শিক্ষককে লাথি মারার ঘটনায় নিন্দার ঝড়, অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তি দাবি
পাবনার শহীদ বুলবুল সরকারী কলেজের বিসিএস ক্যাডার এক শিক্ষককে লাথি ও মারধরের ঘটনায় দেশে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া পোস্টে অনেকে অভিযুক্ত ছাত্রদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। পরীক্ষায় নকল করতে না দেওয়ায় কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি জুন্নুনের নেতৃত্বে কয়েকজন ছাত্র এই হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
হামলার সময়কার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, কলেজ গেট থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হওয়ার সময় কয়েকজন যুবক এসে অতর্কিত হামলা চালায় শিক্ষক মাসুদুর রাহমানের উপর। তাকে এলোপাথাড়ি কিল ঘুষি ও থাপ্পড় মারা হয়। ফেলে দেয়া হয় মাথার পাগড়িও। একপর্যায়ে তিনি বেরিয়ে যেতে চাইলে পেছন থেকে এসে তাকে লাথি মারে এক যুবক।
ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন, বিসিএস ক্যাডার, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, রাজনীতিবিদ, ছাত্রনেতা, শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ সবাই। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা না নেওয়া গেলে এ ধরণের অপরাধ আরও ঘটার পথ তৈরি হবে বলে তারা মনে করছেন। এজন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘একজন শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষক ক্লাসে সবসময় বলেন, যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারে না তারা নপুংশক। সত্যিই আমরা ছাত্র-শিক্ষক সবাই নপুংশক। মি: মাসুদ আমরা দু:খিত।’
আরেক অধ্যাপক আখতার হোসেন খান লিখেছেন, ‘যে কুসন্তান, জন্মদাতা পিতা-মাতাকে মারতে পারে, শিক্ষক পেটানোতো তার কাছে নস্যি।’ বিসিএস ক্যাডার শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান লিখেছেন, ‘লাথিটা মাসুদের পিঠে নয় গোটা শিক্ষক সমাজের পিঠে মারা হয়েছে। দুষ্কৃতিকারীদের দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’
আর সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পলাশ রহমান লিখেছেন, ‘পরীক্ষার হলে নকলে বাধা দেওয়ায় একজন শিক্ষককে এভাবে আক্রমন করা যায়? এই সমাজের গন্তব্য কোন দিকে? পরীক্ষায় নকল করা কি তাদের পৈতৃক অধিকার? ঘৃণা প্রকাশের ভাষা নেই। শিক্ষকদের অসম্মান করে আর যাইহোক সভ্য জাতি গঠন সম্ভব নয়। এই কুলাঙ্গারদের বিরুদ্ধে কঠিন, কঠোর এ্যকশন নিতে এত দেরী হচ্ছে কেন?’
ডক্টর জাফর সিদ্দিকী নামে এক শিক্ষক লিখেছেন, ‘একজন শিক্ষককে অপমান মানে গোটা শিক্ষক সমাজকে অপমান। একজন শিক্ষক হিসেবে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করছি এবং অনতিবিলম্বে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।’
সাংবাদিক হামিম কবির লিখেছেন, ‘নকল ধরায় শিক্ষককে চড়-থাপ্পড়-লাথি ছাত্রলীগের। এদের কিছু কি হবে? অনেকেই বলছেন, কিছুই হবে না। এদের দলীয়ভাবে উৎসাহিত করা হবে।’
কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন লিখেছেন, ‘পাবনার শহীদ বুলবুল সরকারী কলেজের শিক্ষক মো. মাসুদুর রহমান, আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী। তাকে কিভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে তা আপনারা দেখেছেন। স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা মূল অপরাধী জুন্নুন ওরফে শামসুদ্দিনকে বাদ রেখে মামলা করতে বলেছেন।
আর শিক্ষক সমিতি নিরাপত্তার কথা ভেবে মূল অপরাধীকে বাদ রেখে মামলা দিয়েছেন। আর এজাহার সেভাবেই দেওয়া হয়েছে। এই মামলা মাসুদ ভাই করেনি। গতকাল রাতে মাসুদ ভাইয়ের সাথে আমার বিস্তারিত কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন, জুন্নুন মূল অপরাধী। তার নামে কেন মামলা দেওয়া হলো না, তা আমার বোধগম্য নয়। এ বিষয়ে আমি শিক্ষকদেরকে বলেছি।
পুলিশ প্রশাসনকে অনুরোধ করবো, আপনারা মূল অপরাধীকে ধরুন। মাসুদ ভাই নিজের নিরাপত্তার খাতিরে সেই ঘটনার পর থেকে কলেজে যেতে পারেননি। প্রতিনিয়ত হুমকির মধ্যে আছেন।’
আরো পড়ুন: নকল করতে না দেয়ায় বিসিএস ক্যাডার শিক্ষকের পিঠে লাথি ছাত্রের! (ভিডিও)