বাড়তি নিরাপত্তায় কেমন কাটলো এবারের বৈশাখ?
- বিবিসি বাংলা
- প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০১৯, ০৯:২০ AM , আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৯, ০৯:২০ AM
প্রতি বছরের মতো এবারও বাংলা নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রা বেরিয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, যাতে অংশ নিয়েছে নানা সাজে সজ্জিত নারী-পুরুষ-শিশুরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মঙ্গল শোভাযাত্রার উদ্বোধনের পর শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ অসংখ্য মানুষের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে চারুকলা থেকে বের হয়ে শাহবাগ শিশুপার্ক ঘুরে এসে টিএসসি হয়ে আবার চারুকলায় গিয়ে শেষ হয় এই শোভাযাত্রা।
ঘড়িতে সকাল নয়টা বাজতেই ঢাকঢোল, ডুগডুগি আর মন্দিরার তালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে শুরু হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। তবে পুরো শোভাযাত্রার চতুর্দিকে সোয়াট, ডিবি, র্যাব, পুলিশ ও স্কাউট সদস্যদের কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী চোখে পড়ে। গতবারের মতো এবারেও শোভাযাত্রায় মুখোশ পরতে বা বেষ্টনীর বাইরে থেকে কাউকে ঢুকতে দেয়া হয়নি।
নিরাপত্তা ব্যবস্থার এই কড়াকড়ি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানান শোভাযাত্রা দেখতে আসা সাধারণ মানুষ। মঙ্গল শোভাযাত্রার পাশে ছবি তুলছিলেন সুমাইয়া তাবাসুসম। তিনি বলছেন, ‘আগে এখানে ভিড়ে দাঁড়ানো যেতোনা। এবার মানুষ অনেক কম। তার চাইতে পুলিশ অনেক বেশি। মঙ্গল শোভাযাত্রায় মানুষের চাইতে পুলিশের সংখ্যাই বেশি। মনে হচ্ছে এটা পুলিশের শোভাযাত্রা। এটা দেখেই তো ভয় লাগছে’। নাদেদজা ফাতেমা শিখা বলছেন, ‘নিরাপত্তার দরকার আছে। সেইসঙ্গে উৎসবও স্বত:স্ফূর্ত হতে হবে। কিন্তু নিরাপত্তা যেন আমাদের উৎসবের স্বত:স্ফূর্ততা, যে আনন্দ, যে উৎসব মুখরতা সেটাকে ম্লান না করে দেয়।’
তবে মানুষের এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। শোভাযাত্রার নিরাপত্তায় থাকা র্যাব-৩ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বীনা রানী দাস বলেন, নিরাপত্তা সবার আগে। ‘আমরা উৎসব করবো কিন্তু নিরাপত্তা সবার আগে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তো উৎসবই শেষ হয়ে যাবে। এখন অনেক বিদেশী অতিথিরাও আসে। কোনো ঘটনা ঘটলে তারাও আসবেনা। আমরা কারও জন্য বাধা নই। দায়িত্ব পালন করছি যাতে নির্বিঘ্নে সবাই দায়িত্ব পালন করতে পারে।’
বৈশাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
অন্যদিকে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলামের মতে মানুষ এই কড়া নিরাপত্তায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। তবে উৎসবের সত:স্ফূর্ততা বজায় রাখতে নিরাপত্তার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার কথাও জানান তিনি। ‘প্রথমে মানুষ নিরাপত্তার এই বিষয়টিকে কেউ কেউ ভিন্নভাবে নিয়েছে। তবে এখন মানুষ অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে।’ ‘‘তবে পরিস্থিতির নিরিখে আমরা বিষয়টি আরও রিভিউ করবো যেন মানুষের স্বত:স্ফূর্ততা আরও বাড়ে।’’ তবে পুলিশ যাই বলুক বাস্তবতা হলো নিরাপত্তার অতি কড়াকড়িতে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার লোকসমাগমও কম হয়েছে।
বর্ষবরণ উৎসবে সবার স্বত:স্ফূর্ত অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার এই বাড়াবাড়ি এক ধরণের বাধার সৃষ্টি করছে বলে মনে করেন চারুকলা অনুষদের ডিন এবং এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রা উপ-কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক নিসার হোসেন। তবে এই নিরাপত্তার একটি বড় অংশকে তিনি লোক দেখানো বলেও মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তা বাহিনীও বলছেন যে তারা নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছেন, তাহলে নিয়ন্ত্রণ যখন করেছেন তাহলে কিছুটা ঢিল দেন, কিছুটা ছাড় দেন আমাদের ‘
‘এটা যতোটা না নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তার চাইতে বেশি এটা লোক দেখানো। যখনই কোন কিছু দেখানো হয় তখনই সেটা বেশি বেশি হয়ে যায়। নিরাপত্তা দরকার আছে। কিন্তু এখন যেটা চলছে সেটা বাড়াবাড়ি।’ নিসার হোসেন আরও বলেন, ‘যে সংখ্যক মানুষ এসে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে, ততোটা সেবা এখানে দেয়া হয়না। এর চেয়ে কম জনবল দিয়ে আরও বেশি নিরাপত্তা নিচিত করা সম্ভব’।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ষবরণকে ঘিরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজক, সংস্কৃতি কর্মী এবং সেখানে আসা দর্শনার্থীরা মনে করেন দেশের এমন একটি জাতীয় উৎসবে নিরাপত্তা জরুরি হলেও সেটা যেন এমন পর্যায়ে না যায় যেটা সাধারণ মানুষের সত:স্ফূর্তায় বাঁধা হয়ে না দাঁড়ায়।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের এই মঙ্গল শোভাযাত্রা ইতোমধ্যেই ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। [বিবিসি বাংলা]