নৃশংস হত্যাকান্ডে বিবেকহীন মানবিকতা

  © টিডিসি ফটো

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ নামের একটি ভূখণ্ড বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। স্বাধীনতার ৪৮ বছর শেষ হলেও প্রতিষ্ঠিত হয়নি গণতন্ত্র, ফলে প্রতিষ্ঠা পায়নি সুশাসন। যদিও মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী একটি সুশাসনের বাংলাদেশই ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের একমাত্র প্রত্যাশা। অবাক লাগে ৪৮ বছরের স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের ও বর্বর চিত্র দেখলে। রক্তনদী পেরিয়ে এসেও কি করে বিস্তার ঘটলো এই অমানবিক জনপদের! প্রত্যেকটি হত্যা-কাণ্ডই হৃদয় বিদারক। বিবেকসম্পন্ন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ হত্যা ও বিচার-বহির্ভূত হত্যায় সমর্থন দিতে পারে না। ইতিহাস থেকে আমার জানা কয়েকটা নির্মম হত্যার বর্ণনা দিচ্ছি।

শুরুতেই যার নাম আসে তিনি হলেন, স্বাধীন বাংলার স্থপতি মরহুম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও সাবেক সেনা প্রধান জিয়াউর রহমান। যাদের জনপ্রিয়তা ছিলো আকাশচুম্বী। আরো হত্যা করা হয়েছিলো জাতীয় চার নেতাকে,যাদের অবদান স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে।

কিন্তু হত্যাযজ্ঞ এখানেই থেমে থাকেনি, তারা নির্মম ভাবে হত্যা করেছিলো শাব্বির আহম্মদ, মাহফুজুল হক চৌধুরী, আসগর আলী, ডা. মিজানুর রহমান মিজান,আব্দুল আজিজ, শরীফুজ্জামান নোমানী,আব্দুল মালেক, অভিনেতা সালমান শাহ, ব্লগার রাজিব, মনসুর আহমেদ, এস এম কিবরিয়া, আহসানুল্লাহ মাস্টার, জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি, হলি আর্টিজান, ওসি সালাহউদ্দিন খান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শফিউল ইসলাম নিলন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুল ইসলাম ফারুকী, ফেনীর একরাম হত্যা, নারায়নগঞ্জের আলোচিত সাত খুন, রাজন,তনু, বিলাইছড়ি উপজেলায় আ.লীগের সভাপতি সুরেজ কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা, সুনামগঞ্জে আ.লীগ নেতা জয়নাল মিয়া এবং বিশ্বজিৎ সহ আরো নাম জানা অজানা অসংখ্য স্বাধীন বাংলাদেশের তাজা প্রাণ।

এছাড়াও হরহামেশাই অতি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পৈচাশিক হত্যাজজ্ঞের ঘটনা স্বাধীনতার স্বপ্নকে করেছে মলিন! পরিশেষে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া দুটি বীভৎস হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে লেখনীতে ইতি টানছি।

(১) ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি, আরবি প্রথম পত্রের পরীক্ষা দিতে গেলে, একদল দুর্বৃত্ত তাকে (নুসরাত জাহান রাফি) কেরোসিন জাতীয় পদার্থ ঢেলে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। দেহের শতকরা ৮০ ভাগ পুড়ে যাওয়া নুসরাতকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ বার্ন ইউনিটে নিয়ে আসা হয়। অচল হয়ে আসছিল তার হার্ট-কিডনি-ফুসফুস, ঘোরের ভিতর তিনি ‘উস্তাদ’ এর নাম নিয়েছেন বলে জানা যায়। চারদিনের জীবন যুদ্ধে নিস্তেজ হয়ে মারা যায় নুসরাত। নুসরাত জাহান রাফিকে হত্যার নির্দেশদাতা ছিলো মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলা। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ১৩ জন সংশ্লিষ্ট ছিলো।

(২) শাহ নেয়াজ রিফাত শরিফকে বরগুনার সরকারি কলেজের অসংখ্য মানুষের সামনে প্রকাশ্যে, দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে কুপিয়ে মারাত্মক ভাবে জখম করা হয়েছিল। হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানায়, রিফাতের দেহে আঘাতের বহু চিহ্ন ছিল। এর মধ্যে বুক, গলা আর মাথার আঘাত ছিল গুরুতর। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই মৃত্যু হয়েছে ওই তরুণের। রিফাতের নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডে ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। এসব বর্বরতার বিরুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা দায়সারা ধরনের। জনগণ যখন প্রতিবাদ করে তখন মিডিয়াতেও একটু হয়।

সব ঘটনা মিডিয়াও তেমনিভাবে তুলে ধরার ফুরসত পায় না, যদি সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল না হয়। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীতে যারা সুশাসনের কাজটি করার দায়িত্ব প্রধানত পালন করবেন তাদের সবার মধ্যে এখন দায়িত্বশীলতার অভাব চরমে। তা না হলে দেশে অপরাধ প্রবণতা বিকারগ্রস্ত কিছু প্রাণীর এসব বর্বরতা এমন পর্যায়ে পৌঁছতে পারত না বলে মনে করি।

শুধু পুলিশ নয়, রাষ্ট্রের দায়িত্বে থাকা সকল নাগরিক যদি নৈতিকতা ও আদর্শের সমন্বয়ে দেশ প্রেমে উজ্জীবিত হয়ে স্বাধীনতা রক্ষার অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করে, তাহলেই স্বাধীনতার স্বপ্নের বাংলাদেশ মাথা তুলে দাড়াতে বেশি সময় নেবে না। মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী ৪৮ বছরের বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের একজন হয়ে, চাইনা কোনা হত্যাকান্ড তেমনি চাইনা হত্যাকান্ডে বদলা নেবার বিচারবহির্ভূত হত্যা।

[তরুণ লেখক ও সাংবাদিক]


সর্বশেষ সংবাদ