‘আশুলিয়ায় আন্দোলনে পুলিশ একজনকে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছে’
জুলাই-আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সৃষ্ট সংঘর্ষের সময় সাভারের আশুলিয়ায় গুলিতে নিহত যে ছয় শিক্ষার্থীর মরদেহ পেট্রল ঢেলে পোড়ানো হয়, তাদের মধ্যে একজন জীবিত ছিলেন বলে প্রমাণ পেয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘৫ আগস্ট আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত ছয় শিক্ষার্থীর মরদেহ পেট্রল ঢেলে পোড়ানো হয়। তাদের মধ্যে একজন জীবিত ছিল। জীবিত থাকা অবস্থায় তার গায়ে পেট্রল লাগিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।’
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সামনে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ কথা বলেন।
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রত্যক্ষদর্শীরা সাক্ষ্য দিয়েছেন যে যখন লাশগুলো পুড়ে যাচ্ছিল, তখন একটি ছেলে বেঁচে ছিল। পুলিশ তার গায়ে পেট্রোল ঢেলে তাকে দগ্ধ করা হয়।’
‘আমাদের তদন্ত সবচেয়ে নৃশংস ও বর্বরতম ঘটনার ওপর প্রাধান্য দিয়ে করা হচ্ছে। তৎকালীন সরকারের নির্দেশে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তারা চরম নির্মমতার সঙ্গে এ হত্যাযজ্ঞ করেছিল,’ বলেন তিনি।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘আমাদের তদন্ত সংস্থা তদন্ত করে জানে যে গত ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় ছয়জন ছাত্রকে ঠান্ডা মাথায় খুন করে। পরে লাশগুলোকে ভ্যানগাড়িতে একটার পর একটা রেখে ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। এরপর লাশগুলোকে আরেকটি পুলিশ ভ্যানের ওপর ছুড়ে ছুড়ে ফেলা হয়েছিল। ওই সরকারের পক্ষে সর্বোচ্চ নৃশংসতম আচরণ ছিল এটি।’
তিনি বলেন, পুলিশ ভ্যানে উঠিয়ে সেই লাশগুলোর ওপর পেট্রল ঢেলে দেওয়া হয় এবং পরে আগুন লাগানো হয়। এ ঘটনায় আমরা প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছেন, লাশগুলোকে পুড়িয়ে ফেলার জন্য আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাদের মধ্যে একজন জীবিত ছিল। জীবিত থাকা অবস্থায় তার গায়ে পেট্রল লাগিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।’
‘কী পরিমাণ নারকীয় হত্যাযজ্ঞ শেখ হাসিনা সরকারের নির্দেশে পুলিশ বাহিনী ঘটিয়েছে, এই নৃশংসতা এটা প্রমাণ করে’ বলে জানান চিফ প্রসিকিউটর।
এ হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে যে ব্যক্তি বা যারাই জড়িত ছিল, তাদের মধ্যে দুজনকে গতকাল (বুধবার) গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তার মধ্যে একজন হচ্ছে মুকুল চকদার। তাকে গ্রেফতারের জন্য আমরা আদালতে ওয়ারেন্ট চেয়েছিলাম। আদালত ওরেন্ট জারি করেছিল। সে অনুযায়ী গতকালকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় আরও একজন পুলিশ সদস্য মালেককে গতকাল কিশোরগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যেহেতু গতকাল ছুটি ছিল, এ জন্য তাৎক্ষণিকভাবে তাকে ওখানকার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়।’
মালেক এখন কিশোরগঞ্জে আটক আছেন জানিয়ে তাজুল বলেন, ‘তার মামলার নথি যথাযথভাবে ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে। তাকে এ মামলায় কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হবে। তদন্ত সংস্থা এবং প্রসিকিউশন টিম মিলে আমরা কাজ করছি। খুব দ্রুতই আমরা এ তদন্ত গুছিয়ে আনব এবং তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করব। আমরা খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বিচার প্রক্রিয়া করতে পারব।’
শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার প্রায় এক মাস পর, সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়। প্রায় দুই মিনিটের ভিডিওতে দেখা যায়, একটি ভ্যানে আংশিকভাবে ঢেকে থাকা রক্তমাখা কিছু লাশ দেখা যাচ্ছে এবং কিছু পুলিশ সদস্য ভ্যান পাহারা দিচ্ছে। লাশের হাত প্রসারিত এবং বিছানার চাদরে ঢাকা। ভ্যানের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ সদস্যদের মধ্যে দুজন পুলিশের ভেস্ট পরা ছিল এবং অন্যজন লাশ স্তূপ করতে দেখা গেছে।
ভিডিওতে ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক (তদন্ত) আরাফাত হোসেনকে নিরস্ত্র অবস্থায় হাঁটতে দেখা গেছে। ভিডিওতে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মাসুদুর রহমানকেও দেখা গেছে।