প্রতিশোধ না নিয়ে হামলাকারীর প্রতি উদারতা দেখালেন ইশরাক হোসেন
বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সিনিয়র সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন আবারও প্রমাণ করলেন, রাজনীতি শুধু প্রতিশোধের পথ নয় বরং উদারতা এবং মানবিকতার উদাহরণও হতে পারে। নিজের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামিকে ক্ষমা করে দিয়ে এবং তাকে ছাড়িয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করে তিনি মহানুভবতার অনন্য নজির স্থাপন করেছেন।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানীর কোতোয়ালী থানায় এমনই একটি মানবিক ঘটনার সাক্ষী হয় দেশ। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাইনুদ্দীন, যিনি ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ইশরাক হোসেনের ওপর হামলার ঘটনায় এজাহারভুক্ত আসামি, তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা সনাক্ত করে থানায় সোপর্দ করেন।
নিজের ওপর হামলার প্রতিশোধ না নিয়ে উল্টো হামলাকারীকে ক্ষমা করে দিয়ে উদারতা ও মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন বিএনপির এই নেতা। এছাড়াও নিজের করা মামলার এজহারভুক্ত আসামী হলেও আটকের পর শিক্ষার্থীদের অনুরোধে তাকে ছেড়ে দেয়ারও ব্যবস্থা করেন তিনি। ইশরাক হোসেনের এমন মহানুভবতায় আপ্লুত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, ২০২২ সালের ডিসেম্বর ৪ তারিখে ঢাকা বিভাগীয় মহাসমাবেশকে ঘিরে রাজধানীর পুরান ঢাকায় জনসংযোগ চালানো অবস্থায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ছাত্রলীগের ব্যাপক হামলার শিকার হন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। সেই হামলার ঘটানায় তখন থানায় কোন মামলা না নিলেও পরবর্তীতে আদালতে মামলা করেন তিনি। সেই মামলার এজহারভুক্ত আসামী হিসেবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাইনুদ্দীনকে সনাক্ত করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরে তাকে রাত আনুমানিক ১০ টার দিকে ধরে নিয়ে রাজধানীর কোতোওয়ালী থানায় সোপর্দ করেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল নেতারা।
আটকের খবরে মাইনুদ্দীনের আইন বিভাগের বন্ধুরা বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের সাথে দেখা করতে তার বাসায় যায়। তবে, ইশরাক হোসেন বাসায় না থাকায় তার সাথে দেখা করতে পারেনি শিক্ষার্থীরা। পরে রাতেই কোতোওয়ালী থানার সামনে জড়ো হন তারা। সেখান থেকেই ইশরাক হোসেনের সাথে ভিডিও কলে কথা বলেন শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা ইশরাক হোসেনের কাছে তাদের বন্ধুকে মাফ করে দিয়ে থানা থেকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করার জন্য দাবি জানান। ২০২২ সালের ইশরাক হোসেনের ওপর হামলার ঘটনায় ভুল করেছে উল্লেখ তার কাছে ক্ষমাও চান অভিযুক্ত মাইনুদ্দীনসহ তার বন্ধুরা। একই সাথে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তাদের জোরালো ভুমিকার কথাও উল্লেখ করেন তারা। এসময়, ইশরাক হোসেন তাদের দাবি মেনে নিয়ে অভিযুক্ত মাইনুদ্দীনকে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানান। পরে রাত আনুিমানিক পৌনে তিনটায় তাকে থানা থেকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে ইশরাক হোসেন বলেন, নবীজীইতো তার ওপর অত্যাচার-নির্যাতনকারীদের মাফ করে দিয়েছেন। আর আমরাতো অতি নগন্য মানুষ। একইসাথে তিনি বলেন, ২০২২ সালে আমার ওপর যে ন্যাক্কারজনক হামলা করেছিল ছাত্রলীগ। সেখানে আমার গাড়ি ভাংচুর করেছিল তারা। আমিসহ মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিল আমার সাথে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী। সেসময়কার ঘটনার জন্য ওরা দু:খ প্রকাশ করেছে। ঘটনায় ভুল করে এবং অনেকটা বাধ্য হয়েই অংশ নিয়েছিলেন জানিয়ে এজন্য ক্ষমাও চান অভিযুক্ত ওই ছেলেটি। ছাত্র আন্দোলনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে তার ভুমিকার কথা বিবেচনা করেছি। তবে, ছাত্রলীগ নিয়ে তার অবস্থান কঠোর বলেও জানান ইশরাক হোসেন।
এ বিষয়ে কোতওয়ালী থানার ওসি তদন্ত নাসির উদ্দির জানান, ২০২২ সালের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় মামলার আসামী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ৪র্থ বর্ষের মাইনুদ্দীনকে কিছু শিক্ষার্থী ধরে থানায় সোপর্দ করেন। পরে রাত আনুমানিক ১২টায় তার বন্ধু এবং সহপাঠিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় দেড়-দুইশো শিক্ষার্থী থানায় আসেন। পরে তারা মামলার ভুক্তভোগী ও বাদী বিএনপি ইশরাক হোসেনের সাথে যোগাযোগ করেন আসামীর সহপাঠিরা। থানাতেই তার সাথে ভিডিও কলে কথা বলেন তারা। এসময় শিক্ষার্থীদের অনুরোধে ইশরাক হোসেন আসামীর বিরুদ্ধে তার অভিযোগ তুলে নেন। একই সাথে তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধও জানান। আমরা বাদীর অনুরোধে আসামীকে ছেড়ে দিয়েছি রাতেই।
এমন উদারতায় ব্যাপক প্রশংসার জোয়ারে ভাসছেন বিএনপির তরুণ এই নেতা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে অনেক বড় মনের পরিচয় দিয়েছেন ইশরাক হোসেন। অনেকেই বলছেন, তারা বাবা অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়ের প্রয়াত সাদেক হোসেনে খোকা যেমন উদার রাজনীতিবীদ ছিলেন, তার ছেলে হিসেবে তিনিও (ইশরাক হোসেন) বাবার মতোই বড় মনের এবং উদার রাজনীতিবীদ।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় মহাসমাবেশকে ঘিরে বিএনোপির আল্টিমেটাম ও ফ্যাসিস্ট সরকারের দমন-পীড়নের চরম অবস্থা। শুরু হয় ব্যাপক ধরপাকর। এরই মধ্যে সমাবেশ সফল করতে পুরান ঢাকা এলাকায় জনসংযোগ ও বিভিন্ন থানায় গিয়ে আটক নেতাকর্মীদের ছেড়ে দেওয়ার আহ্বানমুলক প্রচারণা চালায় ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক। এরই ধারাবাহিকতায় ডিসেম্বরের ৪ তারিখে রাজধানীর কোতোওয়ালী থানা এলাকায় জনসংযোগ চালিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আসলে ইশরাক হোসেনের গাড়ি বহরে ভয়াবহ হামলা চালায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। এসময় হামলাকারীরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ইশরাক হোসেনের গাড়ি ভেঙ্গে তছনছ করে ফেলে। এতে ইশরাক হোসেনসহ আহত হয়েছিলেন বিএনপি ও বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের অন্তত ৩০ জনে নেতাকর্মী।