রাইড শেয়ারিং মেয়েদের জন্য কতটা নিরাপদ?
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০১৯, ১২:৫৪ PM , আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৯, ১২:৫৪ PM
দ্রুত গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর জন্য অনেকেই এখন অ্যাপ ভিত্তিক রাইড শেয়ারিংয়ের মোটারবাইকে করে চলাচল করেন। অনেক নারী রাইডারও ভাড়ায় মোটরবাইক চালাচ্ছেন। আবার সাধারণ রাইডারদের মোটরবাইকে করেও চলাচল করতে দেখা যায় অনেক নারীদের।
গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরে বাংলা নগর এলাকায় কাভার্ড ভ্যানের চাপায় নিহত হয় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাহমিদা হক লাবণ্য। ওই শিক্ষার্থী ভাড়ায় চালিত মোটরবাইকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছিলেন। ফাহমিদার মৃত্যুর পরই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে, নারীদের এভাবে মোটরবাইকে যাতায়াত কতটা নিরাপদ।
এ বিষয়ে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমনিতেই গণপরিবহনে নারীদের চলাচল করা নানা কারণে অনিরাপদ। আর মোটরবাইকে চলাচল আরও অনিরাপদ।
নির্দিষ্ট কোনও নিয়ম কানুন না থাকার কারণে ভাড়ায় চালিত মোটরবাইকে যাতায়াত শুধু নারীদের জন্য নয়, সকল যাত্রীদের জন্যও খুব একটা নিরাপদ নয়। কেননা, চালকদের অনেকের প্রশিক্ষণ নেই। তাছাড়া অনেকে আবার রাজধানীর সড়ক সম্পর্কে যথেষ্ট পরিচিতও নয়।
ব্র্যাকের এক গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ১৯ শতাংশ প্রাণ যায় বাস বা অন্য যানের যাত্রীদের। মোটরসাইকেল বা থ্রী হুইলার আরোহী মারা যান ১৬ শতাংশ।
১৯৯৮ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত হওয়া দুর্ঘটনা প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে সড়ক দুর্ঘটনা ইনস্টিটিউট (এআরআই) বলছে, ৯০ শতাংশ দুর্ঘটনার পেছনে অতিরিক্ত গতি ও চালকের বেপরোয়া মনোভাব দায়ী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তৌহিদুল হক বলেন, ট্র্যাফিক জ্যামের কারণে প্রথম দিকে আমরা এই ধরনের পরিবহনগুলোকে স্বাগত জানিয়েছি। পাঠাও অথবা উবারের মাধ্যমে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরামদায়কভাবে ও দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছনো সম্ভব। কিন্তু দুঃখের বিষয় এগুলো যেভাবে পরিচালিত হচ্ছে বিশেষ করে রাজধানীতে মেয়েদের পরিবহন হিসেবে আমাদের সমাজ এটাকে ওভাবে সমর্থন করেনা। পাশাপাশি রোড সেফটিরও একটি বিষয় থেকে যায়।
তিনি আরও বলেন, আমরা সম্প্রতি যে ঘটনাগুলো দেখছি তারই প্রেক্ষিতে বলতে চাই এসব পরিবহনকে অবশ্যই মনিটরিং এর মধ্যে আনতে হবে। গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এস এম সালেহ উদ্দিন বলেন, মোটরসাইকেলে চড়ে যাত্রী যাতায়াতের ব্যবস্থা এটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এটা কোনো নিরাপদ বাহন হতে পারে না। পরিবহন চালক হিসেবে তাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে হবে যেটা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই থাকে না।
দ্বিতীয়ত হচ্ছে, মহাসড়কে ১০টি মোটরসাইকেল একটি বাসের সমান জায়গা দখল করে। ১০টি মোটরসাইকেলে যাত্রী নেয় ১০ জন। আর একটি বাসে যাত্রী নেয় ৬০ জন। রাজধানীতে সড়কে জায়গার অভাব থাকা সত্ত্বেও আমরা মোটরসাইকেল দিয়ে সারা ঢাকা শহর ভরে ফেলেছি। যেখানে কিছু সংখ্যক বাস দিয়ে এই যাত্রীদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করা যায়। আমি মনে করি, মোটরসাইকেলে মেয়েদের যাতায়াতে নিরাপত্তা তো নেইই। পাশাপাশি ছেলেদের জন্যও এটা ঝুঁকিপূর্ণ। যদি সাময়িকভাবে মোটরসাইকেলকে গণপরিবহন হিসেবে রাখা হয় সে ক্ষেত্রে তাদের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নেহাল করিম মনে করেন নানা কারণেই ভাড়ায় চালিত সাধারণ বাইকে মেয়েদের যাতায়াত নিরাপদ নয়। এ কারণে তাদের দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বেশি।