বাবাকে হারিয়ে মায়ের যুদ্ধে মাসুমার স্বপ্নপূরণ, তবু শঙ্কা...
মাসুমা আক্তার হিরার বয়স যখন চার বছর, তখন তার বাবা মারা যান। চার মেয়েকে নিয়ে উপার্জনক্ষম একমাত্র ব্যক্তিকে হারিয়ে পুরো পরিবার দিশেহারা হয়ে ওঠে। তখন সব ভার এসে পড়ে মাসুমার মায়ের ওপর। তার মা টিউশনি করে কোনোমতে চালান সংসার। তবু মেয়ের পড়াশোনার প্রতি সনজর ছিল মায়ের।
মাসুমাও পণ করেন ভালো লেখাপড়া করে মায়ের উপযুক্ত প্রতিদান দেবেন। সে লক্ষ্যে অভাব-অনটন আর দারিদ্র্যকে পাশ কাটিয়ে নিজের আত্মবিশ্বাস দিয়ে জয় করলেন স্বপ্ন। এবার মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন মাসুমা। এমন খবরে খুশি পুরো পরিবার। কিন্তু তবু শঙ্কা যেন পিছু ছাড়ছে না। নতুন করে পড়াশোনার খরচের দুশ্চিন্তা বেড়েছে তার মায়ের।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সালান্দর ইউনিয়নের বরুনাগাঁও গ্রামের রহিমা খাতুনের মেয়ে মাসুমা। চার বোনের মধ্যে তৃতীয়। পঞ্চগড়ের রহিমুন্নেসা দাখিল মাদ্রাসা থেকে দাখিলে জিপিএ-৫ ও ঠাকুরগাঁও সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে এবার ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন যশোর মেডিকেল কলেজে।
স্বামী হারানোর পর চার মেয়েকে নিয়ে জীবনযুদ্ধে নামেন মাসুমার মা। অভাব-অনটন আর ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে চালিয়েছেন জীবন। মায়ের স্বপ্ন পূরণে নিজেও টিউশনি করতেন মাসুমা। হার না মেনে মা-মেয়ের এমন সফলতায় খুশি প্রতিবেশী ও স্বজনরা।
আরও পড়ুন : যে কারণে সরকারকে কড়া বার্তা দিলেন হাসনাত আব্দুল্লাহ
এদিকে মাসুমাকে সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে দিতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার আহ্বান এলাকাবাসীর।
মাসুমার চাচা হযরত আলী বলেন, মাসুমার কৃতিত্বে তারা সবাই বিস্মিত। অনেক কষ্ট করেছে মেয়েটি। পড়ালেখার খরচ চালানো অনেক কষ্টের ছিল। তারপরও হার মানেনি মাসুমা। তাদের বংশের নাম উজ্জ্বল করবে, এটাই তাদের প্রত্যাশা। এখন তার পড়ালেখার খরচ চালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি যদি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দেখে, তাহলে ভালো হয়।
প্রতিবেশী আসিক ইসলাম বলেন, মাসুমার পরিবার অনেক কষ্ট করে চলে। তাদের বাড়িতে পুরুষ মানুষ নেই। তার মা কষ্ট করে পরিবারের খরচ চালিয়েছেন, মেয়েদের লেখাপড়া চালিয়েছে। মাসুমা গোবরে পদ্মফুলের মতোই। তার সফলতায় সবাই আনন্দিত।
মেডিকেলে চান্স পাওয়া মাসুমা আক্তার হিরা বলেন, বাবা মারা যাওয়ার পর পুরুষবিহীন পরিবারকে নিয়ে নানা কথা বলেছে অনেকে। মায়ের লালিত স্বপ্ন বুকে নিয়ে পথ চলেছি। পড়ার টেবিলে সবসময় রাখতাম ডাক্তারের স্টেথোস্কোপ ও অ্যাপ্রোন। পড়াশোনা চালিয়ে নিতে পরিবারের পাশে থেকেছেন শিক্ষকরাও। মায়ের স্বপ্ন পূরণ করে মানবিক ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন আমার।
মাসুমার মা রহিমা আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পরে পরিবারের হাল ধরেছি। টিউশনের উপার্জনে পরিবারের খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হয়েছে। মেয়ের প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করতে পারি নাই কখনো। তবে আশা ছিল মেয়ে ডাক্তার হবে। সব বাধা পেরিয়ে মেয়ে মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগও চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মেয়ের স্বপ্ন পূরণে সরকার পাশে থাকলে আমার মেয়ে একদিন মানবিক ডাক্তার হয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবে।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা মাসুমার পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে বলেন, জেলা প্রশাসন মেধাবী শিক্ষার্থীদের পাশে সব সময় ছিল ও থাকবে। আমরা মাসুমার ভর্তির বিষয়ে সহযোগিতা করব। সেই সঙ্গে তার সব বিষয়ে খোঁজখবর রাখব।