১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:৩২

জুলাই গণহত্যা চিত্রের ফরেনসিক অনুসন্ধানের পেছনের গল্প

জুলাই গণহত্যা চিত্রের ফরেনসিক অনুসন্ধানের পেছনের গল্প
জুলাই আন্দোলন। ইনসেটে সাবহানাজ রশিদ দিয়া  © ফাইল ফটো

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচুর ভিডিও ভাইরাল হলেও সেগুলোর সোর্স নিশ্চিত করা বা ফরেনসিক যাচাই করা জটিল ছিল বলে জানিয়েছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং পলিসি ফেলো সাবহানাজ রশিদ দিয়া। শনিবার (১৮ জানুয়ারি) নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে দীর্ঘ পোস্টে তিনি এ তথ্য জানিয়েছেন। এতে তিনি কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় আন্তর্জাতিক মানের ডকুমেন্টেশন ও প্রমাণ সংগ্রহের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন।

দিয়া বলেন, জুলাইয়ের শুরুতে কোটা আন্দোলন যখন জোরালো হচ্ছিল, তখন এক বন্ধুর সঙ্গে আলাপ করছিলাম, কীভাবে এ আন্দোলন ডকুমেন্ট করা যায়। তখনও আবু সাইদ জীবিত ছিলেন। তবে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের নির্যাতন এবং সরকারদলীয় নানা মন্তব্য প্রমাণ হিসেবে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন ছিল।

স্ট্যাটাসে তিনি আরও বলেন, জুলাই মাসের মাঝামাঝি তিনি আন্তর্জাতিক ট্রুথ অ্যান্ড জাস্টিস প্রজেক্টের (আইটিজেপি) সঙ্গে যোগাযোগ করেন। শ্রীলঙ্কা, ফিলিস্তিন এবং সিরিয়ার যুদ্ধাপরাধ নথিবদ্ধ করা অভিজ্ঞ এই সংগঠনের সহায়তায় বাংলাদেশে আন্দোলনের ঘটনাগুলো আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে নথিভুক্ত করার কাজ শুরু হয়।  

তিনি বলেন, প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল ভেরিফাইয়েবল ভিডিও সংগ্রহ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচুর ভিডিও ভাইরাল হলেও সেগুলোর সোর্স নিশ্চিত করা বা ফরেনসিক যাচাই করা ছিল জটিল। আন্তর্জাতিক ক্রিমিনাল প্রসিডিউরে ভাইরাল ভিডিও সহজে গ্রহণযোগ্য হয় না। এগুলোকে প্রায়শই ম্যানিপুলেটেড হিসেবে ধরা হয়। 

দিয়া জানান, ফরেনসিক এনালাইসিসের মাধ্যমে ভিডিওর সত্যতা যাচাই এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে আর্কাইভ করার জন্য তারা বার্কলি প্রোটোকল ব্যবহার করেছেন। এজন্য বিভিন্ন দেশের পাবলিক প্রসিকিউটর এবং ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করেছেন।  

তিনি আরও বলেন, অডিও-ভিজুয়াল এভিডেন্স ফরেনসিক এনালিসিস করতে গিয়ে সূর্যের ছায়াপথ, স্যাটেলাইট ইমেজ, জিওলোকেশন, ক্রোনোলোকেশন এবং অন্যান্য ডেটার ভিত্তিতে সেকেন্ড বাই সেকেন্ড ঘটনা পুনর্গঠন করতে হয়েছে। ফিল্ম তৈরির প্রসঙ্গে সাবহানাজ জানান, বিবিসির সাবেক প্রডিউসার ক্যালাম ম্যাক্রির সহযোগিতায় আইটিজেপি, টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট এবং আউটসাইডার টিভি যৌথভাবে দুটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করেছে।  

আরো পড়ুন: আড়িপাতার চর্চা থেকে নাগরিকদের মুক্ত করতে আইনি কাঠামোর তদন্ত দরকার: সাবহানাজ 

সাবহানাজ রশিদ দিয়া বলেন, ‘এত বড় কাজ বাংলাদেশি এবং বিদেশি সাংবাদিকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল। আমরা নিশ্চিত করেছি যেন এই ডকুমেন্টেশন ভবিষ্যতে বিচার প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বাংলাদেশে তথ্য আর্কাইভিং প্রায়শই উপেক্ষিত হয়। এটি জলবায়ু পরিবর্তন বা অন্য যেকোনো বড় ইস্যুতে আমাদের দুর্বলতা প্রকাশ করে। তাই এ কাজগুলো ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

দিয়ার কথায়, ‘বিচার নিশ্চিত না হলে, এসব প্রাণহানির কোনো মূল্য থাকবে না। স্বৈরাচারীরা আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।’ তাঁর মতে, সত্য উদঘাটন এবং বিচার নিশ্চিত না করে কোনো ধরনের মীমাংসার চিন্তা সম্ভব নয়। এ ফরেনসিক অনুসন্ধান এবং প্রামাণ্যচিত্র দেখলে বোঝা যাবে কীভাবে বর্বরতা চালানো হয়েছে এবং এটি ইতিহাসের অংশ হিসেবে সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা কতটা জরুরি।