ঈদের পরেই সুখবর পাচ্ছেন নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষায় কয়েক হাজার শিক্ষক-কর্মচারী। দীর্ঘ প্রায় আট বছর ধরে বেসরকারি নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা নানাভাবে এমপিওভুক্তির জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আন্দোলনও হয়েছে কয়েকদফা। তবে এবার তাদের সেই অপেক্ষার প্রহর শেষ হতে যাচ্ছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
জানা গেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য বাছাই প্রক্রিয়া শেষ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এজন্য অর্থ বরাদ্দের প্রক্রিয়া শেষ হলে এ সুবিধা পাওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা নির্ধারণ করা হবে। আগামী ঈদুল ফিতরের পর নতুন করে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রকাশ করা হতে পারে।
বর্তমানে সারাদেশে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ২৭ হাজার ৮১০টি। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা চার লাখ ৯৬ হাজার ৩৬২ জন। অন্যদিকে একাডেমিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে পাঁচ হাজার ২৪২টি। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা ৮০ হাজার। একাডেমিক স্বীকৃতির বাইরেও আরও দুই হাজার নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে বলে জানা গেছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন এমপিওভুক্তির ঘোষণা ঈদুল ফিতরের পরে যেকোন সময় ঘোষণা হবে। তবে যখনই এ ঘোষণা আসুক না কেন, আগামী জুলাই থেকে এ সুবিধা পাবেন শিক্ষক কর্মচারীরা। অবশ্য ঈদের আগে নতুন এমপিওভুক্ত দেওয়ার ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ে তোড়জোড় শুরু করেছিল। থাকলেও নানা কারণে তা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
এর আগে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, প্রায় সাড়ে নয় হাজার আবেদনের বিপরীতে মাত্র দুই হাজার ৭০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তির জন্য চূড়ান্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে এমপিওভুক্তির জন্য বছরের পর বছর আন্দোলন করে আসা শিক্ষকরা বলছেন, দীর্ঘ দশ বছর পর এমপিওভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েও যদি তিন-চতুর্থাংশ প্রতিষ্ঠানকেই বাদ দেয়া হয়, তবে তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। এ অবস্থায় সরকারকে দাবি মানাতে শিগগিরই আলাপ আলোচনার মাধ্যমে নতুন কর্মসূচি দেয়ার পরিকল্পনার কথাও জানান তারা।
সর্বশেষ গত মার্চে শিক্ষকরা এমপিওর দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নিলে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি নিজে গিয়ে শিক্ষক প্রতিনিধিদলকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করিয়ে দেয়ার ঘোষণা দিলে রাস্তা ছেড়ে দেন শিক্ষকরা। তবে ওই ঘোষণার পর দীর্ঘ সময় পার হলেও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হয়নি শিক্ষকদের।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, নীতিমালা অনুসারে তারা দুই হাজার ৭৬২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওর জন্য তালিকাভুক্ত করেছেন। গত বছরের জুলাইয়ে এমপিওভুক্তির দাবিতে নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের অনশনের পর এমপিওর জন্য আবেদন করতে বলা হয়। যার প্রেক্ষিতে নিম্ন-মাধ্যমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, মাদ্রাসা, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ৯ হাজার ৬১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনলাইনে তাদের আবেদন জমা দেয়।
এরপর সরকারের করা নীতিমালা অনুসারে যোগ্য প্রতিষ্ঠান খুঁজে বের করতে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ভেরিফিকেশন করা হয়। মন্ত্রণালয়ের ভেরিফিকেশন অনুসারে প্রায় সাড়ে নয় হাজার প্রতিষ্ঠান আবেদন করলেও তারা মাত্র দুই হাজার ৭৬২টি যোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পেয়েছে। যেগুলো এমপিওভুক্তির শর্ত পূরণ করে।
জানা গেছে, এমপিওভুক্তির জন্য চারটি মানদন্ডের ভিত্তিতে আবেদন নেয়া হয়েছে। এই মানদন্ডগুলো হলো প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক স্বীকৃতি, শিক্ষার্থীর সংখ্যা, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এবং পরীক্ষায় পাসের হার। প্রতিটি মানদন্ডের জন্য ২৫ নম্বর রাখা হয়।
এসব মানদন্ডের ভিত্তিতে ৯ হাজার ৬১৪টির মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অধীনে স্কুল ও কলেজ ১ হাজার ৬২৯টি, কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের অধীন মাদ্রাসা ৫৫১টি এবং কারিগরি প্রতিষ্ঠান ৫৮২টি মিলে মোট ২ হাজার ৭৬২টি প্রতিষ্ঠান যোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছে। এগুলোর জন্য লাগবে মোট ১ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা।
এর মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য লাগবে প্রায় ৭২৮ কোটি টাকা। বাকি টাকা লাগবে কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের অধীনস্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য। ২০১০ সালে সর্বশেষ এক হাজার ৬২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করেছিল সরকার। এর পর থেকে সেই প্রক্রিয়া বন্ধ। এতে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৮৫ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী অপেক্ষায় রয়েছেন।
নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার বলেন, ‘অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে বিনা বেতনে চাকরি করছেন। অনেকের চাকরির বয়স আছে কয়েক বছর। এজন্য স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সবাইকে একসঙ্গে এমপিওভুক্তি করা জরুরি।’
এ বাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন সাংবাদিকদেরকে জানিয়েছেন, এমপিওভুক্তির ঘোষণা শিগগিরই আসছে। তবে ঘোষণা যখনই আসুক, জুলাই মাস থেকে তা কার্যকর হবে বলেও জানান তিনি।
আরো পড়ুন: আবেদন ৯ হাজার, এমপিওভুক্ত হচ্ছে ২ হাজার ৭৬২ প্রতিষ্ঠান