ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধ চান ৯০ শতাংশ মানুষ
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের মৃত্যুর পর সারাদেশের ক্যাম্পাসগুলোতে রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হবে কিনা- এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও।
যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তো ছাত্র রাজনীতি বন্ধ আছে, বুয়েট যদি মনে করে ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা দরকার তাহলে বন্ধ করে দিতে পারে, এতে আমাদের কোন আপত্তি নাই । তাই বলে সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে হবে এটার কোন যুক্তিকতা আমি দেখিনা। আমি নিজেও ছাত্র রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলাম এক সময় । এ সময় তিনি ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে ছাত্র-রাজনীতির বিভিন্ন অবদানের কথা তুলে ধরেন।
দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি থাকবে নাকি থাকবে না এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেসবুক ভিত্তিক দুটি গ্রুপে একটি মতামতভিত্তিক ফেসবুক পোল তৈরি করেন ড. মো. নাহিদ ইসলাম। তিনি পোলটি ৪টি ক্যাটাগরিতে বিভিক্ত করেন। এর মধ্যে (১) হাবিপ্রবিতে ছাত্র-শিক্ষক উভয় রাজনীতি নিষিদ্ধ হোক (২১৬ ভোট) (২) বর্তমান ছাত্র রাজনিতির ধারা পরিবর্তন হোক (৩০ ভোট) (৩) হাবিপ্রবিতে শিক্ষক রাজনীতি পুরোপুরি নিষিদ্ধ হোক (৩০ ভোট) এবং (৪) ) হাবিপ্রবিতে ছাত্র রাজনীতি পুরোপুরি নিষিদ্ধ হোক(৬ ভোট) পড়ে।
আজ দুপুর ১২ টা পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাক্তির মতামতের ওপর ভিত্তি করে তিনি একটি বার চার্ট তৈরি করে একটি ফেসবুক স্টাটাস দেন; সেখানে ৭২.৮৯% কে ছাত্র-শিক্ষক উভয় রাজনীতি নিষিদ্ধ হোক,১৪.৭% কে শুধু শিক্ষক রাজনীতি , ২.১% কে শুধু ছাত্র রাজনীতি এবং ১০.৩২% ব্যাক্তি ছাত্র রাজনীতির পক্ষে মতামত দিয়েছেন বলে দেখানো হয়েছে।
হাবিপ্রবি রাজনীতি নিয়ে এমন ইচ্ছে হঠাৎ কেন হলো এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. মো. নাহিদ ইসলাম তার দেয়া ফেসবুক স্টাটাস দেখতে বলেন। পাঠকদের জন্য হুবহু ফেসবুক স্টাটাসটি তুলে ধরা হলো- ‘‘একদল ছাত্র রাজনীতির প্রচণ্ড সাপোর্টার। তাদের মতে, এই ছাত্র রাজনীতি আমাদের বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকার দিয়েছে, স্বাধীন দেশ দিয়েছে, ৯০ দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে ইত্যাদি। অনেক বাঘা বাঘা নেতা রয়েছেন যারা ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে এসেছেন। তাই ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা মানে নেতৃত্বের গুণাবলী সম্পন্ন জাতি থেকে বঞ্চিত হওয়া।
