স্কুল-কলেজ সরকারি হলেও সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
গত কয়েক বছরে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি করা হয়েছে। তবে অনেক প্রতিষ্ঠান এর সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। দুই-তিন বছরেও শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি জাতীয়করণ হয়নি বলে জানা গেছে। অপরদিকে ছাত্র-ছাত্রীদের নিকট থেকে টিউশনসহ অন্য ফি নেয়া হচ্ছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হারেই। এমনকি এ নিয়ে হয়ানিরও অভিযোগ করেছেন ভূক্তভোগীরা।
জানা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) কলেজ শাখায় এ কাজের জন্য তিনজন সহকারী পরিচালক ছিলেন। তাদের সঙ্গে আরও ৯ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা সংযুক্ত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে মাত্র ১০টি কলেজের যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। এই শাখা থেকে জানানো হয়েছে, প্রতি মাসের ১৫ এবং ৩০ তারিখের মধ্যে অন্তত ১৮টি কলেজের পদ সৃজনের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে মাউশিকে নির্দেশ দেয়া আছে। তবে কাজ শেষ হলে এর চেয়ে বেশি সংখ্যক কলেজের পদ সৃজনের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
স্কুল সরকারিকরণের দায়িত্বে থাকা মাউশির সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম টুকু বলেন, আমাদের বিলম্ব কেবল কাগজপত্র যাচাইয়ে হয়ে থাকে। তবে মন্ত্রণালয় এই কাজে খুবই তৎপর। এজন্য সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। আর কলেজ সরকারিকরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক একেএম মাসুদ বলেন, আসলে শিক্ষকের চাকরি আত্তীকরণের কাজে জটিলতার শেষ নেই। এ কাজে শিক্ষকরা আন্তরিকভাবে সহায়তা না করলে বিলম্ব হবেই। প্রতি মাসে অন্তত ৩-৪ বার চূড়ান্ত ফাইল মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর লক্ষ্যে কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।
তবে অনেক শিক্ষকের অভিযোগ, পদ সৃজনের নামে নিয়োগের মূল বিজ্ঞপ্তি, এতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি নিয়োগের চিঠি এবং স্মারক বই অনুসন্ধানের নামে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। অনেক সময় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে একাধিকবার পরিদর্শন করা হচ্ছে। ফলে তাদেরকে বাড়তি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। কারণ কিছু ক্ষেত্রে একই সংস্থা আগের টিমের পরিদর্শন প্রতিবেদনকে আমলে নিচ্ছেন না। এতে বাড়তি সময় চলে যাচ্ছে। এছাড়া শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি আত্তীকরণ না হওয়ায় এমপিও বেতনই তাদের মূল ভরসা।
এদিকে শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা বলছেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানের যে ফি হওয়ার কথা তার চেয়ে অনেক বেশি অর্থ আদায় করছে কিছু প্রতিষ্ঠান। এমনকি পাঁচ থেকে ১০ গুণ বেশি টিউশন ফি নেওয়ারও অভিযোগ করেছেন তারা। পাশাপাশি উন্নয়ন ফি, সেশন ফি, মাসিক পরীক্ষা, অর্ধবার্ষিক ও বার্ষিক পরীক্ষার নামে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করা হচ্ছে। এ অর্থ হরিলুটেরও অভিযোগ রয়েছে।
দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে স্কুল ও কলেজ সরকারি করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই ধারাবাহিকতায় ইতিমধ্যে ২৯৯ কলেজ ও ৩২৫টি স্কুল সরকারি হয়েছে। এর মধ্যে কলেজগুলোয় প্রায় ১২ হাজার এবং স্কুল পর্যায়ে প্রায় আট হাজার শিক্ষক রয়েছেন। জাতীয়করণ হওয়া কলেজের শিক্ষকদের মর্যাদা কী হবে তা নিয়ে গত বছরের ৩১ জুলাই ‘সরকারিকৃত কলেজ শিক্ষক ও কর্মচারী আত্তীকরণ বিধিমালা ২০১৮’ জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সে অনুযায়ী কাজ চললেও তার গতি খুবই ধীর বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, এ প্রক্রিয়ায় কিছুটা সময় লাগছে। তবে কাজ যাতে দ্রুত হয় সে জন্য মন্ত্রণালয় এবং মাউশির সংশ্লিষ্ট শাখায় অতিরিক্ত লোকবল নিয়োগ করা হয়েছে। যখন সেটি নির্ভুলভাবে আসছে তখন সেটি অনুমোদন হয়ে যাচ্ছে। এ কাজে তথ্য দিয়ে শিক্ষকদেরও সহায়তা অনুরোধ করেন তিনি।
সচিব বলেন, যারা এখন সরকারি বেতন পাচ্ছেন না এমপিও পাচ্ছেন এক সময়ে তাদের বেতন সমন্বয় করা হবে। সুতরাং তারা চাকরি বাবদ পয়সা কম পাচ্ছেন না। তাই কোনো অজুহাতেই বেসরকারি আমলের মতো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা যাবে না। বিষয়টি প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি সতর্ক করে দেন।
তিনি জানান, চাকরি আত্তীকরণের নানা ধাপ আছে। প্রথমত মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) থেকে প্রস্তাব আসতে হয়। এরপর সেটি মন্ত্রণালয়ে যাচাই শেষে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যায়। সেখানকার কাজ শেষ হলে অর্থ মন্ত্রণালয়ে দুই ভাগে কাজ হয়। প্রথম শ্রেণীর চাকরি হলে সেটা অনুমোদনে সচিব কমিটির বৈঠক এবং প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন লাগে।
জানা গেছে, তিন বছরেও সংশ্লিষ্টরা সরকারি করার কাজ শেষ করতে পারেননি। বারবার পরিদর্শন ও নথিপত্র চাওয়ার মাধ্যমে কাজে বিলম্ব করা হচ্ছে। কখনও নিয়োগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধির চিঠি চান কর্মকর্তারা। আবার কখনও মূল বিজ্ঞপ্তি বা স্মারক বই চান। অথচ অধ্যক্ষ পরিবর্তন হয়েছে। সবাই কাগজ সংরক্ষণ করেনি। এমন অবস্থায় অনেকেই বিপাকে পড়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সব কলেজে সমন্বিত পদ সৃজন করার অংশ হিসেবে গত বছরের ২৩ অক্টোবর ঢাকা জেলার চারটি কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের আত্তীকরণের প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরে ৭ ফেব্রুয়ারি এ নিয়ে সভা করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।