কলেজ অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে
সভাপতি মনোনীত করাকে কেন্দ্র করে পাবনার সুজানগরে নিজাম উদ্দিন আজগর আলী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেনকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। আজ রবিবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে স্থানীয় বিএনপির একদল নেতাকর্মী কলেজের অধ্যক্ষের কক্ষে ঢুকে তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসময় কলেজের অন্য শিক্ষকেরা বাঁধা দিতে গেলে তাদের উপরও চড়াও হয় নেতাকর্মীরা। প্রায় এক ঘণ্টা পর পুলিশ গিয়ে অধ্যক্ষকে উদ্ধার করে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলেজের একাধিক শিক্ষক জানান, সুজানগর উপজেলার নিজাম উদ্দিন আজগর আলী ডিগ্রি কলেজের সভাপতি মনোনীত করাকে কেন্দ্র করে বেশ কিছুদিন ধরে স্থানীয় বিএনপির একাধিক গ্রুপের মধ্যে বিরোধ চলছে। পাবনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য একেএম সেলিম রেজা হাবিব, কৃষক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন ও সুজানগর উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুল হালিম সাজ্জাদকে সভাপতি হিসেবে নাম নির্বাচিত করার জন্য তাদের সমর্থকরা কলেজ অধ্যক্ষকে চাপ দিয়ে আসছিলেন।
এমন অবস্থায় কলেজের প্রতিষ্ঠাতা এবং পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি মরহুম নিজাম উদ্দিন প্রামাণিকের ছেলে ব্যবসায়ী শহিদুর রহমানের নাম সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করে এক সপ্তাহ আগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠায় কলেজ কর্তৃপক্ষ। সভাপতি হিসেবে শহিদুর রহমানকে মেনে নেন বিএনপি নেতা কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন ও আব্দুল হালিম সাজ্জাদের সমর্থকরা।
তবে এ কে এম সেলিম রেজা হাবিব সমর্থকরা এ বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি। রোববার দুপুরে সেলিম রেজা হাবিব পক্ষের অনুসারী সুজানগর উপজেলা যুবদলের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান পিন্টু, সদস্য সচিব রিয়াজ মণ্ডলের নেতৃত্বে একদল নেতাকর্মী অধ্যক্ষের কক্ষে ঢুকে শহিদুর রহমানের নাম বাদ দিয়ে নতুন করে এ কে এম সেলিম রেজা হাবিবের নাম পাঠানোর জন্য চাপ দেয় অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেনকে। এতে অধ্যক্ষ রাজি না হওয়ায় তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে ও তার কক্ষ ভাঙচুর চালায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেনকে উদ্ধার করে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সুজানগর উপজেলা যুবদলের সভাপতি রিয়াজ মন্ডল বলেন, ‘আসলে সুজানগরের সর্বস্তরের লোকজনের চাওয়া ওই কলেজের সভাপতি সেলিম রেজা হাবিব হবেন। কিন্তু উনাকে না দিয়ে অধ্যক্ষের ইচ্ছেমতো লোকের নাম প্রস্তাব করে পাঠিয়েছেন। বিএনপির সেলিম রেজা হাবিব গ্রুপ, মোল্লা তুহিন গ্রুপ, সাজ্জাদ গ্রুপ ও জামায়াত ইসলামি গ্রুপ সবাই নিজেদের লোককে সভাপতি হিসেবে চেয়েছিল। এটা নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল। তবে সব গ্রুপের দ্বন্দ্ব নিরসন করে একজনের নাম প্রস্তাব পাঠানোর কথা থাকলেও অধ্যক্ষ সেটা করেননি। সেটা নিয়ে আজকে একটু বিতর্ক হয়েছিল, তাছাড়া কিছু নয়।’
এ বিষয়ে সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য এ কে এম সেলিম রেজা হাবিব বলেন, ‘আমি এ বিষয় কিছু জানি না। আমাকে কেউ কিছু বলেনি। আমি কেন ওই কলেজের সভাপতি হতে যাবো। আমার নিজেরই কলেজ আছে। দেশ এখন স্বাধীন হয়েছে। লোকের অভাব নেই। কে কার লোক বলা মুশকিল।’
যারা অধ্যক্ষকে মারধর করেছে তারা আপনার লোক কিনা-এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আসলে তারা তো যুবদল করে এখানে আমার অস্বীকার করার কিছু নেই। বর্তমান জামায়াত, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র, ইসলামি আন্দোলন ও বিএনপির কয়েকটি গ্রুপই কলেজের সভাপতি হওয়ার দাবি করছে। তবে আমরাই এখন অসহায় বলে দাবি করেন তিনি।’
সুজানগর নিজাম উদ্দিন আজগর আলী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন বলেন, ‘সভাপতির নাম নিয়ে প্রায় দুই মাস ধরে তিন বিএনপি নেতার মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। অন্যদিকে দ্রুত সভাপতির নাম পাঠানোর জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও চাপ ছিল। যে কারণে বর্তমান সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পরামর্শে কলেজের প্রতিষ্ঠাতা নিজাম উদ্দিন প্রামাণিকের ছেলে শহিদুর রহমানের নাম প্রস্তাব করে পাঠানো হয়েছে। এ কারণে একটি পক্ষ ক্ষিপ্ত হয়ে কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতর আমার কক্ষে ঢুকে আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে।’
সুজানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা জানান, ‘খবর পেয়ে আমরা কলেজে গিয়ে অধ্যক্ষকে উদ্ধার করি। অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ রাখার বিষয়টি এড়িয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে অধ্যক্ষ সাহেবই ভালো বলতে পারবেন। তবে এ ব্যাপারে কেউ থানায় কোন লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’