বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট থেকে কী পেল বাংলাদেশ
২০১৮ সালের ১২ মে দিবাগত রাত ২টা ১৪ মিনিটে (১১ মে দিবাগত রাত) বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ যুক্তরাষ্ট্রের কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেণ করা হয়। ওইদিন মহাকাশ প্রযুক্তি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান স্পেস এক্সের উৎক্ষেপন করা স্যাটেলাইটটির মাধ্যমে বাংলাদেশের স্যাটেলাইট যুগে প্রবেশ করে। আগামীকাল রবিবার বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এক বছর পূর্ণ করছে।
অত্যন্ত ব্যয়বহুল স্যাটেলাইটটি এক বছরে কি সেবা দিতে পারল তা নিয়ে হিসেবে-নিকেষ করছেন অনেকে। স্যাটেলাইটটির বানিজ্যিক যাত্রা কতটুকু সফল হয়েছে- তা নিয়েও অনেকে কথা বলছেন। তবে সরকারিভাবে এটি এখন পর্যন্ত বেশ সফল বলেই জানানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, স্যাটেলাইটটির বানিজ্যিক যাত্রার শুরুতে দেশের সব টিভি চ্যানেল সেবা নেওয়ার ব্যাপারে চুক্তি করেছে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিক অনুষ্ঠানে চুক্তির কাগজ মালিকদের হাতে তুলে দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১২ মে এ অনুষ্ঠান আয়োজনের কথা থাকলেও প্রধানমন্ত্রী দেশে না থাকায় এটা পিছিয়ে ১৯ মে করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, ওইদিন দেশের সব টিভি চ্যানেল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সম্প্রচার কার্যক্রম শুরু করবে। টিভি চ্যানেলগুলো আগের দামেই এটি কেনার সুযোগ পাচ্ছে। প্রতি মেগাহার্টজ দুই হাজার ডলার হিসেবে চার থেকে ছয় মেগাহার্টজ’র জন্য আট থেকে ১২ হাজার ডলার পাওয়া যাবে।
এছাড়া ব্যাংকের এটিএম বুথ ও অনলাইনে অর্থ লেনদেন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ১৯ মে’র অনুষ্ঠানের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ডাচ বাংলা ব্যাংকের একটি বুথ স্যাটেলাইটের ব্যান্ডউইডথ ব্যাবহার করে পরীক্ষামূলকভাবে চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে এর পরীক্ষামূলক কাজও শেষ হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সবগুলো এটিএম বুথ স্যাটেলাইটের আওতায় আনা হবে।
প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ওই অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের বহুমুখী ব্যবহারের উপর প্রদর্শনী করা হবে। অনলাইন ব্যাংকিং লেনদেনে সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার, সব টিভি চ্যানেলকে স্যাটেলাইটের আওতায় আনা, ভাসানচরে ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করার ব্যাপারগুলো প্রদর্শনীতে দেখানো হবে। এছাড়া স্যাটেলাইট থেকে কেবল টিভি দেখার সেবা ‘ডাইরেক্ট টু হোম’ বা ডিটিএইচ সেবাও নিশ্চিত করা হবে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডে’র (বিসিএসসিএল) চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ‘স্যাটেলাইট গত নভেম্বরে বুঝে পেয়েছি। এর আগে ফ্রান্সের থ্যালাস এলিনিয়া স্পেসের নিয়ন্ত্রণে ছিল। পুরো নিয়ন্ত্রণ হাতে পাওয়ার পর কিছু চুক্তি ইতিমধ্যে করেছি।’
ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ফিলিপাইন ও নেপাল ইতিমধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট থেকে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ কেনার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এছাড়া দেশের দূর্গম অঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবস্থা চালু সহজ হবে এবং সে উদ্যেগও নেওয়া হয়েছে। হাতিয়ায়ও পরীক্ষামূলকভাবে ইন্টারনেট সেবা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর করা হলে সেখানেও ইন্টারনেট যোগাযোগসহ ইন্টারনেটভিত্তিক জরুরী সেবা নিশ্চিত হবে। এরমধ্যে টেলি মেডিসিন এবং টেলি এডুকেশন সেবার মত ব্যাপারগুলো রয়েছে।
তিনি জানান, ঢাকায় বসেই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের নিয়মিত চিকিৎসা সেবা দিতে পারবেন। একইভাবে ঢাকা থেকেই রোহিঙ্গাদের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনাও সম্ভব হবে।