১৯ আগস্ট ২০১৯, ১৮:৫৬

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে অরক্ষিত এতিম শিশুদের জীবন

অপ্রতুল বরাদ্দ, অস্বাস্থ্যকর শৌচাগার, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বসবাস, শিশুদের পাঠদানে অবহেলা, বিশুদ্ধ পানীয়জলের সংকট, পয়:নিষ্কাশনের ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকাসহ নানা সংকটে দেবিদ্বার সরকারি শিশু পরিবারের প্রায় অর্ধশত এতিম শিশুর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

জানা গেছে, উপজেলার গুনাইঘর মৌজায় তিন একর জায়গায় ১৯৯৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালিন সরকারের সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ফজলুর রহমান পটল ১০০ শয্যর এ শিশু পরিবারটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। স্থাপনের পর থেকে বিপুল পরিমান শিশু থাকলেও দিন দিন বিভিন্ন কারণে কমতে থাকে এতিম শিশুর সংখ্যা। বর্তমানে ৬৯জন এতিম শিশু বসবাস করছে ওই শিশু পরিবারে।

গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চারতলা বিশিষ্ট ভবনটির ১৬টি কক্ষের চারপাশের প্রায় দেড়শ জানালার একটি গ্লাসও আর অবশিষ্ট নেই। মরিচায় নষ্ট হয়ে পড়েছে গ্রীলও। খসে পড়েছে ছাদের পলেস্তরা। দেয়ালে বড় বড় ফাটল, অল্প ঘষাতেই প্লাস্টার খসে পড়ছে। সিঁড়ি দিয়ে উঠানামার সময় পুরো ভবনই কাঁপুনি দেয়। এতে ভয়ে আতঙ্কে থাকে শিশুরা। প্রতিটি কক্ষের দরজা, বেড ও চেয়ার-টেবিল ভাঙা। শীতের সময় কনকনে ঠান্ডা হাওয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়ে শিশুরা। কোমলমতি এসব শিশুর জন্য বৃষ্টির দিনগুলো আরও ভয়াবহ। ভাঙা দরজা-জানালা দিয়ে বৃষ্টির পানিতে একাকার হয়ে যায় প্রতিটি কক্ষ। ভবনের পাশে বর্জ্য ও ময়লা পানি নিষ্কাশনের নেই কোন ড্রেনেজ ব্যবস্থা। দীর্ঘদিনের ময়লা পানি ও বর্জ্য জমে র্দুগন্ধ ছড়ানোর পাশাপাশি বাড়ছে মশা-মাছির উপদ্রব এবং রোগ-জীবানু। শৌচাগারে যাওয়ার পথে মেঝেতে নোংরা পানি বারো মাস জমে থাকে। পুকুরের উত্তর পাশে পল্লী বিদ্যুতের দুটি খুঁটিই বিপদজ্জনকভাবে হেলে আছে। শিশু পরিবারের কর্মচারীরা হেলা পড়া খুঁটির গোড়ায় টিন ও মাটি দিয়ে কোন রকম আটকিয়ে রেখেছে। তীব্র বাতাসে যেকোন সময় খুঁটি দুটি পানিতে পড়ে ঘটতে পারে বড় বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা। অথচ এ ব্যাপারে নির্বিকার সংশ্লিষ্টরা।

দেবিদ্বারের এ শিশু পরিবারে নেই কোন পাঠাগার, বিজ্ঞানাগার, নেই পর্যাপ্ত খেলার সরঞ্জাম, কম্পিউটার ল্যাব। এতে পিছিয়ে পড়ছে কোমলমতি শিশুরা।

শিশুরা অভিযোগ করে বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে সব সময়ই আতঙ্কে থাকতে হয়। ঝড় বৃষ্টিতে বা তীব্র বাতাসে ভবনটি কাঁপুনি দেয়। শিশুরা আরও জানান, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার রান্না ও বিতরণ করা হয়। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী খাবারের মেনু ঠিক রাখা হয়না। রান্নার চাল, ডাল ও তরকারি ধোঁয়া এবং কিচেন পরিষ্কার/পরিচ্ছন্নতার কাজ করানো হয় আমাদের দিয়ে। লেখাপড়া করানোর জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক শিক্ষক থাকলেও তারা প্রায় সময়ই থাকেন অনুপস্থিত।

অন্যদিকে, শিশু পরিবারের উত্তর পাশে উপতত্ত্বাবধায়ক, সহকারি তত্ত্বাবধায়ক ও স্বাস্থ্য সহকারির দুই তলা ও একতলা বিশিষ্ট দুটি বাসভবন দীর্ঘদিন পরে আছে বেহাল অবস্থায়। ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় রাতে কেউ থাকেন না বাসভবন দুটিতে। এছাড়া শিশু পরিবারের মূল ফটকের সামনের সড়কে নেই কোন স্পীড ব্রেকার। দ্রুত গতির যানবাহনে যেকোন সময় ঘটতে পারে বড় কোন দুর্ঘটনা।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শিশু পরিবারটি অনেক সমস্যার মাঝেও জাতীয় স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে কুচকাওয়াজ এবং ডিসপ্লেতে অংশ নিয়ে প্রথম স্থান অর্জন করে আসছে। খাবার ও অন্যান্য বরাদ্দ সঠিকভাবে ব্যবহার করা উচিত। ১০০ শয্য জরার্জিন ভবনটি দ্রুত নির্মাণ করা জরুরি। পাশাপাশি শিশু পরিবারটিকে আরও আধুনিকায়ন করাও জরুরি।

দেবিদ্বার সরকারি শিশু পরিবারের উপ তত্ত্বাবধায়ক মাসুদুর রহমান জানান, আমি আজই (গত মঙ্গলবার) যোগদান করেছি। তবে শুনেছি নতুন ভবনের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। আর ভিতরের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত নিরসন করার ব্যবস্থা করা হবে।