১৪ মে ২০১৯, ১১:০২

কমিটি নিয়ে ছাত্রলীগের ক্ষোভের আগুন ফেসবুকে (ভিডিও)

  © ফাইল ফটো

সম্মেলনের প্রায় এক বছর পর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হলেও তা নিয়ে স্বস্তিতে নেই এর শীর্ষ নেতারা। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে চাকরিজীবী, নিষ্ক্রিয়, বিবাহিত, অছাত্র, মাদক মামলার আসামি, হত্যা মামলার আসামিসহ বিতর্কিতরা স্থান পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া যোগ্য হয়েও অনেকে কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন বলে দাবি করেছেন সাবেক অনেক নেতা।

এসব অভিযোগ তুলে ছাত্রলীগের আগের কমিটির অনেক নেতা প্রতিবাদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুককে বেছে নিয়েছেন। এমনকি সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদকদ গোলাম রাব্বানীকে একহাত নিয়েছেন। অনেক নারীনেত্রীও তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন।

ছাত্রদল ও শিবির নিয়ে কমিটি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন অনেকে। শুধু অভিযোগ তুলেই ক্ষান্ত হচ্ছেন না তারা, অনেক নেতার বিয়ের ছবিসহ অনেক ধরণের দালিলিক প্রমাণ হাজির করছেন তারা।

ছাত্রলীগের সাবেক নেতা এনায়েত হোসেন রেজা কমিটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘একভাগ শিবির-একভাগ ছাত্রদল-একভাগ বিবাহিত-একভাগ বয়সোত্তীর্ণ (২৯+), একভাগ বউ পিটিয়ে মারা সৈনিকরা পোস্ট পাইছে। সেটা সমস্যা নয়; সমস্যা হলো আশিক নামে চিকিৎসা বিজ্ঞান শাখার পদধারী একটা কর্মী পোস্ট পাইছে। ভিসির ছেলে বলে কি এলিয়েন জাদু হয়ে গেছে ?’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি বিএম লিপি আক্তার ছাত্রলীগের তদন্ত কমিটি গঠনের প্রেস বিজ্ঞপ্তি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘নাটক বাদ দিন, আপনাদের নাটক কেউ দেখতে চায়না, মারলো কারা আর তদন্ত করবে কারা? মারার নির্দেশ দিছে কারা, তদন্তের নির্দেশ দিছে কারা? ভণ্ডামি বাদ দিয়ে, যারা বিগত ৮/৯ মাস আপনাদের চামচামির করছে, যাদের কেউ চেনেনা, জীবনের প্রথম পোস্ট তাও আবার ‘Join secretary, Vice, OS’ এবং সম্পাদক দিছেন, এই কমিটি ভেঙে যোগ্য, সাংগঠনিক দক্ষ লোক যারা বিগত দিনে রাজপথে ছিলো তাদের দিয়ে কমিটি করুন। নয়তো খুব খারাপ সময় পার করতে হবে আপনাদের।’

ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা জয়নাল আবেদিন নেত্রীদের ওপর হামলার নিয়ে প্রশ্ন তুলে লিখেছেন, ‘বোনদের উপর হামলা কেন? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আন্দোলন সংগ্রামের সূতিকাগার। এখানে আমরা অভিনন্দন যেমন জানিয়েছি, তেমনি আমাদের অধিকার নিয়েও কথা বলার অধিকার রয়েছে। আর সেই অধিকার আদায়ের মিছিলে আমার বোন তিলোত্তমা সিকদার ও বি এম লিপি আক্তার এর উপর হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

আরেক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আশরাফুল ইসলাম সোহাগ লিখেছেন, ‘ছাত্রলীগ করলে যদি কোন মেয়ের চোখের কর্ণিয়া হামলায় নষ্ট হয়ে যায়, এর দায়ভার কে নেবে?’

আর হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সানী লিখেছেন, ‘মেয়েটার নাম শ্রাবণী দিশা ও রোকেয়া হল মানে আপার হল ছাত্রলীগের রানিং সেক্রেটারী। মধুর ক্যান্টিনে ওকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়েছে, যে পবিত্র মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রলীগ সিগারেট ও খায়না!হল সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক পদটা এতো সস্তা ভাবলে খুব ভুল করবেন! শ্রাবণী আমার কলিগ, আমার ছোটবোন। মারটা আমিও খেলাম। আমাদের মাফ করে দিস বোন আমার!’

এছাড়া জারিন দিয়া নামে একজন কার্যকরী সদস্য পরিচয় দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। তিনি গুরুতর অভিযোগ তুলে লিখেছেন, ‘রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং গোলাম রব্বানী ভাই আপনাদের মধু ভর্তি মেয়ে লাগে । বড় বড় প্রোগ্রামে মেয়েদের মুখ না দেখলে তো আপনাদের মন ভরতো না। শোভন ভাই আপনি একদিন আমাকে সবার সামনে বলছিলেন, কি রে চেহারা সুন্দর আছে; তো সেজে-গুজে আসতে পারো না! আমি সেজে-গুজে আসতে পারি নাই দেখে আমাকে কমিটি তে রাখলেন না?’ (সংক্ষেপিত)

সোমবার ছাত্রলীগের ৩০১ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ৬১ জন সহ-সভাপতি, ১১ জন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ১১ জন সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পেয়েছেন। এছাড়া বিষয়ভিত্তিক সব সম্পাদক এবং সহ-সম্পাদক ও উপসম্পাদকের নামও ঘোষণা করা হয়। 

যেসব পদপ্রত্যাশী পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান পাননি তারা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কমিটি ঘোষণার পরপরই তারা ঢাবি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন। সন্ধ্যার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করতে গিয়ে হামলার শিকার হন পদবঞ্চিতদের বেশ কয়েকজন। এতে আহত হন ১০ জন।

পরে আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ নিয়ে কমিটি ঘোষণার পর থেকে ঢাবি ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছে। আহতদের মধ্যে ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নারী নেত্রীও রয়েছেন।