ভয়ে গণমাধ্যমের সাথেও কথা বলছে না নুসরাতের পরিবার
ভয় ও শঙ্কায় দিন পার করছে মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির পরিবার। নুসরাত হত্যা মামলার রায় প্রকাশ হওয়ার পর সেই ভয় ও শঙ্কা যেন আরও জেঁকে বসেছে। আসামি ও তাদের স্বজনদের অব্যাহত হুমকি-ধমকির কারণে গণমাধ্যমের সঙ্গেও কথা বলতে চাচ্ছেন না তারা।
নুসরাতের বাড়ি সোনাগাজী পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের উত্তর চরচান্দিয়ায় গ্রামে ভয়ার্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। গণমাধ্যমকর্মীদের অনেকটা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছেন এলাকার মানুষ। দু-একজন কথা বললেও বার বার অনুরোধ করেন নাম প্রকাশ না করার জন্য।
সরেজমিনে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ২৪ অক্টোবর নুসরাত হত্যা মামলার রায় ঘোষণার পর এলাকার পরিস্থিতি অনেকটা পরিবর্তন হয়ে যায়। হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্তদের স্বজনরা এর আগে প্রকাশ্যে কথা না বললেও রায় ঘোষণার পর রাস্তা-ঘাটে প্রকাশ্যে নানা ধরণের হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছেন। হাট-বাজার ও রাস্তায় নুসরাতের স্বজনদের শুনিয়েও হুমকি স্বরুপ আসামির স্বজনরা আকার-ইঙ্গিতে হুমকি দিচ্ছেন।
স্থানীয়রা জানান, নুসরাতের বাড়ির পাশেই মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামির বাড়ি। পার্শ্ববর্তী ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, ইফতেখার উদ্দিন রানা, কামরুন নাহার মনি ও মো. শামিমের বাড়ি নুসরাতের বাড়ির আধা কিলোমিটারের মধ্যে। ফলে আসামিদের স্বজনদের সঙ্গে নানা কারণে নুসরাতের পরিবার ও স্বজনদের সাক্ষাৎ হয়ে যায়। এ সময় তারা নানা ধরণের কটূক্তি করে হুমকি-ধমকি দেন। একইভাবে সোনাগাজী পৌর শহরের তাকিয়া সড়কে আরেক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিনের বাড়ি। সেখানে অবস্থান নেয়াসহ বাজারে তার অনুসারীদের নানা ধরণের হুমকি-ধমকি দিয়ে কথা-বার্তা বলতে শুনেছেন বলে স্থানীয়রা জানান।
গত ২৪ অক্টোবর রায় ঘোষণার দিন আদালতে মাহমুদুল হাসান নোমানকে প্রকাশ্যে পুড়িয়ে মারার হুমকি দেন আসামিরা। এরপরও নানাভাবে তার কাছে বিভিন্ন ধরণের হুমকি-ধমকি আসছে।
গতকাল রোববার দুপুরে নুসরাতের বাড়িতে গিয়ে তার মা শিরিন আক্তারের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। মামলার বাদী ও নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ভয়ার্ত কণ্ঠে বলেন, আর কি বলবো। সবতো ইতোমধ্যে বলা হয়ে গেছে।
এদিকে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নুসরাতের বাড়িতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাঈন উদ্দিন আহমেদ বলেন, ৬ এপ্রিল থেকে নুসরাতের বাড়িতে একজন এসআইসহ তিন পুলিশ সদস্য তাদের নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করছেন। রায়ের পর গণমাধ্যমে নুসরাতের পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতার কাথ জানালে নিরাপত্তা দ্বিগুণ করা হয়েছে। এছাড়াও নুসরাতের বাড়ির আশপাশে একাধিক টহল পুলিশ সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন।