রামিছা-রাফসানের ডাকে আর সাড়া দেবে না তাদের মা

দু’সন্তান বার বার মায়ের কাছে গিয়ে ‘মা মা ওঠো’ বলে চিৎকার করছে। কিন্তু মা তাদের ডাকে সাড়া দিচ্ছে না, দেবেও না আর। ডেঙ্গু যে মায়ের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। আদরের দু’ সন্তান রামিছা মোর্শেদ (৮) ও রাফসান মোর্শেদ (৬) বিস্ময়ভরা চোখে তাকিয়ে আছে। তাদের সামনে সাদা কাপড়ে মোড়ানো মা সৈয়দা সামিয়া আক্তার (৩২)।

সৈয়দা সামিয়া আক্তার ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে রোববার সন্ধ্যা ৭টার দিকে মারা গেছেন ঢাকায় হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। এ সময় তাকে রাখা হয়েছিল আইসিইউতে। সেখানেই না ফেরার দেশে চলে যান তিনি।

এ সময় তার সন্তানরা কাছে ছিল না। যখন ওই দুই সন্তানের সামনে মাকে হাজির করা হলো তখন তিনি মৃত। সৈয়দা সামিয়া আক্তার ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার চরমুরারদিয়া গ্রামের রিয়াজ মোর্শেদের স্ত্রী। স্বামী রিয়াজ মোর্শেদ’র পেশাগত কারণে থাকতেন ঢাকায়।

সামিয়া আক্তারের মৃতদেহ গত রাতেই নিয়ে যাওয়া হয়েছে ফরিদপুরে। আজ স্থানীয় আলীপুর গোরস্থানে বাদ যোহর তার দাফন হওয়ার কথা রয়েছে। সৈয়দা সামিয়া আক্তার ফরিদপুর পৌরসভার কুঠিবাড়ি কমলাপুরের সৈয়দ আবু সালেহ মোহাম্মদ মুছার কন্যা।

সামিয়া আক্তারের মামা মোহাম্মদ নিসারুল বাশার নিপুন জানান, পবিত্র ঈদুল আযহায় গিয়েছিলেন গ্রামের বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে আনন্দে ঈদ করতে। সেখানেই তিনি জ্বরে আক্রান্ত হন। ঈদের আগেরদিন জ্বর আসে সামিয়ার। তাকে ঈদের দিন ভর্তি করানো হয় ফরিদপুর ইসলামী ব্যাংক কমিউনিটি হাসপাতালে।

সেখানে তার অবস্থার অবনতি হওয়ার পর ফরিদপুর ডায়াবেটিক হাসপাতালে নেওয়া হয়। তারাও অবস্থার অবনতি দেখলে ভর্তি করেন উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখান থেকে ১৫ই আগস্ট স্থানান্তর করা হয় হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেই মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে হেরে যান তিনি।

জানা যায়, রোববার তার একটি ফুসফুসের এক-তৃতীয়াংশ কাজ করছিল। লিভার পুরো নষ্ট হয়ে যায়। এ সময় তার দেহে অক্সিজেনের মাত্রা ক্রমশ কমতে থাকে। রিয়াজ মোর্শেদ বলেন, আমার দুটি সন্তানকে আমি কি বলবো? ওরা যখন মায়ের কথা বলবে, ওদের সামনে বাবা হয়ে আমি কি জবাব দেবো?