পোস্ট অফিসে নেই ডাক সেবা, চলছে মোবাইল সার্ভিস
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের পাশেই অবস্থিত ইউনিয়ন সাব পোস্ট অফিস। যদিও এটি সরকারি ডাকঘরের কার্যালয়, সেখানে এখন আর কোনো ডাকসেবা নেই। চলছে মোবাইল সার্ভিসিংয়ের ব্যবসা। স্থানীয়দের অভিযোগ, পোস্ট মাস্টার অবৈধভাবে ভবনটি ভাড়া দিয়েছেন রুবেল নামের এক ব্যক্তিকে, যিনি সেটিকে ব্যবহার করছেন মোবাইল সার্ভিসিং সেন্টার হিসেবে। সরকারি স্থাপনায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালিয়ে মাসে মাসে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে ভাড়া বাবদ অর্থ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, অফিসের সামনে রয়েছে একটি চিঠির বাক্স রয়েছে। এই চিঠির বাক্স দেখেই আঁচ করা যায়-এটি একটি পোস্ট অফিস। কিন্তু সেখানে দেখা গেলো, ভিন্ন চিত্র। পোস্ট অফিস ভবনের বারান্দায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বিভিন্ন মালপত্রের বস্তা। ভিতরে একটি বড় রুম। এক কোনে টেবিল-চেয়ার, তার উপরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে কিছু নথিপত্র। ড্রয়ারে ঝুলছে তালা। মেঝেতে ও টেবিলের উপর জমেছে ধুলা আর শ্যাওলা। আর বাকিটা জায়গাজুড়ে সাজানো মোবাইল ফোন, চার্জার, পাখার যন্ত্রাংশসহ ইলেকট্রনিক পণ্যের পসরা। পাশেই একটি চেয়ারে বসে আছেন দোকানদার রুবেল। তিনি একদিকে মোবাইল ঠিক করছেন, অন্যদিকে ছবি তোলার যন্ত্রপাতি মেলে রেখেছেন।
সরকারি একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে ডাক বিভাগের কার্যক্রম চলার কথা, সেখানে মোবাইল সার্ভিসিং এর কার্যক্রম চলার কারণে স্থানীয়রাও বেশ ক্ষিপ্ত। তারা জানান, পোস্ট অফিসটি দীর্ঘদিন কার্যত অচল থাকায় এখানকার ডাক যোগাযোগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি এটি ব্যক্তিগতভাবে একজনকে দোকান হিসেবে ভাড়া দিয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা নিশান আলী বলেন, পোস্ট অফিসটি যখন ব্যক্তিগত দোকান হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তখন বোঝা যায় কী অব্যবস্থা চলছে। গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র যেখানে রাখা আছে, সেখানে নেই কোনো নিরাপত্তা।
শিক্ষার্থী ইমাম হোসেন বলেন, চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নে একটিই পোস্ট অফিস আছে কিন্তু সেটিও দোকান হয়ে গেছে। বিষয়টি লজ্জাজনক। সরকারের প্রতি আমাদের আস্থা কোথায় রাখবো?
ভাড়া নেওয়া দোকানি মো. রুবেল বলেন, আমার কোন উদ্যোক্তার নিয়োগ নেই। আমাকে অফিসটি দেখাশোনা করতে বলেছেন পোস্টমাস্টার। আমি এখানে মোবাইল ঠিক করি। কোন মাসে ৪’শ কোন মাসে ৫’শ টাকা ভাড়া দেয়। পোস্টমাস্টার আমাকে এখানে বসতে দিয়েছে। তিনি বললে আমি এখান থেকে চলে যাবো।
এবিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী চর আষাড়িয়াদহ সাব পোস্ট অফিসের মাস্টার গোলাম জার্জিস বলেন, আমার এখানে কোন উদ্যোক্তা নেই। তাই এখানে একজনকে আমি কাজের জন্য বলেছি। মুলত সেই এখানে দোকান করে। তিনি আরো বলেন, তার যে কাজ, সে সেটি করছে না। সে মোবাইলের দোকান করছে। আমি তাকে কয়েক দফা অফিস ছাড়তে বলেছি, কিন্তু এখনো ছাড়ে নি। তবে দ্রুত সে এখান থেকে চলে যাবে। আর দোকান ভাড়ার টাকা থেকে আমি প্রতি মাসে ১০০ টাকা সরকারি অফিসে জমা দিই।
উত্তর অঞ্চলের পোস্টমাস্টার জেনারেল কাজী আসাদুল ইসলাম বলেন, সরকারি ভবন কোনোভাবেই ভাড়া দেওয়ার সুযোগ নেই। এটি অবৈধ। তবে উদ্যোক্তাকে দেওয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে তার নিয়োগ থাকতে হবে। তিনিও আমাদের নির্ধারিত বেশকিছু সেবা দিতে পারেন। তবে মোবাইল সার্ভিসিং এর কথা তো জানা নেই। আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি। এখনই এটির বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিচ্ছি।