ফাইটার জেট যেভাবে প্রশিক্ষণ বিমান হয়, ঢাকাতেই যে কারণে এই উড়োজাহাজ
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর এফ-৭ বিজিআই বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর একের পর এক নতুন সমীকরণ সামনে আসছে। নানা বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নেটিজেনরাও। কেউ বলছেন, ফাইটার জেট কীভাবে প্রশিক্ষণ বিমান হয়, কারো বক্তব্য— ঢাকার মত জনবহুল জায়গাতেই কেন প্রশিক্ষণ। আবার এটাও সামনে আসছে— এফ-৭ বিজিআই কি শুধুই প্রশিক্ষণ বিমান নাকি এটি যুদ্ধবিমান হিসেবেও ব্যবহৃহ হয়? সোমবারের ওই ঘটনায় ইতোমধ্যেই পাইলট তৌকির ইসলাম সাগরসহ ২২ জন নিহত হওয়ার খবর মিলেছে। মারা গেছেন স্কুলের এক শিক্ষিকাসহ বেশ কয়েকজন ক্ষুদে শিশু।
এদিকে রাজধানীতে ফাইটার জেটের প্রশিক্ষণ ইস্যুতে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন সামনে এনেছেন নেটিজেনরা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ বলছেন, কেন জনবহুল এলাকায় যুদ্ধ বিমানের প্রশিক্ষণ চালানো হয় তার জবাব দিতে হবে। এর জন্য দায়ী ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহির আওতায় আনার কথা বলেছেন তিনি। দাবি জানিয়েছেন, নিহত ও আহতদের সঠিক পরিসংখ্যান তুলে ধরার।
বিষয়টি নিয়ে বিমান বাহিনীর একাধিক সূত্রের সঙ্গে কথা বলেছে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস। তারা নিশ্চিত করেছেন, সাধারণত ফাইটার জেট নির্দিষ্ট ট্রেনিং বেইজে যাওয়ার আগে শাহজালাল এয়ারপোর্ট থেকে ফ্লাই করে বিমান বাহিনীর গোপন এয়ারস্পেসে উড্ডয়ন করে। আর ফাইটার জেট রাজধানী ঢাকায় থাকার কারণ হলো— পার্শ্ববর্তী দেশ বা কোনো বহিঃশক্তি যদি দেশে ঢুকে যায় অথবা মিশন করতে চায়; তাহলে তাদের প্রথম লক্ষ্য থাবে কেপিআই (KPI-Key Point Installations) ধ্বংস করা। সূত্রটি বলছে, ঢাকায় অবস্থিত কেপিআইগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক এবং কৌশলগত স্থাপনা ছাড়াও রয়েছে সরকারি ভবন, বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও অন্যান্য অবকাঠামো। যদি কোনো পার্শ্ববর্তী দেশ বা বহিঃশক্তি বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ বা আক্রমণের চেষ্টা করে, তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য হবে এই কেপিআইগুলো। সে হিসেবে এখানেই জেট বিমানগুলো রাখা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্ত দিয়ে ওই সূত্রটির আরও দাবি, যদি ঢাকায় এয়ারবর্ন করে বহিঃশক্তির দমন/মোকাবিলা (ইন্টারসেপ্ট) করতে হয় তাহলে সময় লাগবে ৫ মিনিটের কিছুটা বেশি, অপরদিকে যদি চট্টগ্রাম বেজেই জেট থাকে এয়ারবর্ন করে ঢাকা এসে ইন্টারসেপ্ট করতে সময় লাগবে ২০ মিনিটের বেশি। এ কারণেও ঢাকাতে এই জেটগুলো বেশি রাখা হয়।
বাংলাদেশে বিমানের এক পাইলট জানান, ঢাকায় জেটের উপস্থিতি শুধু নিরাপত্তার জন্য নয়, এটি একটি শক্তিশালী বার্তাও দেয় যে; বাংলাদেশ যেকোনো সম্ভাব্য হুমকির বিরুদ্ধে দ্রুত এবং কার্যকরভাবে সাড়া দিতে প্রস্তুত।
প্রশিক্ষণ বিমান নাকি যুদ্ধবিমান?
সূত্রের তথ্য, বাংলাদেশে দুই ধরনের যুদ্ধ বিমান রয়েছে। এক. মিগ-২৯ এবং দুই. এফ-৭ বিজিআই। মিগ-২৯ তুলনামূলকভাবে পুরোনো হলেও এটি সর্ব-আবহাওয়া (অল-ওয়েদার) অপারেশনের জন্য সক্ষম। অন্যদিকে, এফ-৭ বিজিআই নতুন প্রজন্মের বিমান, যদিও এটি শুধু দিনের আলোতে (ডেলাইট) অপারেশনের জন্য উপযুক্ত। সূত্রের তথ্য, বাংলাদেশে মিগ-২৯ এর ফ্লিট অফ ৮ আছে বলা হলেও অপারেশনাল মাত্র দু’টি। অন্যদিকে ৩৫টি এফ-৭ এর মধ্যে অপারেশনাল ৩২টি। এই দুই ধরনের এয়ারক্রাফটেই ট্রেনিং সম্পন্ন করে নির্দিষ্ট বিমানের অপারেশনাল পাইলট হন (অন্য বিমান থাকলেও কাউকে যদি এই বিমানের অপারেশনাল পাইলট হতে হয়, তাকে এই বিমানের সকল ট্রেনিং মিশন সম্পন্ন করতে হবে)।
বিমান বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, এফ-৭ বিজিআই প্রাথমিকভাবে প্রশিক্ষণ বিমান হিসেবে ক্রয় করা হলেও, যুদ্ধাবস্থায় এটি দেশের প্রধান ডেলাইট ইন্টারসেপ্টর হিসেবে কাজ করবে। এই বিমানগুলোর মাধ্যমে বিমান বাহিনীর পাইলটরা বিভিন্ন প্রশিক্ষণ মিশন সম্পন্ন করে অপারেশনাল ফাইটার পাইলট হিসেবে দক্ষতা অর্জন করেন। বিমান বাহিনীর সূত্র জানায়, যুদ্ধ মিশন ব্যতীত প্রায় সকল ফ্লাইটই প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।
যা বলছে আইএসপিআর
সোমবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইএসপিআর জানায়, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি এফটি-সেভেন বিজিআই যুদ্ধবিমান নিয়মিত প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে আজ দুপুর ১টা ৬ মিনিটে ঢাকার কুর্মিটোলায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এ কে খন্দকার ঘাঁটি থেকে উড্ডয়নের পর যান্ত্রিক ত্রুটির সম্মুখীন হয়, যার বিস্তারিত তদন্ত সাপেক্ষে জানানো হবে। এতে আরও বলা হয়, দুর্ঘটনা মোকাবেলায় এবং বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ওই বিমানের বৈমানিক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম বিমানটিকে ঘনবসতি এলাকা থেকে জনবিরল এলাকায় নিয়ে যাওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বিমানটি ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দোতলা একটি ভবনে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত হয়েছে।