দেশের ক্রান্তিকালে মেধাবী সন্তানদের পাশে না পাওয়ার আশংকা তাদের মনে। একদল ছাত্র রাজনীতির ঘোরবিরোধী। তাদের যুক্তির অভাব নেই। তাদের মতে ক্যাম্পাসে ছাত্র শিক্ষক রাজনীতির কারণে লেখাপড়া শিকেতে উঠেছে। রাজনীতির উদ্দেশ্য হচ্ছে নীতির আলোকে জনগণকে পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করা। তাদের মতে, যে রাজনীতি করার কারণে নীতি বর্জন করতে হচ্ছে, সেই রাজনীতি করার কি দরকার! এরা যুক্তি দিয়ে বলে, স্বাধীনতার পড়ে ছাত্র রাজনীতির ভাল তেমন কোন উদাহরণ নেই, অথচ খুন, ধর্ষন, লুটপাট, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ইত্যাদি উদাহরণ টানলে কয়েকটি সাহিত্য রচনা করা যাবে। এদের কথা, ক্যাম্পাসে আসছ লেখাপড়া করার জন্যে। লেখাপড়া কর, নীতি নৈতিকতা শেখ, রাজনীতি করতে চাইলে পাশ করার পড়ে ভোটে দাঁড়িয়ে নির্বাচন কর।
উদাহরণ স্বরূপ জাস্টিন ট্রুডো, এঞ্জেলা মার্কেল, বারাক ওবামা এদেরকে আনা হচ্ছে; প্রশ্ন ছুড়ছেন এনারা কি লেখাপড়া বাদ দিয়ে ছাত্র রাজনীতি করেই সফল দেশপ্রধান হয়েছেন? আরেক দল ছাত্র রাজনীতির মডিফাই করতে চায়। তাদের মতে দলভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ হওয়া উচিত। তবে ছাত্ররা ছাত্রদের রাজনীতি করবে। কোটা বিরোধী আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের মতন গুরুত্বপুর্ন কাজে এগিয়ে আসবে, ছাত্র সংসদ থাকবে, ইত্যাদি। আরেক দল যুক্তি দিয়ে বলছে রাজনীতি না থাকলে ছাত্র সমাজ ভেড়া হয়ে যাবে ব্যাপারটা মোটেও এমন নয়। ক্যাম্পাসে হাতে গোনা কয়েকজন পদধারী নিজেদের অস্তিত্বের জন্যে রাজনীতি করে। পেছেনের বাকি ‘জ্বি ভাই’ বলা হাজার খানেক সাধারণ শিক্ষার্থী কেউ সিটের জন্যে, কেউ ধমকের ভয়ে, কেউ মাইরের ভয়ে মিছিল মিটিংয়ে যায়। এই সব ভয় না থাকলে শুধু চা বিস্কিট খাওয়ার জন্যে কেউ মিছিলে যেত না।
ছাত্র রাজনীতির কোন নেতা ও ছাত্র রাজনীতির অভিজ্ঞতা ছাড়াই বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষার্থিরা মাঝে মাঝে সফল আন্দোলনের মাধ্যমে যৌক্তিক দাবী আদায় করে নিয়েছে, এমন নজিরও রয়েছে। শিক্ষক রাজনীতি নিয়ে অনেকেই বলছেন। বেশিরভাগের দাবী, বর্তমান শিক্ষক রাজনীতি শুধুই তেলবাজি, সাথে পদ ও টাকা কামানোর ধান্দা। অনেকেই টিককারি করে বলছেন শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ হয়ে গেলে তাদের হাতে করার মতন তেমন কোন কাজ থাকবেনা। তাঁরা সময় পার করবেন কি করে!! এই পরিস্থিতিতে গতকালকে একটা জরিপ করলাম। আমাদের ভার্সিটির দুটো গ্রুপে ছাত্র, শিক্ষক রাজনীতি নিয়ে জানতে চাইলাম। আজকে বাংলাদেশ সময় দুপুর বারোটা পর্যন্ত ফলাফল নিম্নরূপঃ প্রায় ৯০ শতাংশ ভোট পড়েছে ছাত্র শিক্ষক রাজনীতি বন্ধে। অন্যদিকে প্রায় ১০ শতাংশ ভোট প্রদানকারী বর্তমান ছাত্র রাজনীতির ধারার পরিবর্তন চায়।
ক্যাম্পাস রাজনীতির সাথে জড়িত এমন কয়েকজন ছাত্র নেতা মনে করেন, মাথা ব্যাথার জন্য মাথা কেটে ফেলতে হবে এর কোন মানে নেই। আগামীতে দেশকে নেতৃত্ব দিতে অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র রাজনীতির দরকার আছে। জাতীয় স্বার্থে শিক্ষক রাজনীতির দরকার আছে, তবে ক্যাম্পাসে শিক্ষকদের রাজনীতির নামে যারা অপরাজনীতি করে সেটার দরকার নেই।’’