‘ঋণ করে চোখের চিকিৎসা করাচ্ছি, আমি আগের মতো দেখতে চাই’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেন নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার মো. তোফাজ্জল (২৫)। আন্দোলনের এক পর্যায়ে পুলিশের গুলি লাগে তার বাঁ চোখে। প্রাথমিক চিকিৎসার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু অভাবের সংসারে চিকিৎসা খরচ জোগানো মেটাতে পারছে না পরিবার। এতে দৃষ্টি হারাতে বসেছেন তিনি।
তোফাজ্জল কেন্দুয়া উপজেলার বলাইশিমুল ইউনিয়নের বলাইশিমুল গ্রামের মৃত লাল মিয়ার ছেলে। বিনা চিকিৎসায় সন্তানের চিকিৎসা নিয়ে পরিবার এক শঙ্কার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
জানা যায়, তোফাজ্জল চট্টগ্রামে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে গত ৫ আগস্ট দুপুরের দিকে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ইপিজেড সংলগ্ন এলাকায় আন্দোলনে অংশ নেন তিনি। একপর্যায়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেট এসে লাগে তোফাজ্জলের শরীরে। গুলিবিদ্ধ তোফাজ্জল বাঁ চোখে আক্রান্ত হন।
পরে অন্যদের সহায়তায় তাকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর ঢাকা ইস্পাহানি চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নেন। তবে এখানকার চিকিৎসকরা তাকে জানান, উন্নত চিকিৎসার জন্য রেটিনা অপারেশন করতে হবে।
তোফাজ্জলের বড় ভাই মোজাম্মেল হক জানান, তিনি ঢাকায় কাজ করে সংসার চালান। আমরা তিন ভাই। তোফাজ্জল সবার ছোট। আমার বাবা নেই। চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়ে পুলিশের গুলিতে বাঁ চোখে গুলিবিদ্ধ হয় তোফাজ্জল। ঋণ করে এ পর্যন্ত প্রায় লাখ টাকা চিকিৎসার জন্য ব্যয় করেছি। এ মুহূর্তে আর্থিক সহযোগিতা হলে আমার ভাইয়ের চিকিৎসা করাতে পারতাম। আমি সকারের কাছে অনুরোধ করছি।
মনে দুঃখ ও কষ্ট নিয়ে মো. তোফাজ্জল বলেন, আন্দোলনের সময় কর্ণফুলী ইপিজেড সংলগ্ন স্থানে পৌঁছালে পুলিশের রাবার বুলেট আমার বাঁ চোখে এসে লাগে। পরে স্থানীয়রা আমাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর ডাক্তার ঢাকা ইস্পাহানি চক্ষু হাসপাতালে রেফার্ড করেন। এখন পর্যন্ত দুবার বাঁ চোখ অপারেশন করা হয়েছে। আগামী ৭ ডিসেম্বর আরেকটি অপারেশন করতে হবে। ডাক্তার বলছেন আরও কয়েকটি অপারেশন লাগবে। কিন্তু ভালো হবে কি না সঠিক বলতে পারছেন না।
তিনি আরও বলেন, টাকা ঋণ করে চোখের চিকিৎসা করাচ্ছি। উন্নত চিকিৎসার অভাবে আমার চোখটি এখন নষ্ট হওয়ার পথে। আমি এখন সবার সহযোগিতা চাচ্ছি। আমি আগের মতো দেখতে চাই।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দুয়া উপজেলা সমন্বয়ক দিলশাদ প্লাবন বলেন, আমরা আহতদের চিকিৎসার খোঁজখবর নিচ্ছি। অসুস্থদের যাতে সঠিক চিকিৎসা হয়, সেই ব্যবস্থা আমরা করছি। যেহেতু আমরা ছাত্র, আমাদের কোনো ফান্ড নেই। তবু আমরা হাসপাতালে তাদের সুচিকিৎসার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে কাজ করছি এবং সকলের সহযোগিতা চাচ্ছি।
কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমদাদুল হক তালুকদার বলেন, শুনেছি ৫ আগস্ট কর্ণফুলী ইপিজেড সংলগ্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে তোফাজ্জল বাঁ চোখে গুলিবিদ্ধ হন। বর্তমানে তার পরিবার খুবই কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। তোফাজ্জল ছাড়াও উপজেলায় আরও অনেক লোক আহত হয়েছেন। আমরা তাদের তালিকা তৈরি করে কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। আহতরা যাতে সহযোগিতা পান তার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।