০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২:০০

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের ৯ দফা দাবি

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের মানববন্ধন  © সৌজন্যে প্রাপ্ত

অন্তবর্তী সরকারের কাছে ৯ দফা দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন (বিএইচআরসি)। উপস্থাপিত দাবিগুলো মানবাধিকার কর্মীদের নিরাপত্তাসহ সারা দেশে ১৭ কোটি মানুষের দাবি বলে জানায় সংগঠনটি। রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন।

দাবিগুলো হলো-

১. অন্তবর্তীকালীন সরকারকে অবশ্যই পৃথক পৃথক একাধিক নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে জুলাই-অগাস্ট ২০২৪ এর গণহত্যা, মানবাধিকার কর্মী হত্যা, নিখোঁজ (গুম) এবং আহতদের নামের তালিকা তৈরি করতে হবে। নিহতদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ এবং আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করে ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে। সরকারকে অবশ্যই নির্যাতন কারীদের গ্রেফতার ও আইনে সোপর্দ করতে হবে।

২. বর্তমান জাতীয় মানবাধিকার কমিশন NHRC'কে ভেঙে, একটি উচ্চ পুনর্গঠন কমিটি গঠন পূর্বক নতুন ভাবে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের আইন প্রনোয়ন করতে হবে এবং জনবান্ধব NHRC গঠন করতে হবে। যেখানে সাধারণ মানুষ ন্যায় বিচার পাবে।

৩. NHRC কে অবশ্যই সরকারের দালালি করার কাজে নিয়োজিত করা যাবে না। NHRC কে একটি নিরপেক্ষ ও স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে রূপ দিতে হবে। দেশের প্রকৃত ও সিনিয়র মানবাধিকার কর্মীদের NHRC'র সর্বস্তরের কমিটিগুলোতে সম্পৃক্ত করতে হবে।

৪. বিগত স্বৈরাচার সরকার এবং কামাল উদ্দিন বাহিনীর হাতে নির্যাতিত মানবাধিকার কর্মী যথাক্রমে নিহত, নিখোঁজ (গুম) ও আহতদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।

৫. জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সরাসরি হস্তক্ষেপে ও চাপ দিয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের ৩টি রেজিস্ট্রেশন স্থগিত রয়েছে যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। স্থগিতকৃত নিবন্ধন গুলো পুনরায় চালু করার লক্ষে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে স্থগিত রেজিস্ট্রেশন গুলো পূর্ণ বহাল করতে হবে ।

৬. স্বৈরাচার সরকারের দোসর সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং ফরমায়িশি বিচারপতি ও বিচারকদের তালিকা তৈরি করে, অবিলম্বে তাদের অপসারণ করতে হবে।

৭. মৃত্যুদণ্ড আইন বাংলাদেশে বাতিল/ রোহিত করতে হবে : পৃথিবীর প্রায় সকল উন্নত দেশে ইতিমধ্যে মৃত্যু দণ্ড আইনটি বাতিল করা হয়েছে। মৃত্যু দণ্ড আনটি মানবতাবিরোধী একটি নিষ্ঠুর আইন। বাংলাদেশের এই আইনটি বাতিল করতে হবে।

৮. যাবজ্জীবন কারাদণ্ড আইন সংশোধন করতে হবে: বাংলাদেশের ১৯৭৪ সালের আইনে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মেয়াদ ছিল ১৪ বছর। রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যে বর্তমানে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মেয়াদ ৩২ বছর করা হয়েছে। ক্ষমতাসীন প্রতিটি সরকার ও রাজনৈতিক দল তাদের প্রতিপক্ষ নেতা ও কর্মীদের কঠোর শাস্তি দেয়ার হীন উদ্দেশে পর্যায়ক্রমে এভাবে শাস্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করে। বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা সহ অন্যান্য দেশে যাবজ্জীবন শাস্তির  মেয়াদ ১৪ বছর থেকে ১৫ বছর রয়েছে।

৯. ৯০ কর্ম দিবসের মধ্যে বিচার কার্য সম্পূর্ণ করতে হবে: প্রতিটি নাগরিক ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার সংরক্ষণ করে, এটা নাগরিকের মানবাধিকার। বিনা বিচারে বছরের পর বছর কারাগারে আটক রাখা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই ৯০ দিনের মধ্যে মামলা তথ্য বিচার কার্য শেষ হয়। বাংলাদেশে বিচারকের অভাব থাকলে বিচারক আরো নিয়োগ দিতে হবে। প্রয়োজনে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ও বিচারকদের স্বল্পকালীন সময়ের জন্য নিয়োগ দিতে হবে এবং লিগ্যাল এইড কর্মকাণ্ডে অভিজ্ঞ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের বিচারকার্যে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, উপস্থাপিত এ দাবিগুলো মানবাধিকার কর্মীদের নিরাপত্তাসহ সারা দেশে ১৭ কোটি মানুষের দাবি হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এই দাবি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে মেনে নেওয়ার জোড় আহ্বান জানানো হয়। সরকার আমাদের দাবিগুলো না মানলে চার সপ্তাহ পর থেকে সারা দেশ ও বিদেশের শাখাগুলো একযুগে নিজ নিজ এলাকায় শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন, অবস্থান ধর্মঘট ও স্মারকলিপি পেশ করবে।