০৫ মার্চ ২০২৫, ১৬:৪৩

শিক্ষার্থীদের বিদেশমুখী না হওয়ার শিক্ষাব্যবস্থা চান নতুন উপদেষ্টা

নতুন শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার  © সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের নতুন শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার বলেছেন, তিনি এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা চান যেখানে শিক্ষার্থীরা দেশের মধ্যেই তাদের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারবে এবং বিদেশমুখী হওয়ার প্রয়োজন হবে না।

বুধবার দুপুরে উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার পর সচিবালয়ে গিয়ে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব বুঝে নেন তিনি। এসময় সদ্য বিদায়ী শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সিদ্দিক জোবায়ের এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব খ ম কবিরুল ইসলাম তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান।

দায়িত্ব গ্রহণের পর সি আর আবরার বলেন, ‘অনেকেই জানতে চেয়েছেন, আমি কেমন শিক্ষা ব্যবস্থা দেখতে চাই। আমার স্বপ্ন হলো এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা দেশের মধ্যেই তাদের ভবিষ্যৎ দেখবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশে বড় পরিবর্তন এসেছে। আমরা ভাবিনি আমাদের জীবদ্দশায় এতটা মুক্তভাবে কথা বলতে পারব। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন, এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি নিজেও বলেছেন যে সামনের পথচলা সহজ হবে না।’

শিক্ষাকে সবচেয়ে শক্তিশালী সামাজিক পরিবর্তনের মাধ্যম হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শিক্ষাই বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের প্রধান শক্তি। আমি চাই আমাদের শিক্ষার্থীরা দেশেই থেকে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিক। যদিও এটি রাতারাতি সম্ভব নয়, তবে এর ভিত্তিপ্রস্তর আমরা গড়ে তুলতে চাই।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সি আর আবরার দীর্ঘদিন ধরে অভিবাসন, মানবাধিকার ও শিক্ষা নিয়ে গবেষণা করে আসছেন। তিনি রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) নির্বাহী পরিচালক এবং মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’-এর সাবেক সভাপতি। এছাড়া, তিনি গত বছর নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য গঠিত সার্চ কমিটির সদস্য ছিলেন।

সদ্য বিদায়ী শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ দায়িত্ব হস্তান্তরের সময় বলেন, ‘বাংলাদেশে অতীতে ৫-৬টি শিক্ষা কমিশন হয়েছে। কিন্তু তারা কি সমস্যার সমাধান করতে পেরেছে? কেবল কমিশন গঠন করলেই সমস্যার সমাধান হয় না, কার্যকর পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন প্রয়োজন।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনেকে জানেন না যে বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য কোনো প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা নেই। নায়েমসহ সরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো শুধুমাত্র সরকারি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়, অথচ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই সংখ্যায় বেশি। নতুন শিক্ষা কমিশন এসব বিষয় বিবেচনায় নেবে বলে আশা করি।’

শিক্ষা ব্যবস্থার বিশৃঙ্খলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কারিকুলাম উন্নত করার পর যদি প্রশিক্ষিত শিক্ষক না থাকে, তাহলে শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব নয়। শিক্ষা ব্যবস্থার অবনতি ধীরে ধীরে হয়, তাই এটি পুনর্গঠনে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা প্রয়োজন।’

সি আর আবরার দায়িত্ব নিয়ে শিক্ষা খাতের সমস্যা চিহ্নিত করে তার সমাধানে কাজ করার অঙ্গীকার করেন। তিনি বলেন, ‘শিক্ষা একটি বিশাল ক্ষেত্র এবং এটি জনগণের টাকায় পরিচালিত হয়। তাই জনগণের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা অনেক বেশি। আমি এই খাতে কার্যকর পরিবর্তন আনার চেষ্টা করব।’