২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২৬

বিএনপির কর্মিসভায় বক্তব্য দিয়ে ওসি ভাইরাল

ওসি শেখ মাঈনুল ইসলাম  © সংগৃহীত

‘১৫ থেকে ১৬ বছর কীভাবে, কোথায় ছিলেন আপনারা আমার চেয়ে ভালো জানেন। কোথায়, কীভাবে কষ্ট করেছেন। আপনারা ঠিকমতো বাড়িতে থাকতে পারেননি। আমি পুলিশ, হয়তো আরেকজন ছিল। আমাকে বাধ্য করেছে। হয়তো আমাকে দেখে আপনারা বলছেন এ বড় বড় কথা বলে। আসলে না। আমিও ওই রকম নির্যাতিত ছিলাম। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থান না হলে আমি এখানে ওসি হতে পারতাম না। এটা আমি সব সময় বলি এবং স্বীকার করি।’

কুষ্টিয়ায় বিএনপির কর্মিসভার মঞ্চে এভাবে বক্তব্য দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছেন জেলার খোকসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মাঈনুল ইসলাম।

বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার জানিপুর সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গণে বিএনপির কর্মীসভার মঞ্চে ওসি এসব কথা বলেন। শুক্রবার রাতে সেই বক্তব্যের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তা ভাইরাল হয়। এরপর থেকেই একটি রাজনৈতিক মঞ্চে ওসির এমন বক্তব্যকে অপেশাদার বলে মন্তব্য করেছেন সাধারণ মানুষ।

২ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডের ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে ওসি শেখ মঈনুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার পর আপনারা এ পর্যন্ত আসতে পেরেছেন। ১৫-১৬ বছর পর আপনারা এক জায়গায় হতে পারছেন, সবার সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ, যে সুযোগ আসছে সামনে, সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করেন। এমন কোনো কাজ কইরেন না যে আপনাদের মধ্যে থেকে তৃতীয় পক্ষ কোনো সুযোগ নিতে পারে।’

এরপর তাকে বলতে শোনা যায়, ‘এ প্রোগ্রামটা আপনাদেরই। আমি কেন পুলিশ আসবো। তারপরও আমি আসলাম। আমার থানার সামনে, আসতে হবে। মনও চায় আসতে। মনেরও টান দেয় যে এখানে একটু কথা বলি। আসলে সব সময় তো সব কথা বলা যায় না। আমি আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ করছি, কেউ কোনো ঝামেলা করবেন না। আমরা আপনাদের সেবায় এখানে আছি। যতটুকু পারি আমাদের পক্ষ থেকে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করবো। সব হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে যান। আপনাদের মধ্যে যদি হিংসা থাকে, তাহলে তৃতীয় পক্ষ সুযোগ নেবে। এই সুযোগ আর দেওয়া যাবে না।’

যদিও ভারইরাল হওয়ার পর ওসি শেখ মঈনুল ইসলাম তার বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘বিএনপির দুই পক্ষকে থামাতে ওই মঞ্চে এমন বক্তব্য দিয়েছি। এ ছাড়া আমার অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল না।’

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বুধবার সকাল ১০টায় খোকসা উপজেলা ও পৌর বিএনপির আয়োজনে বিশেষ কর্মীসভা ছিল। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী। খোকসা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ আমজাদ আলীর সভাপতিত্বে কর্মিসভার উদ্বোধক ছিলেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কুতুব উদ্দিন আহমেদ ও প্রধান বক্তা ছিলেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার। এ ছাড়া সভার বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ সাদী, নুরুল ইসলাম আনসার প্রামাণিক ও সদস্য আলাউদ্দিন খান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন খোকসা পৌর বিএনপির সভাপতি মুন্সি এ জেড জি রশিদ।

কর্মিসভাকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই স্থানীয় দুই গ্রুপের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা ও হট্টগোল চলছিল। প্রথমে বিএনপি নেতা আলাউদ্দিন খান মঞ্চের মাইকে নেতা-কর্মীদের শান্ত থাকতে বলেন। পরে বেলা ১১টার দিকে খোকসা থানার ওসি এসে মঞ্চে উঠে মাইকে বক্তব্য দেন।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অবস) পলাশ কান্তি নাথ জানান, বিষয়টি নজরে এসেছে। কী বক্তব্য দিয়েছে, সেটা তার (ওসি) ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।