যাচ। একবার ছেলেটা আফসোস করে বলেছিল, আমরা পর্যাপ্ত টেস্ট খেলার সুযোগ পাই না। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, যখন সেই সুযোগটা আসলো, তখন ছেলেটা আর নেই। এই ভারত সিরিজেই আমরা প্রথমবারের মত ফ্লাড লাইটের আলোয় খেলব। অথচ সেই খেলায় আমাদের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আলোকেই ছাড়া আমরা খেলতে নামব!

টেস্ট ম্যাচে একটি উইকেটের জন্য আমরা হাহাকার করবো, চাতক পাখির মত চেয়ে থাকবো, তখন আর বলা হবে না, যে সাকিব আসে না কেন? ছেলেটা একটু পাগলা টাইপের। একটা সময় ছিল যখন, ছেলেটা নিজের উইকেটের মূল্য বুঝতো না! ভুলভাল শট খেলে উইকেট বিলিয়ে দিত। যার কারণে অনেকবার সামলানোর তীরে জর্জরিত হয়েছে। ছেলেটা নিজেকে বদলে ফেললো বিশ্বকাপে। নিজেকে নতুন করে চেনালো বিশ্ব দরবারে। ঠিক তখনই দুঃসংবাদটা আসলো!

আমার বিশ্বাস আপনি ফিরবেন, এবং খুব ভালো ভাবেই ফিরবেন। আপনি আবারও আমাদের হাসাবেন, আমাদের ভাসাবেন। আমরা আবারও আপনার ডানায় ভর করে উড়তে চাই, আমরা আবারও আপনার চোখে স্বপ্ন দেখতে চাই। আমি সেদিন আপনার চোখে কান্না দেখতে চাই। ফিরে আসার কান্নায় সেদিন যেন সবকিছু ভেসে যায়। অন্তত তখন আমায় আপনি হতাশ করবেন না।

আমরা আপনাকে মিস করবো সাকিব [ক্রিকেটখোর পেজ থেকে]