বিদ্যালয়ের নতুন-পুরোনো বই ও বেঞ্চ বিক্রি করে দেন প্রধান শিক্ষক
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায় কাঁঠালবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের ২০২৩ ও ২০২৪ সালের নতুন ও পুরনো বই এবং বেঞ্চ বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া তার এই কর্মকাণ্ড দেখে ফেলায় এক ছাত্রীকে গালাগালি করা ও টিসি ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি এবং সহকর্মীকে হয়রানির অভিযোগও উঠেছে।
এলাকাবাসী ও প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জানায়, অভিযুক্ত মাহবুবা খাতুন পান্না শিক্ষা কর্মকর্তা ও ম্যানেজিং কমিটির অনুমোদন ছাড়াই বিদ্যালয়ের বই ও মেরামতযোগ্য বেঞ্চ বিক্রি করে দিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক বলেন, পুরনো কিছু বেঞ্চ এবং ২০২৩ ও ২০২৪ সালের বই বিক্রি করা হয়েছে। তবে এর মধ্যে সবগুলোই সরকারি বই। স্থানীয় বাজারের এক ব্যবসায়ীর কাছে বিদ্যালয়ের লোহার বেঞ্চ ও বই বিক্রি করা হয়েছে বলে বিদ্যালয় সূত্র জানিয়েছে।
বিদ্যালয়ের ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর বাবা মাহবুবুর রহমান উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর মাহবুবা খাতুন পান্নার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাহবুব মুঠোফোনে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, কাঁঠালবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাহাবুবা খাতুনের অনৈতিক কর্যকলাপ নিয়ে আমরা অভিভাবক থেকে শুরু করে শিক্ষর্থীরা খুবই বিপদে আছি। তার ক্ষমতার জোরে কোমলমতি শিশুরা কিছু বলতে পারছে না। আমার নিষ্পাপ ছোট মেয়েকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেছে এবং ‘তোর জন্মর ঠিক নাই’, এমন কথা বলেছে। মাহাবুবা ম্যাডাম স্কুলের বেঞ্চ, টেবিল, রেক, বইখাতা বিক্র করার সময় আমার মেয়ে দেখে ফেলে। এর সাক্ষী দেয় আমার মেয়ে। এটাই তার অপরাধ। আমার মেয়েকে স্কুল থেকে লাল টিসি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেয়।
আরও পড়ুন: যে ফুল ফুটিবার আগেই ঝরে গেল
তিনি আরও বলেন, আমি আর সহ্য করতে না পেরে পুঠিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ করি। আশাকরি তিনি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেবেন।
মাহাবুবা খাতুন পান্নার বিরুদ্ধে অসদাচরণ ও অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ এনে রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগপত্র দিয়েছেন ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সামছুন নাহার। অভিযোগপত্রটি এই প্রতিবেদকের হাতে আছে।
সামছুন নাহার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমি কাঁঠালবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে ন্যায় ও নিষ্ঠার সহিত দায়িত্ব পালন করে আসছি। আমাদের স্কুলের প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা সার অবসরে যাওয়ার পর মাহাবুবা খাতুন পান্না ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পান। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে তিনি আগের জের ধরে কারণে-অকারণে আমাকে সামাজিক ও মানসিকভাবে, কখনো ছাত্র দ্বারা আবার কখনো অভিভাবক দ্বারা নির্যাতন করছেন।’
মাহবুবার দম্ভ ও হুমকির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মাহবুবা ম্যাডাম সব সময় বলেন, “আমার বাসা স্কুল-সংলগ্ন, আমি দীর্ঘদিন ধরে এই স্কুলেই চাকরি করছি, আমি পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস শিক্ষক, আমার ওপরে ছাত্র-ছত্রীর পাস-ফেল নির্ভর করে। আমার স্বামীও একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক। তাই আমি যা বলি তা-ই করি। কেউ আমার কিছু করতে পারবে না।”’
আরও পড়ুন: ‘বাবা তুমি শান্তিতে ঘুমাও, আবার আমাদের দেখা হবে’—নিহত বুয়েট শিক্ষার্থীর মা
এই সহকারী শিক্ষক বলেন, ‘মাহবুবা খাতুন পান্না দায়িত্ব পাওয়ার পরই আমার বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে মিথ্যাচার শুরু করেন ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবক দিয়ে। অভিভাবকদের ডেকে আমাকে মিথ্যা চুরির অপবাদ দেন। তিনি শিক্ষার্থীদের আমার বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিয়ে পরে প্রমাণ করতে পারেননি। এর কারণ একটাই, তার অন্যায় কার্যকলাপকে আমাকে সমর্থন দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত নতুন বই ছিল, সেগুলোও তিনি বিক্রি করে দেন। তাই আমি বলেছি যে ছাত্র-ছত্রীরা অনেক সময় বই হারিয়ে ফেলে। বইগুলো বিক্রি করবেন না। বিদ্যালয়ের অনেক প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র বিক্রি করে দিয়েছেন। অথচ এগুলো মেরামতযোগ্য। আমি কেন নিষেধ করি, এটাই আমার অপরাধ। আমি এর প্রতীকার চাই।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাহবুবা খাতুন পান্না দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমি কোনো বই কিংবা বেঞ্চ বিক্রি করিনি এবং কোনো শিক্ষার্থীকে হুমকি দিইনি। এসব অভিযোগটি সঠিক নয়।’
এ ব্যাপারে পুঠিয়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও কাঁঠালবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি খলেসুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। তবে প্রধান শিক্ষক বিক্রির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। বেঞ্চ ও বই বিক্রির বিষয়টি যাচাই-বাছাই চলছে। যদি সত্যতা পাওয়া যায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’