‘আলেপের বিরুদ্ধে গুম করা ব্যক্তির স্ত্রীকে রোজা ভাঙিয়ে ধর্ষণের প্রমাণ মিলেছে’
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৫১ PM , আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৫১ PM

সাবেক র্যাব কর্মকর্তা ও এএসপি আলেপ উদ্দিনের বিরুদ্ধে গুম করা ব্যক্তির স্ত্রীকে ধর্ষণের তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
সাবেক এই র্যাব কর্মকর্তা আলেপ উদ্দিনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগের বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম জানান, আলেপ উদ্দিন এক ব্যক্তিকে গুম করে তার স্ত্রীকে ভয় দেখিয়ে রোজা ভাঙিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করেছেন। তিনি আরও জানান, এই কর্মকর্তা শুধু ধর্ষণই করেননি, বরং অসংখ্য মানুষকে গুম ও নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন করেছেন। তদন্ত সংস্থার কাছে এ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্যপ্রমাণ রয়েছে।
চিফ প্রসিকিউটর আরও বলেন, ভুক্তভোগীদের ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। তাদের ওপর ইলেকট্রিক শক প্রয়োগ করা হয়েছে, চোখ বেঁধে রাখা হয়েছে, উল্টো করে ঝুলিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে, এমনকি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট করাও হয়েছে। সবচেয়ে ভয়ংকর ঘটনা হলো, এক আসামিকে গুম করে রাখা অবস্থায় তার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া স্ত্রীকে স্বামীকে হত্যার ভয় দেখিয়ে রমজান মাসে রোজা ভাঙিয়ে ধর্ষণ করা হয়। তদন্ত সংস্থার কাছে এই অভিযোগের যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে।
অন্যদিকে, এদিন জুলাই-আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ দু’জনকে একদিনের রিমান্ডে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি গোলাম মোর্তজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ এই আদেশ দেন। রিমান্ডে যাওয়া অন্যজন হলেন বরিশাল রেঞ্জের সাবেক এসপি ও র্যাবের সাবেক কমান্ডার আলেপ উদ্দিন। মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ ধার্য করা হয়েছে ২৮ এপ্রিল।
গতকাল সকালে এই দু’জনসহ মোট ১০ জন আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। তাদের মধ্যে ছিলেন এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, ডিএমপির মিরপুর বিভাগের সাবেক ডিসি জসিম উদ্দিন মোল্লা, ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) শাহিদুল ইসলাম, যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান, গুলশান থানার সাবেক ওসি মাজহারুল হক, ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক পরিদর্শক আরাফাত হোসেন ও সাবেক এসপি মহিউদ্দিন ফারুকী।
প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। শুনানি শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় এপিসি ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়েছিল, পাশাপাশি মারণাস্ত্রও ব্যবহৃত হয়েছিল। সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন এ বিষয়ে একটি জবানবন্দি দিয়েছেন, তবে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এখনো জানা প্রয়োজন। হেলিকপ্টার অপারেশন কার নির্দেশনায় হয়েছিল, এতে কারা অংশ নিয়েছিল, কতটি ফ্লাইট পরিচালিত হয়েছিল এবং কী ধরনের অস্ত্র পরিবহন করা হয়েছিল—এসব বিষয় তার জানা থাকার কথা। এ কারণেই তাকে একদিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়।
এছাড়া, আরেকটি মামলায় র্যাবের সাবেক কমান্ডার ও অতিরিক্ত এসপি মহিউদ্দিন ফারুকীর বিরুদ্ধে অসংখ্য মানুষকে গুম করার অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি গুম হওয়া ব্যক্তিদের তার অফিসসহ বিভিন্ন আয়নাঘরে রেখে ভয়াবহ নির্যাতন করতেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই সমস্ত অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে এবং তদন্ত চলছে।