ফেনী শহরে চরম ভোগান্তিতে ভাড়াটেরা

শহরের ভবন বাসা
শহরের ভবন বাসা  © টিডিসি ফটো

ফেনী শহরের বাসাভাড়া বৃদ্ধি ভাড়াটিয়াদের জন্য এক অসহনীয় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন বছরের শুরুতেই বাড়ির মালিকদের পক্ষ থেকে ভাড়া বৃদ্ধির নোটিশ পেয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন শহরের হাজারো ফেনী শহরে চরম ভোগান্তিতে ভাড়াটেয়া।

পাগলা মিয়ার সড়ক (হাজরী রোড) এলাকার শিক্ষক মো. খলিলুর রহমান নতুন বছরের শুরুতেই পেলেন এক দুঃসংবাদ—আবারও বাসাভাড়া বৃদ্ধির নোটিশ। আগের ভাড়ার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও ১ হাজার টাকা। তিনি জানান, গত কয়েক বছর ধরে প্রতি বছরই ভাড়া বাড়ছে, কিন্তু আয় তেমন বাড়ছে না। ফলে সংসারের খরচ মেটানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে।

শুধু খলিলুর রহমান নন, একই সমস্যায় পড়েছেন ফেনী শহরের আরও অনেক ভাড়াটিয়া। তারা জানান, নতুন বছরের শুরুতেই বাড়িওয়ালাদের পক্ষ থেকে ভাড়া বৃদ্ধির নোটিশ তাদের জন্য বাড়তি চাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ অনুযায়ী, ফেনী জেলায় মোট জনসংখ্যা ১৬ লাখ ৪৮ হাজার ৮৯৬ জন। এর মধ্যে শহরাঞ্চলে বসবাস করেন ৪ লাখ ৮৯ হাজার ২৩০ জন। জেলার মোট পরিবারের সংখ্যা ৩ লাখ ৭৭ হাজার ১৬৪টি, যার মধ্যে শহরে রয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ২৮৭টি পরিবার। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শহরাঞ্চলে বসবাসরত পরিবারের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ভাড়া করা বাসায় বসবাস করে।

যারা ভাড়া করা বাসায় থাকেন কিন্তু অন্য কোথাও নিজস্ব বাসস্থান রয়েছে, এমন পরিবারের সংখ্যা ৫০ হাজার ৮৩৮টি। তবে যাদের নিজস্ব কোনো বাড়ি বা ফ্ল্যাট নেই এবং পুরোপুরি ভাড়া বাসার ওপর নির্ভরশীল, এমন পরিবারের সংখ্যা ৩ হাজার ১৩০টি।

আরও পড়ুন: ১ মার্চ রোজা হলে ৩৩ বছর পর দেখা মিলবে ‘বিরল’ দিনের

ফেনীর বিভিন্ন এলাকার ভাড়াটেরা জানিয়েছেন, বাড়ির মালিকরা প্রায়ই সংস্কার, কর বৃদ্ধি কিংবা বাজার পরিস্থিতির দোহাই দিয়ে বাসাভাড়া বাড়িয়ে দেন। অনেক ক্ষেত্রে বিনা নোটিশে বা খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে ভাড়া বাড়ানোর চাপ দেওয়া হয়।

পাঠানবাড়ি এলাকার ভাড়াটিয়া নাজমা বেগম বলেন, চার বছর আগে সাড়ে ৮ হাজার টাকায় বাসা ভাড়া নিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবছর বিভিন্ন অজুহাতে বাড়ির মালিক ভাড়া বাড়াতে থাকেন। এখন সেই ভাড়া দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার টাকায়। আমাদের আয় তেমন না বাড়লেও ভাড়ার চাপ ক্রমশই বেড়ে চলেছে, যা আমাদের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

উত্তর ডাক্তার পাড়া এলাকার ভাড়াটিয়া মর্জিনা আক্তার বলেন, এ বছর নতুন করে ৫০০ টাকা বাসাভাড়া বাড়ানো হয়েছে। আগে যে টাকা সংসারের খরচে ব্যয় হতো, এখন তা বাসাভাড়ায় যোগ করতে হচ্ছে।

বাসার মালিকদের মতে, বাড়তি খরচ সামলাতে বাধ্য হয়েই ভাড়া বাড়াতে হচ্ছে। তাদের দাবি, ভ্যাট, আয়কর, পৌর কর, ভূমি কর, পানির বিলসহ নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির কারণে তারা বিকল্প কোনো পথ পাচ্ছেন না।

শান্তি কোম্পানি রোডের এক বাড়ির মালিক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, দিন দিন বাজারের দ্রব্যমূল্য বাড়ছে, যার প্রভাব বাসাভাড়ার ওপরও পড়ছে। বাড়ি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের পেছনে প্রচুর টাকা খরচ হয়, যা মালিকরাই বুঝতে পারেন।

উত্তর ডাক্তার পাড়ার রিয়াজ নামের এক বাড়ির মালিক জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুর দাম যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে কর ও বিলের পরিমাণ। ফলে আমাদেরও বাসাভাড়া বাড়াতে হচ্ছে।

ফেনী পৌর প্রশাসক গোলাম মো. বাতেন জানান, পৌরসভার আইন মোতাবেক একটি ওয়ার্ড কমিটি গঠন করা হবে, যেখানে সকল শ্রেণির ব্যক্তিবর্গ অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। এই কমিটি বাসাভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য কাজ করবে এবং বাজার পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাসাভাড়া সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য বাড়িওয়ালাদের সঙ্গে আলোচনা করবে।


সর্বশেষ সংবাদ